কাশ্মীর। যেন সত্যিকারে স্বপ্নের ভূস্বর্গ। পৃথিবীর সব রূপ-সৌন্দর্য যেন ভিড় করেছে এখানে। ছুটে এসেছে প্রকৃতির রূপের সব অনুষঙ্গ। প্রকৃতির প্রতিটি বিচিত্র স্বাদের অলঙ্কার দিয়ে সাজানো এ ভূস্বর্গ। একটা সময় কাশ্মীর শব্দটি ভৌগোলিকভাবে শুধু বিশাল হিমালয় এবং পিরপাঞ্জাল পর্বতমালার উপত্যকাকে নির্দেশনা করা হতো।
আজ কাশ্মীর বলতে বোঝায় একটি বিশাল অঞ্চল যা ভারতীয়-শাসিত রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর, পাকিস্তানশাসিত গিলগিট-বালতিস্তান এবং আজাদ কাশ্মীর প্রদেশ এবং চীন-শাসিত আকসাই চীন এবং ট্রান্স-কারাকোরাম ট্রাক্ট অঞ্চলসমূহ নিয়ে গঠিত। তাই বলা চলে কাশ্মীরের দুটি অংশ। একটি ভারতশাসিত জম্মু কাশ্মীর এবং অন্যটি পাকিস্তান অধিভুক্ত আজাদ কাশ্মীর। কাশ্মীরে পর্যটকদের চোখ জুড়ায় শ্রীনগর, পহেলগাঁও, গুলমার্গ, সোনমার্গ ও কাটরা। তারপরই বলা যায় ডালহৌসি, অমৃতসর, মানালী, কুলু, হিমাচল ও পাঞ্জাব।
এসব জায়গা ঘুরে আসতে এক মাসেরও বেশি লম্বা ছুটি বা অবসর থাকা চাই। বানিহাল টানেল কাশ্মীরের সঙ্গে আশ্চর্য যোগসেতু রয়েছে। প্রায় সোয়া দুই কিলোমিটার এই টানেল। টানেলের আগে রয়েছে বেশ কিছু অ্যাভালেঞ্চ জোন। এখান থেকে পাড়ি দিলেই আশ্চর্য এক সবুজে ঢাকা কাশ্মীরের দেখা মিলবে। বনগুলো সেজে আছে পপলার, উইলো গাছ আর সবুজ শস্যক্ষেত। সবুজ গাছের ফাঁকে নীল আকাশ। দূরে রুক্ষ পাহাড়, নিশ্চুপ উপত্যাকা। আর মাইলের পর মাইল পাহাড় টপকেই কাশ্মীর। রোমান্টিক স্বপ্নের ভূস্বর্গ। স্বপ্নরাজ্য।
কাশ্মীরের রূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। স্বচ্ছজলের নদী, উঁচু উঁচু বরফে ঢাকা পাহাড়, বনভূমি, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মানুষজন সব মিলিয়ে অনন্য সংযোজন এখানে। রয়েছে পিরপাঞ্জাল গিরিশৃঙ্গ তার অন্যদিকেই কারাকোরাম নাঙ্গা পর্যন্ত। আর তার আড়ালে কাশ্মীর। গোলাপি, সাদা রঙের সরষে আর পপি ফুলে সারা গ্রীষ্ম ঝলমল করে সমগ্র উপত্যাকা। জাফরান চিনারের রং বদলানো। আর শীতে তো রয়েছেই বরফ চাদরে মোড়া সারা উপত্যকা। স্বপ্নের রাজ্যে ভেসে চলে নীল আকাশে পাহাড়ি রাস্তার দুধারে দেখা মেলে বিভিন্ন বৈচিত্র্যের জীবনাচার।
এছাড়া কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রাকৃতিক লীলাভূমি থেকে পর্যটকদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে অপরূপ সূর্যাস্ত। কোনো দিন বরফে ডুবছে সূর্য, কোনো দিন পাহাড়ের ওপাশে হারিয়ে যাচ্ছে, কোনো দিন ফুলের সমুদ্রে মুখ লুকায় সেটি। সূর্যাস্তের আগে রাঙিয়ে দেয় ঝুলে থাকা আকাশটাকে। কাশ্মীরের এত বাহারি রূপ পৃথিবীর আর কোথাও দেখা মেলে না।