1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন

ঋতু বৈচিত্র্যের আদর্শ রুপ দেখা মেলে প্রিয় বাংলাদেশে

  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

বৈচিত্র্যময় দেশ আমদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বাংলায় বহুকাল ধরে এর ঋতু বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। এখানে মূলত ছয় ঋতু : গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। এক বছরে  ছয়টি ঋতুর দেখা বিশ্বের আর কোনো দেশে দেখা যায় না। কিন্তু দিনদিনই এই আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে। আর আমরা মূলত কৃষিপ্রধান দেশ।

বাংলাদেশে আবহাওয়া বদলের ফলে বর্তমানে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। বর্তমানে মূলত গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত এই তিন ঋতুই বেশি পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তন হয়ে থাকে জলবায়ুর প্রভাব এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে । এদেশের উত্তরে রয়েছে সু-বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা এবং এর দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে বঙ্গোপসাগর।

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির কারণে এই দেশের মাটি হয়েছে উর্বর। বর্ষায় নদীর স্রোত বয়ে আনে প্রচুর পরিমানে পলিমাটি । পলিমাটির কল্যানে জেগে ওঠে সবুজ বন-বনানী এবং শ্যামল প্রকৃতি। অপার সৌন্দর্যে এ দেশের প্রকৃতি হয়ে ওঠে অপরূপ। ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী বছরের বারো মাসের প্রতি দুই মাসে এক এক করে ঋতু, তাই মোট ছয় ঋতু। যথা : বৈশাখ–জৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল, ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল, কার্তিক অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল, পৌষ–মাঘ শীতকাল এবং ফাল্গুন–চৈত্র বসন্তকাল ।

গ্রীষ্ম :

ছয় ঋতুর মধ্যে প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল । গ্রীষ্মে বাংলাদেশের রূপ হয়ে ওঠে রুক্ষ, শুষ্ক ও প্রচন্ড ভ্যাপসা গরম। প্রচন্ড তাপে মাঠ-ঘাট চৌচির হয়ে যায়। নদী-নালা, খাল–বিলের পানি শুকিয়ে যায়। কখনও বাতাসে মনে হয় আগুনের ছোয়ায় জ্বলে যাচ্ছে। কখনও কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যায়। হঠাৎ চলে আসে তুমুল কাল বৈশাখী ঝড়। এই সময় আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু ইত্যাদি মৌসুমি ফল পাওয়া যায়।

বর্ষা :

গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহের পর আসে বৃষ্টিস্নাত বর্ষাকাল। এই সময় আকাশে দেখা যায় কালো মেঘ। অঝোর ধারায় সারাদিন নামে বৃষ্টি। পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন নতুন করে জেগে ওঠে। আষাঢ়- শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। তুমুল বর্ষণে জেগে ওঠে চারিদিকের সবকিছু । বৃষ্টিতে খাল-বিল,পুকুর-নদী সব কানায় কানায় পানিতে ভরে ওঠে।

বর্ষায় গ্রামীণ প্রকৃতি অপরূপ লাবণ্যে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। এসময় বাংলাদেশের বেশ কিছু নিচু এলাকা পানিতে ডুবে যায়। তখন নদীতে দেখা দেয় ভাঙন। বিভিন্ন অঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে দেখা দেয় বন্যা। এমনকি শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা যায়। বর্ষায় গরীব মানুষের দু:খ-কষ্ট অনেক বেড়ে যায়, কারণ তখন কাজের জন্য মানুষ বের হতে পারে না। এতে করে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়।

শরৎ :

শরৎকালে কাশফুলে বিভিন্ন জায়গা ছেয়ে যায়। বাংলাদেশের এক ঝলমলে ঋতু বলা হয় শরৎকালকে। এসময় আকাশ হয়ে ওঠে নির্মল। শরতের আকাশ থাকে নীল মেঘে পরিপূর্ণ। এসময় তুলার মত সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায় আকাশে। এছাড়া শিউলি ফুল ফোটে আর সাদা কাশফুল দেখতে পাওয়া যায়। আকাশে শরতে আলোকিত জ্যোৎস্না হয়ে ওঠে অপরুপ আলোড়ন।

হেমন্ত :

হেমন্ত বাংলাদেশের ফসলে সমৃদ্ধ একটি ঋতু। তখন সোনার ফসলে সারা মাঠ ভরে থাকে আর দেখা যায় কৃষকের মুখের সোনার হাসি। কৃষকরা ধান কাটাতে এই সময় ব্যস্ত থাকেন। ব্যস্ত কৃষকরা নতুন ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে। তখন বাংলাদেশে শুরু হয় নবান্নের উৎসব। পাকা ধানের সোনালি দৃশ্যে মন ভরে ওঠে আনন্দে, যা সত্যি মনোমুগ্ধকর । সন্ধ্যা ও সকালে চারদিকে ঘন হয়ে কুয়াশা নেমে আসে। এই সময় থেকে শীতের আমেজ পাওয়া শুরু হয়ে যায়।

শীত :

শীত আসে কুয়াশা জড়ানো হাজারো বার্তা নিয়ে। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে শীতে সব যেন নিস্তেজ হয়ে পরে। তখন গাছের পাতা ঝরে  যায়। সকাল হলেও অনেক সময় সূর্যের মুখ দেখা যায় না বললেই চলে। শীতে জড়সড় হয়ে যায় মানুষজন, আগুন জ্বালিয়ে তাপ পোহায়। প্রচন্ড ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাই গরম কাপড় পরে। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপ থাকে সবচেয়ে বেশি এবং মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না সেখানে। শীতে বেশি কষ্ট পায় শীতবস্ত্রহীন মানুষজন। শীতকালের নানা রকম শাকসবজি খেতে পাওয়া যায়। গ্রামবাংলায় এই সময় সু-স্বাদু খেজুর রস ও পিঠা–পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়।

বসন্ত :

বসন্তকে বলা হয় বাংলার ঋতুরাজ। শীতের রুক্ষতা মুছে দিয়ে বাংলায় আসে ঋতুরাজ বসন্ত, যা আসে নানান বর্ণিল ফুলেল সৌরভ নিয়ে। এসময় এক নতুন সাজে সজ্জিত হয় প্রকৃতি। নতুন পাতায় ছেয়ে যায় গাছ-গাছালি। এছাড়া আমের মুকুল দেখতে পাওয়া যায়। সমধুর মৌমাছির গুঞ্জন শুনতে পাওয়া যায়। দখিণা বাতাসে মন জুড়িয়ে যায়। ষড়ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন রূপ বাংলাদেশকে করেছে আরও সুন্দর ও রুপরহস্যে পরিপূর্ণ। প্রকৃতির এমন বৈচিত্র পৃথিবীর আর কোথাও নেই। তাই আমদের উচিত প্রকৃতির যত্ন নেয়া যেন এর তাৎপর্য ধরে রাখা যায়। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com