আজ ৩১ অক্টোবর। হ্যালোইন উৎসবের দিন। মৃত আত্মাদের স্মরণে দিনটি পালন করা হলেও এখন ভয়ংকর সব পোশাকে বা ভূতের মতো সাজাটা এই উৎসবের মূল অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। আর এই দিনে আমরা পরিচিত হবে বিশ্বের ভুতুড়ে পাঁচটি জায়গার সঙ্গে।
ইন্দোনেশিয়ার লাওয়াং সেও। ছবি: উইকিপিডিয়া
লাওয়াং সেও, ইন্দোনেশিয়া
১৯১৯ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানির সদর দপ্তর ছিল হাজারের বেশি দরজার এই বিশাল অট্টালিকাটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি বাহিনী এর দখল নিয়ে নেয়। এটিকে একটি বন্দিশিবিরে রূপান্তরিত করে তারা। তখন এর চার দেয়ালের মধ্যে বন্দীদের ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয় অনেককে। আর এসব ঘটনা একে ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম ভুতুড়ে জায়গায় পরিণত করতে ভূমিকা রেখেছে।
এর বেজম্যান্ট বা পাতাল ঘরের নানা ভুতুড়ে কাণ্ডের জন্য আলাদা দুর্নাম আছে। বিশেষ করে একটি পরিত্যক্ত ভবনের বেজম্যান্টে একাকী যেতে মানা করা হয়। গেলে আপনার কপালে কী আছে তা বলা মুশকিল। পর্যটকেরা পরিত্যক্ত অট্টালিকাটিতে বিনা মূল্যে ঘুরে দেখতে পারেন। কাজেই চাইলে নিজেই যাচাই করে দেখতে পারেন লাওয়াং সেওয়ের ভূতের গল্পের সত্যতা আছে কি না!
পোভিগ্লিয়া, ইতালি
ইউরোপের সবচেয়ে রোমান্টিক শহরগুলোর তালিকা করলে ভেনিসের নাম থাকবে একেবারে ওপরের দিকে। একই সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে ভুতুড়ে জায়গাগুলোর একটিও পাবেন এখানেই। ভেনিসের পোভিগ্লিয়া নামের ওই দ্বীপটি এখন পরিত্যক্ত। এক শতকেরও বেশি সময় ধরে এটি ছিল একটি কোয়ারেন্টিন স্টেশন। প্লেগে আক্রান্ত রোগীদের রেখে আসা হতো দ্বীপটিতে। তারপর এটিকে একটি মানসিক হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়, যা ১৯৬৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়।
হাসপাতালটির ভয়ংকর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কুখ্যাতি ছিল। শেষ পর্যন্ত যখন একজন চিকিৎসক প্রতিষ্ঠানের বেল টাওয়ার থেকে নিজেকে ছুড়ে ফেলেন তখন এটি বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়রা এখনো দ্বীপ থেকে একটা ঘণ্টার আওয়াজ শোনার দাবি করেন। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো ওই দ্বীপে আর এখন ঘণ্টাই নেই, কয়েক দশক আগে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দ্বীপটিতে যাওয়াও এখন বেআইনি। তবে আপনি দ্বীপটি এবং ভাঙাচোরা হাসপাতালটি দেখতে পাবেন লিদোর সৈকত থেকে কিংবা বোট ভাড়া করে কিছুটা দূর থেকে। তবে সাবধান! ভুলেও দুঃসাহসী হয়ে ওঠে দ্বীপে প্রবেশ করবেন না যেন!
দিল্লি থেকে ১০০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে ভানগড় দুর্গের ধ্বংসাবশেষের অবস্থান। ছবি: উইকিপিডিয়া
ভানগড় দুর্গ, ভারত
দিল্লি থেকে ১০০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে ভানগড় দুর্গের ধ্বংসাবশেষের অবস্থান। এটি পড়ছে রাজস্থানে। মরুর বুকে একটি মরূদ্যানের মতো জায়গাটি। তবে এখানে খুব একটা মানুষের বসবাস নেই।
দিনের বেলা কিছু মানুষের আনাগোলা থাকলেও রাতের বেলা একেবারে নির্জন হয়ে যায়। বলা হয় রাতে ভুতুড়ে সব কাণ্ড-কীর্তি হয় দুর্গ ঘিরে। কেউ আবার বলেন এক সন্ন্যাসীর অভিশাপে জায়গাটিতে নানা অশুভ ঘটনা ঘটে। মোটের ওপর ষোলো শতকের এই দুর্গটি ঘিরে নানা কিংবদন্তি ও জনশ্রুতি ডালপালা মেলেছে। যা রটে তার কিছুটাও যদি ঘটে, তবে এই দুর্গের কাছে রাতে যাওয়ার আগে সাতবার ভাববেন যে কেউ। এখানে রাতে যাওয়া অবশ্য বেআইনিও।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাসল অব গুড হোপ। ছবি: উইকিপিডিয়া
ক্যাসল অব গুড হোপ, দক্ষিণ আফ্রিকা
নাম দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। জায়গাটির বরং মন্দ ঘটনার জন্য নাম আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের দ্য ক্যাসল অব গুড হোপ রীতিমতো ভয়ংকর এক জায়গা। আগাগোড়া অভিশপ্ত এক দুর্গ। ছোট করে বললে, আঠারো শতকের গভর্নর পিয়েতের ভ্যান নুদত তাঁর বাহিনী থেকে পলানোয় সাতজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। বলা হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় অভিশাপ দিয়ে যান তাঁরা। তারপর থেকেই দুর্গটি ঘিরে নানা ধরনের অস্বাভাবিক কাণ্ডের কথা শোনা যায়। বিশেষ করে অদৃশ্য মানুষদের কণ্ঠ এবং পদশব্দের মুখোমুখি হতে হয়ে যেতে পারেন দুর্গের সীমানার ভেতরের যেকোনো জায়গায়। আবার অন্য একটি সূত্রের দাবি ওই অভিশাপে মৃত্যু হয় গভর্নরের। তাঁর ভূতকেও ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় ক্যাসল অব গুড হোপে।
ফ্লোরিডার সেন্ট অগাস্টিন বাতিঘর। ছবি: উইকিপিডিয়া
সেন্ট অগাস্টিন বাতিঘর, ফ্লোরিডা
সেন্ট অগাস্টিন লাইটহাউস বা বাতিঘরে বছরের দুই লাখের বেশি মানুষ যান ঘুরতে। তবে এটি বেশি পরিচিতি পেয়েছে তার অপার্থিব অতিথিদের জন্য। বাতিঘরের টাওয়ার থেকে পড়ে মারা গিয়েছিলেন এর এক রক্ষক। তাঁর ভূতকে মাঝেমধ্যেই শূন্যে ভেসে থাকা অবস্থায় দেখা যায়। বাতিঘরে তিনটি অল্পবয়সী মেয়ের অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়েছিল। বলা হয়, তারা ছিল এক বাতিঘর রক্ষকের মেয়ে। একটি ঘোড়ার গাড়িতে খেলছিল তারা। হঠাৎ গাড়িটি ভেঙে সাগরে পড়ে যায়। এতেই জলে ভেসে তাদের মৃত্যু হয়। বাতিঘরে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা শিশুদের খেলার শব্দ শুনেছেন বলে দাবি করেছেন। যদিও কাউকে দেখতে পাননি তাঁরা।
সূত্র: টাইম আউট ডট কম, কনদে নস্ত ট্রাভেলার