থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্কক বেড়াতে গেলে এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাওয়ার পথে চোখ পড়বে রাস্তার মাঝে ডিভাইডারের উপর সাদা, লাল ফুল, লাইলাক ও হরেক রকম রঙ্গিন ফুল। রাস্তার পাশে নাচ-গানের আয়োজন। রাস্তার দুধারে রেস্তোরাতে খানাপিনার মহাউৎসব। এ শহর ক্লান্তিহীন ভাবে ইন্দিয়প্রবণ। যেখানেই যাবেন হাসি মুখে আপনাকে আমন্ত্রণ জানাবে। সারা রাত দোকানগুলো খোলা থাকে। একোরিয়ামে রয়েছে নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ। রেষ্ট্রুরেন্টে আপনার পছন্দের তাজা মাছ রান্না হবে। রাস্তার পাশে ফুট ম্যাসেজ, আইসক্রিম পার্লার, গয়নাগাটি, কাপড় চোপড় নানা রংয়ের পণ্য নিয়ে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষন করছে। বড় বড় শপিং মল থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের দোকন গুলোতে পাবেন দেশী বিদেশী সব পণ্য। মদ ও মেয়ে মানুষ এখানে খুবই সস্তা। তাইতো সারা বিশ্বের পর্যটকরা সারা বছরই এখানে ভিড় করে।
পাতায়া বিচ থাইল্যান্ডের অন্যতম সেরা বিচ। ব্যাঙ্কক থেকে ঘণ্টা দুয়েকের পথ পাতায়া।স্পিড বোটে করে পাতায়া বিচ থেকে কোরাল আইল্যান্ড যেতে পারেন। নানান রকম এ্যাডভেঞ্চার এখানে পাবেন। প্যারাগ্লাইডিং থেকে আনডার ওয়াটার ওয়াক। রাতের বেলা গোটা শহর একটা কার্নিভালের রূপ নেয়। বিচে রঙিন ছাতার নিচে বসে বিয়ার আর স্টিমড কর্ন খেতে খেতে উপভোগ করুন অনাবিল আনন্দ। স্বচ্ছ নীল পানিতে গোসল করতে পারেন।
এখানকার স্ট্রিট ফুড খুবই মুখরোচক। ব্যাঙ্ককের সারা শহর জুড়ে রাস্তায় আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে হরেক রকম খাবারের আয়োজন। আগুনে ঝলসানো মাছের প্রচলন এ দেশে বেশি। মাঝারি মাপের চিংড়ি ভাজা সাথে সস। স্টিমড চিংড়ি খেতে দারুন মজা। কাঁকড়াভাজাও পাওয়া যায়। এছাড়া ফলের ভিতর পাবেন স্ট্রবেরি, আনারস, ছবেদা, তরমুজ, পেপে, কাঁঠাল, আম। কফি থেকে শুরু করে নান রকম পানীয় পাবেন সুলভে।
এখানে নতুন মনে হবে ফ্লোটিং মার্কেট। ব্যাঙ্কক শহর থেকে একটু বাইরে খোলা পানিতে নৌকা ভাসিয়ে নানান পন্য সামগ্রি সাজিয়ে বসে আছে দোকানিরা। অধিকাংশই মেয়ে। চুলে ফুল গুজে, নানা রং এর পোষাক পরে সেজেগুজে মেয়েরা বসে আছে। শাকসবজি ফলমুল থেকে শুরু করে কি নেই এখানে। জামা-কাপড়, ছাতা, পাখা, পুতুল।
নাইট ক্রুজ, সাফারি ওয়ার্ল্ড আপনাকে দারুন আনন্দ দেবে। শহরটিকে উপভোগ করুন নিজের মতো করে। এজন্যই ব্যাঙ্কককে বলে হ্যাভেন অব প্যারাডাইস। যে কোন জায়গায় যাওয়ার জন্য রেন্ট এ কারের ট্যাক্সি সর্বত্র পাবেন মিটারে চলে তাই কোন ঝামেলা নেই। তবে একটাই সমস্যা ভাষা। ইংরেজী বলা বা বোঝ কোনটাতেই ইচ্ছে বা আগ্রহ তেমন নেই এদের। আকাশ ছোয়া হাইরাইজ বিল্ডিং, চোখ ধাধানো শপিং মল, চারিদিকে রেস্তোরা চোখে পড়বে শহর জুড়ে। জীবনটাকে উপভোগ করার জন্যই যেন মানুষজন তা এখানকার মানুষদের দেখলেই বোঝা যায়।
ব্যাঙ্ককের জেম আর জুয়েলারী আপনার নজর কাড়বে। নানা রংয়ের পাথর আর পাথর বসানো গয়না পাবেন এখানে। সিলভার জুয়েলারিও আপনার নজর কাড়বে। গয়না ছাড়া থাই সিল্কের নানা ধরনের আইটেম চোখে পড়বে এখানে। এশিয়ার অন্যতম উইকএন্ড মার্কেট চাটুচাক যেতে ভুলবেন না। একটা বিরাট এলাকা জুড়ে রাস্তার দুধারে হাজার হাজার দোকান নানান পন্য নিয়ে বসে আছে। কি নেই এখানে। ঘুরতে ঘুরতে গলা শুকিয়ে গেলে রাস্তার পাশেই রেস্তোরাতে বসে একটু জিড়িয়ে নিন এবং ঠান্ডা বিয়ারে গলা ভিজিয়ে নিন। সঙ্গে খেতে পারেন স্পাইস রাইস, নুডুলস উইথ ফ্রাইড প্রণ অথবা ফ্রাইড চিকেন। বিয়ার পছন্দ না হলে নিতে পারেন ডায়েট কোক। শহরের মধ্যে একটা হাটের স্বাদ পাবেন এখানে সব ব্রান্ডেড জিনিস ডিসকাউন্টে পেতে গেলে চলে যান এমবিকে মার্কেট।
থাই এয়ারওয়েজ, ব্যাঙ্কক এয়ারওয়েজ, বিমান, এবং ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স নিয়মিত ডাইরেক্ট ফ্লাইট পরিচালনা করে ব্যাঙ্ককে। বিভিন্ন সংস্থার দুই রাত তিন দিনের হোটেলসহ প্যাকেজ আছে। বাজেট অনুযায়ী হোটেল বেছে নিতে পারেন। থাই ফুড ভাল না লাগলে বাংলা বা ভারতীয় ফুড পাবেন সর্বত্র। থাইল্যান্ড গ্রীষ্ম প্রধান দেশ। তাই সুতির হালকা পোষাক নিয়ে যাওয়াই ভালো। বেড়ানোর জন্য নভেম্বর থেকে মার্চ উত্তম সময়।
প্রয়োজনে লোকাল গাইডের সহযোগীতা নিতে পারেন। থাইল্যান্ড যেতে ভিসা নিতে হয়। থাই ভিসার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ভি.এস.এফ বা থাইল্যান্ড অ্যাম্বাসি মনোনিত ভিসা এজেন্টের সাথে। ভিসা করতে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাগবে। ভিসা পেতে ১ থেকে ২ সপ্তাহ লাগে। তাই আগে থেকে ভিসা নিয়ে নেবেন। সাধারণত: টুরিষ্ট ভিসা একমাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে।