1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ থেকে ভুটান যাওয়ার উপায়

  • আপডেট সময় রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অনন্য সংস্কৃতি এবং রাফটিং ও হাইকিংয়ের মতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে খুব বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেই এমন ভ্রমণের সুযোগ মিলবে যথেষ্ট সাশ্রয়ী খরচে। স্বতন্ত্র স্থাপত্য শিল্পকর্মের সাক্ষী হতে পৃথিবীর নানা প্রান্তের বিশ্বপরিব্রাজকরা ভীড় করেন এই দেশগুলোতে। বিশেষ করে বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে বাজেট ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পছন্দের দেশ ভুটান। সার্কভুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এই বৌদ্ধ রাজ্য ভ্রমণ বেশ সুবিধাজনক। চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক নৈসর্গের মাঝে তাদের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর দর্শন এক অভূতপূর্ব অনুভূতির সঞ্চার করে। চলুন, দেশটির সেরা পর্যটন স্থানগুলো ঘুরে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি জেনে নেওয়া যাক।

ভুটানের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো

থিম্পু

রাজধানী শহর থিম্পুতে হাঁটা দূরত্বেই দেখা যাবে থিম্পু নদী, মেমোরিয়াল চর্টেন, সিটি ভিউ পয়েন্ট, ক্লক টাওয়ার, থিম্পু জং, পার্লামেন্ট হাউস, লাইব্রেরি ও থিম্পু ডিজং। শহর থেকে একটু দূরেই রয়েছে বুদ্ধ দর্দেন্মা স্ট্যাচু, থিম্পু ন্যাশনাল মেমোরিয়াল চর্টেন ও চিড়িয়াখানা, যেখানে সংরক্ষিত আছে ভুটানের জাতীয় পশু তাকিন।

পুনাখা

এখানে কম সময়ে অনেকগুলো পর্যটন এলাকা ঘোরার উপায় হচ্ছে সর্বপ্রথম দোচুলা পাস যাওয়া। অবশ্য পুরো দোচুলা পাস ঘুরতে প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। তবে ফেরার পথে একে একে পড়বে পুনাখা জং, আর্ট স্কুল, ন্যাশনাল লাইব্রেরি ও ফোক হেরিটেজ যাদুঘর। ভুটানের যে স্থানটি রাফটিংয়ের জন্য জগদ্বিখ্যাত, সেটি হচ্ছে এই পুনাখা। রাফটিংয়ের জন্য এই শহরে একটা দিন থাকা উচিত।

লাখাং মন্দির, তালো মনস্ট্রি ও পেলিরি মন্দির ঘুরে চলে যাওয়া যেতে পারে ফু ছু নদীতে। এখানে রাফটিংয়ের সময় চোখে পড়বে সাস্পেন্শন ব্রিজ। এছাড়া পুনাখার নান্দনিক ঐশ্বর্যের পরশ পেতে ঘুরে আসা যেতে পারে টর্সা ন্যাচারাল রিজার্ভার ও ন্যাশনাল পার্ক।

পারো

ভুটানের সর্বোচ্চ রাস্তা চেলে লা পাস অবস্থিত এই শহরে। মেঘমুক্ত দিনে এই রাস্তা থেকে চোখে পড়ে দূরের জলমহরি পর্বত। পারোর জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে টাইগারস নেস্ট, রিনপুং জং, ন্যাশনাল মিউজিয়াম, পারো মনস্ট্রি, পারো চু ও কিচু মনস্ট্রি। শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের খাঁজে রয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান তাং সাং। হিমালয়ের এই দর্শনীয় জায়গাটি দেখার জন্য পারোতে ন্যূনতম একটি দিন অবশ্যই থাকতে হবে।

ভুটান ভ্রমণের সেরা সময়

সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এই তিন মাস ভুটান ভ্রমণের সর্বোত্তম সময়। বিশেষ করে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের সময়টা পারোতে ভুটানিদের নানান ধরনের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পরিষ্কার আকাশসহ এ সময়ের অনুকূল আবহাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি রাফটিং ও হাকিংয়ের জন্যও উপযোগী। এছাড়া মার্চ থেকে মে মাসে পুনাখাতে পর্যটকদের বেশি ভীড় থাকে।

ভুটানের ট্যুরিস্ট ভিসা

বাংলাদেশের পর্যটকরা আগমনী ভিসা (ভিসা-অন-অ্যারাইভাল) নেওয়ার মাধ্যমে ভুটান ভ্রমণে যেতে পারবেন। ভুটানে প্রবেশের মুহূর্তে আবেদন করে তাৎক্ষণিকভাবে এই ভিসা পাওয়ার বিধান থাকলেও বাংলাদেশে থাকা অবস্থাতেই ভিসার আবেদন করা উচিত। কেননা প্রবেশকালীন অন-অ্যারাইভাল ভিসার প্রক্রিয়াকরণের মুহূর্তে দীর্ঘ সময় যাবৎ অপেক্ষা করতে হয়।

আবেদনের জন্য ভুটান ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস পোর্টালে (https://immi.gov.bt/) সাইন আপ করতে হবে। এই অনলাইন আবেদন সম্পন্ন করার জন্য যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও প্রাসঙ্গিক নথি আপলোডের প্রয়োজন পড়বে। চূড়ান্তভাবে সাবমিটের সময় ভিসা ফির সঙ্গে এসডিএফ (সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি) দিতে হবে।

পর্যটন ভিসা আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

– প্রার্থীর বৈধ পাসপোর্টের কপি। পাসপোর্টের মেয়াদ ভুটানে পৌঁছার তারিখ থেকে কমপক্ষে আগামী ৬ মাস পর্যন্ত হতে হবে।

– প্রার্থীর সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি

বাংলাদেশ থেকে ভুটান যাওয়ার উপায়

ভুটানের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত পারোতে, যেখান থেকে সরাসরি বিমান চলাচল করে ঢাকাতে। সবচেয়ে নির্ঝঞ্ঝাট হলেও এই আকাশপথে বেশি ভাড়া গুণতে হবে। শুধুমাত্র যেতে জনপ্রতি ভাড়া পড়তে পারে প্রায় ৪১ থেকে ৭১ হাজার টাকা।

ঢাকা থেকে থিম্পুর দূরত্ব বেশ কম হওয়ায় সড়কপথে যাওয়া যেতে পারে। ভারত হয়ে যেতে হয় বিধায় এ ক্ষেত্রে ভারতের ট্রানজিট ভিসার প্রয়োজন হবে। সময় সাপেক্ষ হলেও এই পথে খরচ অনেকটা কম। এর জন্য প্রথমে বাস যোগে যেতে হবে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত। সেখানে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে চ্যাংড়াবান্ধা থেকে বাসে উঠে নামতে হবে ময়নামতি বাইপাসে। সেখান থেকে আরেক বাসে চলে যেতে হবে শিলিগুড়ি জয়গাঁ। সেখানকার ভারতীয় স্থলবন্দরে ভারত থেকে ভুটানে প্রবেশের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তারপর ভুটান গেট থেকে অনুমতি নিয়ে থিম্পুতে প্রবেশ করা যাবে। এ ছাড়া গেলেফু, জোংখার ও ফুন্টশোলিং পয়েন্ট দিয়েও ভুটানে প্রবেশ করা যায়। ফুন্টশোলিং থেকে পারোর ট্যাক্সি, জিপগাড়ি ও বাস পাওয়া যায়।

ট্রেনে যেতে চাইলে জয়গাঁ বা শিলদা থেকে নিউ জলপাইগুড়ির হাসিমারা বা আলিপুর দুয়ার যেতে হবে। আলিপুর বা হাসিমারাতে ফুন্টশোলিংয়ের বাস ও রিজার্ভ গাড়ি পাওয়া যায়। এই পথে ভুটান যেতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে ও অতিরিক্ত ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়।

থিম্পু থেকে পারো গিয়ে তারপর সেখান থেকে পুনাখা ঘুরে আসলে সময় বেশি লাগে, তবে যাতায়াত খরচ অনেক কম হয়। তবে থিম্পু থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে বা বাসে সরাসরি পুনাখাতেও যাওয়া যায়। শহরের অভ্যন্তরে যাতায়াতের সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হলো রেন্ট-এ কার বা ট্যুরিস্ট সার্ভিসগুলোর কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া করা।

ড্রুক রাইড অ্যাপের মাধ্যমে ভুটানের স্থানীয় গাড়ি ভাড়া, বিমানের টিকিট ও ট্যুর অপারেটর বুকিং দেওয়া যায়। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে আবাসিক হোটেলে থেকেও পরিবহন সরবরাহ বা ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

ভুটান ভ্রমণে থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা

স্থলবেষ্টিত দেশটিতে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো শহর হচ্ছে পারো। এখানে প্রধান সড়কের পাশেই বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল পাওয়া যায়। এগুলোতে প্রতি রাতের জন্য ভাড়া জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৯০০ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার ২০০ টাকা।

থিম্পুর হোটেলগুলো বেশ ব্যয়বহুল; এক হাজার ৮০০ থেকে শুরু করে ১৬ হাজার ভুটানি রূপি। বাংলাদেশি টাকায় এই খরচ প্রায় দুই হাজার ৫৬২ থেকে ২২ হাজার ৭৭৪ টাকা (১ ভুটানি রূপি = ১ দশমিক ৪২ বাংলাদেশি টাকা)। পুনাখায় থাকার ক্ষেত্রে শহরের বাইরের হোটেলগুলো অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী। সেখানে রাত্রি যাপনের জন্য মাথাপিছু ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়া নিতে পারে।

ভুটানের যে খাবারটি পর্যটকদের মনে জায়গা দখল করে আছে তা হলো ডর্টসি। এটি আসলে গরুর দুধের পনির। এর সঙ্গে আরও বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে স্বাদে ভিন্নতা এনে ভিন্ন নাম দেওয়া হয়। যেমন- এমা ডর্টসি, কেওয়া ডর্টসি, খেমা ডর্টসি ও এগা ডর্টসি।

থিম্পুর বিশেষ খাবারের মধ্যে আরও আছে জাশামারো, ফাকশাপা ও মোমো। তবে পারোর অধিবাসীরা নিরামিষ খাবারেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

ভুটান ঘুরে বেড়ানোর সময় কিছু প্রয়োজনীয় সতর্কতা

– যাতায়াত, থাকা-খাওয়া, এবং ঘুরে বেড়ানো সবকিছুতে খরচ আরও কমাতে চাইলে অফ সিজনে ঘুরতে যাওয়া উত্তম। এর জন্য অক্টোবর, নভেম্বর, মার্চ ও এপ্রিল এই চার মাস বাদ দিয়ে ভ্রমণ করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে ন্যূনতম তিন মাস আগে থেকে বিমানের টিকেট কাটলে ভাড়ায় অনেকটা ছাড় পাওয়া যাবে।

– ভুটানের এটিএম বুথগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারিগরি সমস্যা থাকে। এমনকি প্রায় ক্ষেত্রে বুথে বেশি টাকা থাকে না। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রতিদিনের আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বিকল্প উপায় রাখতে হবে।

– মোবাইলে চার্জসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য সঙ্গে একটি ইউনিভার্সাল অ্যাডাপ্টার রাখা উচিত।

– বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানগুলো পরিদর্শনের সময় সেখানকার ভাবগাম্ভীর্য ও নির্দেশনাবলী অনুসরণ করা উচিত।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com