ইউরোপে রোমান্টিক ভেকেশন বা হানিমুন বলতেই সবাই ভাবে সুইজারল্যান্ড ও প্যারিসের কথা। কিন্তু আজকাল এর বাইরে গিয়ে নতুন কিছুর মজা খুঁজে নেয়াটাই যেন আধুনিকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতানুগতিক ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ কমে আসছে। ভ্রমণ পিপাসুরা এখন অনেক বেশি রোমাঞ্চপ্রেমী। এমন রোমাঞ্চপ্রেমীদেরকে অনন্য এবং স্মরণীয় রোমান্টিক ডেসটিনেশন খুঁজে দিতেই আজকের পোস্ট।
স্পেন
মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক স্থাপত্যের সমন্বয়ে পরিপূর্ণ স্পেন ইউরোপের সবচেয়ে উৎসবমুখর দেশ গুলোর একটি। স্পেনের উৎসবমুখরতা অনুভব করতে আপনাকে মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা উভয় শহরই ঘুরতে হবে। মাদ্রিদের শিল্প জাদুঘর ঘুরে দেখার আগেই দম্পতিদের ঘুরে আসা উচিৎ গ্র্যান্ড ভিয়া ডিসট্রিক্ট। যেখানে খুঁজে পাবেন শানেল ও ডিওর এর মত নামীদামী সব ব্র্যান্ড শপ। এই এলাকাটি বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা স্বাদের খাবারের দোকানের জন্যও বিখ্যাত।
মুরিস রিভাইভাল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত প্লাজা দে টরোস দে লাস ভেন্টাস পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ষাঁড়-লড়াই এর মাঠ। এখানে ভ্রমণ করলেই আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন কেন ষাঁড়ের লড়াই স্প্যানিশদের সংস্কৃতিতে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি আরও যেতে পারেন এল রেটিরো পার্ক। যেখানে রয়েছে নানা প্রজাতির ১৫০০০ এর বেশি গাছ ও গালাপাগোস ফাউন্টেন, ফলেন এঞ্জেলের মত বিশ্ববিখ্যাত সব ঐতিহাসিক মূর্তি।
ঐতিহাসিক বার্সেলোনা শহরে অপেক্ষা করছে আপনার ও আপনার ভালবাসার মানুষের জন্য আরও কিছু বিস্ময়। সপ্তদশ শতকে নির্মিত বাসিলিকা দেল পিলার-এর বারোক স্থাপত্যের মহিমা তার মধ্যে একটি। গোথিক এবং কাতালান স্থাপত্য শৈলীর সংমিশ্রণে নির্মিত মন্টসেরাট মোনাস্টারির চূড়া থেকে উপভোগ করতে পারবেন পুরো বার্সেলোনা শহরের পাশ্চাত্য সভ্যতারর চমৎকার একটি এরিয়াল ভিউ। ব্ল্যাক মেডোনা নামের জনপ্রিয় চিত্রকর্মটিও রাখা আছে এখানেই।
গ্রিস
পাশ্চাত্য সভ্যতার জন্মস্থান গ্রিস হতে পারে রোমান্টিক ভ্রমণের জন্য চমৎকার একটি স্থান। গ্রিসের এথেন্সে যেমন পঞ্চম শতাব্দীর প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে তেমনি রয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর সব আধুনিক স্থাপনাও। আপনার ভালবাসার মানুষের সাথে ইনসটাগ্রামে দেয়ার মত চমৎকার সব ছবি তুলতে পারবেন প্যানাথেনাইক স্টেডিয়ামে গিয়ে। যেখানে উনবিংশ শতাব্দীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সর্বপ্রথম অলিম্পিক গেমস। এথেন্সের ঠিক কেন্দ্রেই অবস্থিত অলিম্পিয়ান জিউসের প্রকাণ্ড মন্দিরটিও ঘুরে দেখতে পারেন।
রোমান্টিক ট্যুরের জন্য চমৎকার কিছু জায়গা রয়েছে গ্রিক দ্বীপ গুলোতে। শিল্পীর হাতে আঁকা ছবির মত সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাবেন ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত পৌরাণিক ডেলোস আইল্যান্ড। অলিক সুন্দর রোমান্টিক সূর্যাস্ত দেখতে যেতে পারেন সান্তরিনি দ্বীপে।
ক্রোয়েশিয়া
ইউরোপের রৌদ্রজ্জ্বল সুন্দর একটি দেশ ক্রোয়েশিয়া। পুরনো বিশ্বের সৌন্দর্য এবং আড্রিয়াটিক সাগরের চমৎকার সব সৈকত মিলে ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর শহর ডুব্রভনিক। শহর জুড়ে বারোক স্থাপত্যের স্থাপনা ছড়ানো ছিটানো থাকায় সমগ্র ডুব্রভনিক শহরটাই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। চমৎকার মার্বেলে বাঁধানো বেদী সম্বলিত ৫০০ বছর পুরনো সেন্ট ব্লেইস চার্চ দেখতে আপনাকে যেতে হবে লুজা স্কয়ার। গোথিক এবং রেনেসাঁ স্থাপত্য শৈলী দেখতে দুজন মিলে যেতে পারেন স্পঞ্জা চার্চ।
ডুব্রভনিক শহরের খাবার তালিকা থেকে যে খাবারটি আপনার অবশ্যই খেয়ে দেখা উচিৎ সেটি হল ব্ল্যাক রিসোটো। করচুলা দ্বীপে বিশেষ ভাবে উৎপাদিত আঙ্গুর থেকে তৈরি সাদা ওয়াইনের সাথে আড্রিয়াটিক সমুদ্রের তাজা অয়েস্টার এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার।
আপনারা দুজনেই যদি রোমাঞ্চ পছন্দ করেন তবে অবশ্যই প্যারাগ্লাইডিং ও ব্যানানা রাইড উপভোগ করতে বানজি বিচে চলে যেতে পারেন।
পূর্ব ইউরোপ
পূর্ব ইউরোপে যেকোন প্রেমিক যুগলের রোমান্টিক ভ্রমণের জন্য বেশ কিছু চমৎকার জায়গা রয়েছে। আপনার ভালবাসার মানুষকে নিয়ে যেতে পারেন স্লোভাকিয়ার ব্রাতিস্লাভাতে। এখানে আপনি উপভোগ করতে পারবেন কারপাথিয়ান পর্বতমালা ও দানিউব নদীর শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য। নবম শতাব্দীতে নির্মিত ব্রাতিস্লাভা দুর্গ এই শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান। লিটল কারপাথিয়ান ওয়াইন অঞ্চলের চোখ জুড়ানো সব আংগুর ক্ষেত ঘুরে দেখতে পারেন। ব্রাতিস্লাভার খুব কাছেই চমৎকার আরেকটি শহর হাঙ্গেরির বুডাপেস্ট। বুডাপেস্টের অসাধারণ সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্থাপনা নিঃসন্দেহেই আপনাকে মুগ্ধ করবে। মনকে স্নিগ্ধতায় ভরে তুলতে দানিউব নদীতে নৌকা নিয়ে ভেসে বেড়াতে পারেন শহরের কোল ঘেঁষে। রাতের বুডাপেস্ট শহরের আয়োজন বিশ্ব সমাদৃত। আপনাকে আপনার ভালবাসার মানুষটির সাথে রাত পেরিয়ে সকাল পর্যন্ত নাচে গানে মেতে থাকার সুযোগ করে দেবে বুদাপেস্টের জনপ্রিয় নাইট ক্লাবগুলো।
স্ক্যান্ডিনেভিয়া
সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড এবং নরওয়ে মিলে গঠিত স্ক্যান্ডিনেভিয়া। রোমান্টিক ইউরোপ ট্রিপের জন্য হয়তো সবচেয়ে উপভোগ্য পছন্দ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এই দেশ গুলো। মনের দিক থেকে তরুন যে কারো মন কাড়বে কোপেনহেগেনের দুই শতাব্দী পুরনো টিভলি এমিউজমেন্ট পার্ক। ডেনমার্কের এই রাজধানী শহরে দেখার মত আরও রয়েছে নাইহ্যাবেন। এখানে আপনারা দুজন মিলে ভেসে বেড়াতে পারেন স্বচ্ছ পানির ইউরোপিয়ান খাল গুলোতে, জ্যাজ সঙ্গীত উপভোগ করতে করতে চেখে দেখতে পারেন ইউরোপিয়ান রেস্তোরাঁর খাবার।
ডেনমার্কের হার্শটালস থেকে নরওয়ের ক্রিস্টিয়ানস্যান্ড পর্যন্ত ফেরি ভ্রমণটি সারাজীবন মনে রাখার মত একটা অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে আপনার। তিন ঘণ্টার এই ফেরি ভ্রমণে আপনি উপভোগ করতে পারবেন উত্তর সাগরের অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য।
রোমান্টিক ভ্রমণের জন্য উপযোগী আরও একটি শহর নরওয়ের বার্গেন। ইউরোপিয়ান পর্বতমালার মন মাতানো সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পাবে আপনি মাউন্ট ফ্লয়েইন ভ্রমণে। এক দিকে সমুদ্র ও তিন দিকে ভূমি ঘেরা জলাশয়কে বলা হয় ফিয়র্ড (Fjords)। নরওয়েতে রয়েছে এমন চমৎকার সব দৃষ্টিনন্দন ফিয়র্ড। এদের মধ্যে অন্যতম সুন্দর একটি হচ্ছে সগনেফিয়র্ড। সগনেফিয়র্ড-এর হাইকিং, মাউন্টেন বাইকিং ও স্কিইং করার স্মৃতি হতে পারে আপনার নাতি-নাতনিদের কাছে গল্প করার মত অভিজ্ঞতা।
ইউরোপের এসব জায়গার যেকোনোটিতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হতে পারে আপনার ভালবাসার মানুষের সাথে যাপিত সবচেয়ে সুন্দর সময়। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার লেক কিংবা হিমবাহ থেকে কারপাথিয়ান পর্বতমালা কিংবা পূর্ব ইউরোপের দালিউব নদী – যেকোনোটিই আপনার রোমান্টিক ভ্রমণকে পরিপূর্ণ করে তোলার জন্য যথেষ্ট।
Leave a Reply