1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৭ অপরাহ্ন

ভালোবাসার মৌসুমে লাভ লক পয়েন্টে

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪

ভালোবাসার রাজধানী হিসেবে খ্যাত ফ্রান্সের প্যারিস। সেই শহরের সেন নদীর ওপর দুটি সেতু রয়েছে। কোনো এক অজানা কারণে সেতু দুটির ওপর দাঁড়িয়ে অসংখ্য প্রেমিক যুগল এসে চিরদিন একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা করেন এবং একটি করে তালা আটকিয়ে চাবিটি নদীতে ফেলে দিয়ে যান।

এটা বলে আশ্বস্ত করা যায় যে এই ভালোবাসার মৌসুমে লাভ লক করার জন্য আপনাকে প্যারিসে যেতে হবে না। ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে আপনি ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটি। সেখানকার লাভ পয়েন্টে একটি তালা লাগিয়ে চাবিটি কাপ্তাই হ্রদে ফেলে দিয়ে লাভ লক করতে পারেন। ২০১৮ সালে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা উদ্বোধন করেছিলেন রাঙামাটির পলওয়েল পার্কে নির্মাণ করা লাভ পয়েন্ট। সেদিন উদ্বোধনের পর তিনি সহধর্মিণী অনামিকা ত্রিপুরাকে সঙ্গে করে লাভ পয়েন্টে তালা লাগিয়ে চাবি কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ছুড়ে ফেলে ‘লাভ লক’ কার্যক্রমের সূচনা করেছিলেন। এখন শুধু ভ্যালেন্টাইনস ডে নয়, প্রায় সারা বছর মানুষ সেখানে তালা লাগিয়ে নিজেদের ভালোবাসাকে চিরজীবনের জন্য লক করতে চাবি ছুড়ে দেন কাপ্তাই হ্রদে।

এই লাভ পয়েন্টে তালা লাগাতে আপনাকে যেতে হবে রাঙামাটি শহরের ডিসি বাংলোর পলওয়েল পার্কে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকেই সেখানে যাওয়া যায়।

কিন্তু জানেন কি, এই লাভ লক পয়েন্টের রয়েছে এক মর্মান্তিক কাহিনি। একসময় বাংলাদেশ রাইফেলসে (বর্তমানে বিজিবি) চাকরি করতেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার নাগিরপাড় গ্রামের আলাউদ্দিন পাটোয়ারী। চাকরিরত অবস্থায় ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) পেয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান তিনি। ২০১৩ সালে দেশে এসে একই উপজেলার পয়লাগাছা গ্রামের আইরিন সুলতানা লিমাকে বিয়ে করেন আলাউদ্দিন। বিয়ের দুই মাস পর লিমাকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আবার আমেরিকায় চলে যান তিনি। স্ত্রীকে নিতে ফিরে আসেন ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ৪ এপ্রিল ফিরে যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক হয়। আলাউদ্দিন ও লিমা সিদ্ধান্ত নেন, আমেরিকা যাওয়ার আগে পাহাড় দেখবেন, কাপ্তাই হ্রদে নৌভ্রমণ করবেন। সে অনুযায়ী ১৮ মার্চ তাঁরা বেড়াতে যান রাঙামাটিতে।

১৯ মার্চের পরিষ্কার আকাশ দেখে ঝুলন্ত সেতু ঘাট থেকে দুপুরের দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন স্বামী-স্ত্রী। তাঁদের বোট রওনা দেয় সুবলংয়ের উদ্দেশে। কিন্তু কে জানত কাপ্তাই হ্রদের মাঝে কালবৈশাখী হানা দেবে! তাঁদের বহনকারী বোটটি যখন ডিসি বাংলোর দক্ষিণ দিকে কাপ্তাই হ্রদের মাঝ বরাবর চলে গেছে, তখন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো হানা দেয় কালবৈশাখী। বাতাসের তোড়ে উল্টে যায় নৌকা। আলাউদ্দিন সাঁতার জানলেও জানতেন না লিমা। তাই বাঁচার জন্য স্বামীকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। আলাউদ্দিন স্ত্রীকে নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। নৌকা ওলটানোর দৃশ্য দেখে দম্পতিকে উদ্ধারের জন্য ঝুলন্ত সেতুর ঘাট থেকে বোট নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান অন্য বোটচালকেরা। কিন্তু তাঁরা পৌঁছানোর আগেই আলাউদ্দিন ও লিমা তলিয়ে যান।

শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। আলাউদ্দিন ও লিমাকে উদ্ধারে যোগ দেন কাপ্তাই নৌবাহিনী ও রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের দক্ষ ডুবুরিরা। দুই দিন তাঁদের সন্ধান পাননি তাঁরা। ঘটনার তৃতীয় দিন সকালে পলওয়েল পার্কের কাপ্তাই হ্রদের পাড় থেকে কয়েক গজ দূরে একে অপরকে আলিঙ্গনরত অবস্থায় তাঁদের মৃতদেহ পাওয়া যায়।

আলাউদ্দিন ও লিমার আমৃত্যু একসঙ্গে থাকতে চাওয়ার এ বাসনার প্রতি সম্মান জানিয়ে ২০১৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে পলওয়েল পার্কে নির্মাণ করা হয় লাভ লক পয়েন্ট।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com