1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৬ অপরাহ্ন

সুন্দরবনের রাস মেলা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪

হালকা কুয়াশা, শীত শীত ভাব। এমন এক পরিবেশে সুন্দরবেন অনুষ্ঠিত হবে রাসমেলা। বঙ্গোপসাগরের বুকে কুঙ্গা এবং মরা পশুর নদীর মোহনায় জেগে ওঠা দুবলার চরে প্রায় দুইশ’ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে রাস মেলা।

দুবলার চরের এবারের রাসমেলা ১১ থেকে ১৩ নভেম্বর। বিভিন্ন রকম হস্ত শিল্প সামগ্রীর সমাগমও ঘটে এ মেলায়। হিন্দুদের নানান পূজা-অর্চনার ফাঁকে সন্ধ্যায় ওড়ানো হয় ফানুস। মেলার মূল প্রার্থনা হয় ভোরে প্রথম জোয়ারে পুণ্য স্নানের মধ্য দিয়ে। এদিন সূর্য ওঠার আগেই দুবলার চরের আলোরকোল সমুদ্র সৈকতে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসেন পুণ্যার্থীরা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রেও জোয়ার শুরু হয়। জোয়ারের পানি পুণ্যার্থীদের ছুঁলেই স্নানে নামেন তারা।

রাস মেলায় গ্রামীণ অনেক খাবার, মিষ্টি, সন্দেশ, শুটকি, পুতুল নাচ, যাত্রাপালাসহ অনেক ঐতিহ্যবাহী জিনিসের সন্ধান মেলে। রাসমেলা উপভোগের সঙ্গে বেড়িয়ে আসতে পারেন সুন্দরবনের অসামান্য সুন্দর কয়েকটি জায়গা থেকে। এরমধ্যে অন্যতম- কটকা সমুদ্র সৈকত, জামতলা সৈকত, ডিমের চর ও করমজল। সমুদ্রকোলে পাঁচ মাইল প্রশস্ত বালুকাবেলায় পদব্রজে ভ্রমণ করে ক্যামেরায়বন্দী করতে পারেন আশ্চর্যসুন্দর সব চিত্র।

সুন্দরবনে অনুষ্ঠিত এই মেলায় শুধু দেশি পর্যটকরাই নন, অসংখ্য বিদেশিও আসেন। তিন দিনব্যাপী এ মেলায় বিদেশি পর্যটকের সমাগম প্রতিবছর বাড়ছে। মেলায় যাওয়া-আসার পথে বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে।

রাস মেলার কতকথা

রাস মেলা নিয়ে কথিত আছে অনেক গল্প। রাসমেলার ইতিহাস নিয়ে আছে বিভিন্ন মত। একটি গল্প এমন যে, ১৯২৩ সালে ঠাকুর হরিচাঁদ নামক এক হিন্দু সাধুর শিষ্য হরি ভজন সাধু শুরু করেছিলেন এই মেলা। এই সাধু নাকি ২৪ বছর ধরে শুধু সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে পড়ে থাকা গাছের ফলমূল খেয়ে জীবনযাপন করেছেন। এই সাধুর রহস্যময় জীবনকে স্মরণ করতেই নাকি ভক্তরা এই রাস মেলা পালন করে।

অনেকে আবার বিশ্বাস করেন শ্রীকৃষ্ণ শত বছর আগের কোনো এক পূর্ণিমা রাতে পাপমোচন ও পুণ্যলাভের উদ্দেশ্যে স্বপ্নে গঙ্গাস্নান করেন। সেই থেকে শুরু হয় রাসমেলা। কারো কারো মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এ উপলক্ষেই দুবলার চরে রাসমেলা হয়ে থাকে। তবে এই মেলায় বিশেষ প্রার্থনায় থাকে মূলত সুন্দরবনের গহীনে শত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেও বেঁচে থাকার আকুতি।

ভোর রাতে শুরু হয় রাস মেলা। সুন্দরবনের আলোরকোল সমুদ্র সৈকতে প্রদীপ জ্বালিয়ে পুণ্যার্থীরা প্রার্থনায় বসেন। সাগরকে সামনে রেখে তারা কৃষ্ণপূজার সঙ্গে দেবতা নীলকমল এবং গঙ্গাদেবীরও আরাধনা করে থাকেন। সূর্যোদয়ের পর জোয়ারের পানি পুণ্যার্থীদের পায়ে ছোঁয়া লাগা মাত্রই তারা নেমে পড়েন স্নানে। সঙ্গে আনা ফলমূল, ফুল, নারকেল ইত্যাদি পানিতে ভাসিয়ে দেন।

এরপর ঢাক-ঢোলক-কাসা-মন্দিরা বাজিয়ে ভজন-কীর্তন নিনাদিত করেন চারপাশ। পূজা-অর্চনার ফাঁকে সূর্যাস্তের পর সাগরকে সাক্ষী রেখে আকাশের বুকে উড়িয়ে দেয়া হয় ফানুস।সুন্দরবনে মাছ ধরার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় দুবলার এই রাস মেলার মধ্য দিয়ে। স্থানীয়দের কাছে এই মেলা পরিচিত নীল কমল নামে!

যেভাবে যাবেন

নিজস্ব উদ্যোগে সুন্দরবনের গহীনে ভ্রমণ কঠিন। তাই রাসমেলা ছাড়াও সুন্দরবনে ভ্রমণে যেতে সাহায্য নিতে হবে অভিজ্ঞ কোনো ভ্রমণ সংস্থার। এবারের রাস মেলা উপলক্ষে সুন্দরবনে বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা নিয়েছে প্রায় ৪০টি ট্যুরিস্ট কোম্পানি। খুলনা থেকে লঞ্চে সুন্দরবন যাতায়াতে সবার জন্য থাকছে এসি/ননএসি কেবিন ব্যবস্থা এবং একই মানের খাবার। দুবলার চরে রাসমেলা দেখা ছাড়াও এ প্যাকেজে থাকছে হিরণ পয়েন্ট, আলোরকোল, কটকা, জামতলা, টাইগার পয়েন্ট ও কচিখালী ভ্রমণের সুযোগ। এছাড়া থাকবে বনের ভেতর র্ট্যাকিং, বিচভলিবল, ফানুস ওড়ানো ও সাংস্কৃতিক আয়োজন।

ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে বিভিন্ন বাসে খুলনা, মোংলা বা সাতক্ষীরার শ্যামনগর এসে নৌপথে রাসমেলায় যেতে পারেন। খুলনায় ট্রেনে এবং যশোর পর্যন্ত বিমানেও আসা যাবে। পাশাপাশি নৌপথেও আসা যায়। তবে রাসমেলায় যাওয়ার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো খুলনার বিআইডব্লিউটিএ’র লঞ্চঘাট থেকে। কেননা এ লঞ্চঘাট থেকে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থা রাসমেলা উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করে থাকে।

ট্যুরিস্ট ভেসেল বা নৌযান ছাড়াও সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণ পয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com