1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন

নীল সাগরের দ্বীপ: মিয়োর্কায় কয়েক দিন

  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

রাত ১১টায় মিয়োর্কার পালমা এয়ারপোর্টে নামতেই ভূমধ্যসাগরের উষ্ণ আবহাওয়া আমাদের স্বাগত জানাল। সারি সারি পামট্রিতে সাজানো খুবই সুন্দর; কিন্তু ব্যস্ত এক এয়ারপোর্ট। আর ব্যস্ত হবে না কেন, প্রতিবছর দেড় কোটি পর্যটকের আনাগোনায় ব্যস্ত থাকে স্পেনের এই দ্বীপ। ইউরোপের বিভিন্ন শহর থেকে দুই ঘণ্টার ফ্লাইটে নীল সাগর আর শুভ্র বালির সৈকতের এই দ্বীপে আসার জন্য আছে বিভিন্ন বাজেট এয়ারলাইনসের অনেক সাশ্রয়ী অফার।

অক্টোবরে ইংল্যান্ডের স্কুলগুলোতে হাফ টার্মের ছুটি থাকে এক সপ্তাহ। সেই সুযোগে চার দিনের জন্য আমাদের এ মিয়োর্কা সফর। দুই মেয়েসহ আমাদের চারজনের সঙ্গে ইংল্যান্ডের লিডস শহর থেকে যোগ দেবেন আরও পাঁচ বন্ধু পরিবার। সব মিলিয়ে তাই ছয় পরিবারের ২২ জনের বিশাল বহর। লিডসে আমরা ছিলাম আট বছর, ২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত, আমাদের দুই মেয়ের জন্ম লিডসে। বাচ্চারা একসঙ্গে বড় হচ্ছিল, প্রায় প্রতি সপ্তাহে দেখা হতো সবার সঙ্গে, গল্প, দুই রাজন ভাইয়ের গান, খাওয়াদাওয়া, কিছু হা হা, কিছু হইহই। লিডস থেকে কেন্টে চলে আসার পরেও বছরে অন্তত এক–দুবার আমাদের দেখা হয়। আর তাই মারিয়া ভাবি ও মোবাশ্বের ভাই যখন মিয়োর্কার এই হলিডের প্রস্তাব করলেন, তখন না এলে যে বিরাট মিস হতো তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

গুগলে দেখেছিলাম এয়ারপোর্ট থেকে ৪২ নম্বর বাস আমাদের রিসোর্ট আরকোস প্লায়ায় যায়। দূরত্ব ২৫ মাইল ও সময় লাগে এক ঘণ্টা। এক বাসচালককে জিজ্ঞাসা করতেই ৪২ নম্বর বাসের স্টপটি দেখিয়ে দিল। রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে শেষ বাস, এই বাস মিস করলে প্ল্যান ছিল উবার কল করার; কিন্তু তার আর দরকার পড়েনি। কারণ, ইমিগ্রেশন শেষ করে ব্যাগ পেতে ২০ মিনিটও সময় লাগেনি। বাস স্টপেজে আমরা ছাড়াও কয়েকজন টুরিস্টকে দেখেই তা বোঝা যায়। সঙ্গে এয়ারপোর্টের স্টাফ। লিডস থেকে আমাদের বাকি পরিবারের সবার ফ্লাইট আসতে আরও দুই ঘণ্টা বাকি। তাই আমরা চারজন বাসে রওনা হলাম হোটেলের উদ্দেশে। হোটেল রিসেপশন থেকে রুমের চাবি দিয়ে বলল, সকালে পাসপোর্ট নিয়ে চেক ইন করে নিতে। মুঠোফোন চার্জের জন্য একটি ইউরোপিয়ন অ্যাডাপ্টার চেয়ে নিলাম। কারণ, ইউকের তিন পিনের প্লাগ ইউরোপে কাজ করে না।

নীল আকাশ, সাগরের ঢেউ আর দূরদূরান্তের পাহাড়, যেন সব একসঙ্গে জুড়ে আছে। মিয়োর্কার সমুদ্রে এলজির কারণে পানি খুবই পরিষ্কার। সাদা বালুর সৈকত আর সবুজ পানির জন্য মিয়োর্কাকে অনেকে ইউরোপের ক্যারিবিয়ান দ্বীপ বলে। বালুময় এই সৈকতে তাই সমুদ্রস্নানে স্বল্পবসনা নর–নারীর ভিড়।

আমরা রওনা হলাম কালা মরনালডার উদ্দেশে। কালা হচ্ছে ছোট সৈকত। মিয়োর্কায় একটু পরপরই এ রকম ছোট ছোট সৈকত আছে। আজ আমাদের হেঁটে হেঁটে আশপাশের সুন্দর সুন্দর সমুদ্রের ক্লিফ দেখার পালা। আবহাওয়া খুবই ভালো, খুব গরম নয়, বাংলাদেশে ডিসেম্বরে যে রকম শীতের মিষ্টি রোদের দেখা পাওয়া যায়, ঠিক তেমন। ২০ মিনিট হাঁটতেই আমরা পৌঁছে গেলাম কালা মরলানডায়। এখানে পানি গাঢ় নীল আর সবুজ। তবে সৈকতটি পাথরের। তাই এখানে সমুদ্রস্নানে কাউকে পাওয়া গেল না। পুরো সমুদ্র যেন আমাদের। তিতাস ভাই তার নতুন গিম্বল ক্যামেরায় ভিডিও করতে ব্যস্ত, রাজন ভাই আর তার ছেলে আকাশে ড্রোন উড়িয়েছেন। সুন্দর মুহূর্তগুলো যাতে হারিয়ে না যায়।

সুর্যাস্তের আগে আমরা সবাই আবার চলে এলাম সৈকতের কাছের চত্বরে। এখানের প্রতিটি দোকানেই রকমারি অনেক পণ্যের সম্ভার। এক জোড়া স্যান্ডেল কিনে নিলাম। শেষ রাতে রুমে অনেক ঠান্ডা লেগেছে; কিন্তু হোটেলের দেওয়া কম্বল গায়ে দিইনি কেউ; কারণ, দেখেই বোঝা যায়, অনেক দিন ওয়াশ করেনি। এখানে বড় দেখে একটি চাদর কিনে নিলাম। দোকানি খুব বন্ধুবৎসল, মিয়োর্কায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা। সুন্দর রোদের কথা বলতেই বলল যে এখানে বড্ড বেশি রোদ! তোমাদের ইংল্যান্ডের ঠান্ডা ওর ভালো লাগে বেশি। বললাম, চলো জায়গা বদল করে নেই!

আমার বউ খোঁজে খোঁজে এক চায়নিজ নারীর দোকান বের করেছে, কথাবার্তা বলে ফিক্সড প্রাইস থেকে কিছু কমেও নাকি ওকে শাল দিয়েছে। কক্সবাজারের বার্মিজ দোকানের কথা মনে পড়ে গেল। সেখানেও এ রকম দরদাম করে কেনার মজা পাওয়া যেত। কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকায় কোনদিকে যে সূর্যাস্ত হয়ে গেছে খেয়াল ছিল না। সমুদ্রে নামলাম, ছোট মেয়ে ইনায়দা খুব মজা পেয়েছে, বড় বড় ঢেউ ওকে পুরো ভিজিয়ে দিচ্ছে; কিন্তু এই মজা ছেড়ে পানি থেকে উঠে আসবে না। পানিতে অনেক দাপাদাপির পর মেয়েরা সব চেঞ্জ করতে হোটেলে চলে গেল।

অন্ধকার হয়ে তখন আকাশে বিশাল চাঁদ। রাজন ভাইয়ের ছেলে রেহানের ফটোগ্রাফিতে খুব আগ্রহ। বিশাল চাঁদের আলো সমুদ্রের পানিতে পড়ে ঝিকমিক করছে। তীর থেকে আমাদের দুজনের তা ধরার চেস্টা। ট্রাইপডে DSLR লাগিয়ে অনেক সেটিং চেঞ্জ করে যা ছবি আসছে, তা থেকে আই ফোনে নিমেষে এর চেয়ে অনেক ভালো ছবি আসছে। DSLR–এর যুগ আসলে শেষের পথে। অনেক কিছুর মতো আমরাই হয়তো এর শেষ প্রজন্ম।

রাতে বিচের পাশেই এক স্প্যানিশ রেস্টুরেন্টে সবাই খেতে গেলাম। খাওয়াদাওয়া শেষে আবার চাঁদের আলোয় সমুদ্রের তীর ধরে হেঁটে হোটেলে ফেরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com