1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২১ পূর্বাহ্ন

ভ্রমণ পিপাসুদের স্বর্গরাজ্য থাইল্যান্ড

  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি পর্যটন বান্ধব পরিবেশের জন্য থাইল্যান্ড এশিয়ার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। থাইল্যান্ডের অসংখ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে পর্যটকদের সবেচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে পাতায়া সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতের সাদা নরম বালু, সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র এবং তাতে চরে বেড়ানো রং-বেরংয়ের ছোট ছোট নৌকা আর পেছনে সবুজের চাদর বিছানো পাহাড় অন্যরকম অনুভূতির জোগান দেয়।

থাইল্যান্ডের সমুদ্রশহর পাতায়ার প্রবাল দ্বীপের প্রতিটি পরতে পরতে সাজানো রয়েছে এমন সৌন্দর্য। পাতায়া সমুদ্র সৈকত খুব বেশি বড় না হলেও বেশ সাজানোগোছানো। সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করেছে থাই সরকার। ব্যাংকক থেকে পাতায়ার দূরত্ব সাত কিলোমিটার।

সমগ্র সৈকতের সবকিছুই অত্যন্ত গোছানো। সৈকতের ধারে রেস্তোরা এবং বারগুলো চব্বিশ ঘণ্টাই খোলা থাকে। তাছাড়া বিচ রোড থেকে স্পিডবোটে করে পৌঁছে যাওয়া যায় সমুদ্রের গভীরে। এখানে প্যারাগ্লাইডিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। তবে দিনের পাতায়ার তুলনায় রাতের পাতায়া অনেক বেশি মায়াবী ও আকর্ষণীয়।

আর থাইল্যান্ডে এসে যদি থাই জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে  চান তবে যেতে হবে রাজধানী ব্যাংককে। চাও ফারায়া নদীর পশ্চিম তীরে থাইল্যান্ড উপসাগরের কাছাকাছি অবস্থিত ব্যাংককের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ চাও ফারায়া নদীর পশ্চিমতীরে নাফ্রালারন রোডের উপর প্রায় এক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত প্রাচীন রাজপ্রাসাদ। এই রাজপ্রাসাদ থাই জাতির পুরনো দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়! এছাড়া প্রাসাদ চত্বরে অবস্থিত পান্না দিয়ে বানানো বুদ্ধের মূর্তি  আছে যা দেখলে থাইদের অতীত ঐতিহ্যের পরিচয় পাওয়া যায়। একটিমাত্র জেড পাথর কেটে তৈরি করা মূর্তিটি ছাড়াও বৌদ্ধ মন্দিরটির বাইরের ও ভেতরের দেয়ালে রয়েছে নানা ধরণের ভাস্কর্য। তাতে রয়েছে ফ্রেসকো ও সূক্ষ্ম কারুকাজ। প্রাসাদ চত্বরে আরও বেশ কয়েকটি মন্দির এবং কম্বোডিয়ার আঙ্কোরভাটের একটি মিনিয়েচার মডেল আছে। চমৎকার সব মন্দির, বুদ্ধমূর্তি, রাজপ্রাসাদ, জাদুঘর, পার্ক সবকিছু মিলিয়ে ব্যাংকক ট্যুরিস্টদের জন্য একটি আদর্শ শহর।

থাইল্যান্ডের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হল ফুকেট। ফুকেটে সমুদ্রের নীল জলরাশি, বন ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপসমূহ, সাদা বালুময় সমুদ্র সৈকত, আইল্যান্ড ও নীল সমুদ্রের মাঝে পাহাড় জঙ্গল ভরা ছোট ছোট নির্জন দ্বীপ ও তার বেলাভূমি সৌন্দর্যের এক অনন্য বিস্ময়। যা আপনাকে কিছুক্ষনের জন্য হলেও নিয়ে যাবে কল্পনার স্বর্গরাজ্যে। ব্যাংকক থেকে ফুকেটের দূরত্ব প্রায় ৮৬০ কিলোমিটার। এটি থাইল্যান্ডের একটি অন্যতম পর্যটনপ্রিয় বৃহত্তম দ্বীপ। সৈকতের জন্যও ফুকেট বিখ্যাত। তবে সৈকতের পাশাপাশি ফুকেটের আরেকটি সৌন্দর্য হলো আন্দামান সাগরের ভেতর চুনাপাথরের পাহাড়। তবে এর জন্য সৈকত থেকে নৌকা নিয়ে যেতে হবে ‘ফাং-বে’ তে। বৈচিত্র্যময় এসব চুনাপাথরের পাহাড়ে অনেক সিনেমার শুটিং হয়। ১৯৭৪ সালের জেমস বন্ড সিরিজের দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান সিনেমার শুটিং হয়েছিল এখানকার একটি দ্বীপে। তাই দ্বীপটির নাম রাখা হয়েছে ‘জেমস বন্ড আইল্যান্ড’। ফুকেট গেলে সেই স্থানটিও ঘুরে আসা যায়।

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থাইল্যান্ডের পূর্ব-উপকূলে থাইল্যান্ড উপমহাসাগর ও পশ্চিমে আন্দামান সাগর। শুধু উপমহাদেশেই নয় সমস্ত পৃথিবী থেকে থাইল্যান্ডে বেড়াতে আসেন অসংখ্য পর্যটন প্রিয় দর্শনার্থী।

প্রাকৃতিক রূপলাবণ্যে ভরা থাইল্যান্ডে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যা আগত দর্শনার্থীদের ব্যাপক আনন্দ দেয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতকালের তিনটি ঋতুতে সারা বছর পার হয়ে যায়। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ দেশের সমুদ্রসৈকত, ভূদৃশ্য ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমৃদ্ধ থাইল্যান্ড বিশ্বের পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

যেভাবে যাবেন  
ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য অবশ্যই থাইল্যান্ডের অ্যাম্বাসিতে আবেদন করতে হবে। ভিসা প্রসেসিং খুব একটা জটিল নয়। থাইল্যান্ড অ্যাম্বাসি আপনার সার্বিক দিক বিবেচনা করে আপনাকে ট্যুরিস্ট ভিসার অনুমোদন দেবে। তাছাড়া আপনি অনলাইনেও ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার জন্য গুলশানের স্টার সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় থাইল্যান্ডের অ্যাম্বাসি রয়েছে। ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য জনপ্রতি চার হাজার টাকা ভিসা ফি লাগবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র  
পাসপোর্টের বৈধতার পাশাপাশি ভ্রমণের জন্য কমপক্ষে ছয় মাস পাঁচ দিনের মেয়াদ থাকতে হবে। থাই দূতাবাস থেকে সংগৃহীত ভিসা ফরম পূরণ করতে হবে পাসপোর্টের সঙ্গে মিল রেখে। জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই কপি ফটোকপি। সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের চার কপি ছবি, ছবির আকার অবশ্যই ৪.৫, ৩.৫ সে.মি. হতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট কমপক্ষে ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেখাতে হবে। ভ্রমণের উদ্দেশ্যসংবলিত তথ্যনামা, চাকরিযুক্ত হলে কর্তৃপক্ষের ছুটির মঞ্জুরপত্র অথবা ছাত্রছাত্রী হলে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অনুমোদনপত্র প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স ও বিমানের টিকিটের বুকিং কপি দিতে হবে। বাচ্চাদের জন্য তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ মায়ের পাসপোর্টের সি ফরম যুক্ত করতে হবে (যদি প্রয়োজন হয়)।

থাকার ব্যবস্থা
এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি ট্যাক্সিতে করে আপনার নির্ধারিত স্থান বা বুকিংকৃত হোটেলে গিয়ে উঠবেন। প্রয়োজনে স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিতে পারেন। এয়ারপোর্টে থাই ম্যাপ কিনতে পাওয়া অথবা আপনার মোবাইলের ইন্টারনেটের মাধ্যমে থাইম্যাপ বের করে নিজেই গন্তব্য স্থানে অনায়াসে চলে যেতে পারেন।

যদি আগাম হোটেল বুকিং না করে থাকেন তবুও সমস্যা নাই। রাজধানী ব্যাংককে অনেক বড় বড় হোটেল রয়েছে যেখানে আপনি সহজেই আপনার পছন্দের হোটেল বেছে নিতে পারেন। থাইল্যান্ডে ট্যুরিস্টদের জন্য অনেক নামিদামি হোটেলের ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে হোটেল ভাড়া আপনার হাতের নাগালের মধ্যেই থাকবে।

কেনাকাটা করতে
ব্যাংকক সিটিতে অনেক দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের কেনাকাটা করার ব্যবস্থা। ব্যাংকক সিটিতে রাতের বেলায় হাজারও দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজপথ। সুন্দর এই শহরটিতে ঘোরাফেরা থেকে শুরু করে কেনাকাটা সবকিছুতেই রয়েছে অন্যরকম আনন্দ। বিশ্বের অনেক নামীদামী ব্রান্ডের দোকানের পাশাপাশি রয়েছে আলোকসজ্জিত শপিংমল। ফ্লোটিং মার্কেট পাতায়ার অভিনব শপিং সেন্টার।

কোথায় খাবেন 
ব্যাংককের দেশি-বিদেশি অনেক খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ব্যাংকক সিটি ও পাতায়া দ্বীপে রয়েছে নানা ধরণের খাবারের সমারোহ। যেমন, চিংড়ি, জায়ান্ট কাবাব, চিকেন, হাঁস, বিফ ও সামুদ্রিক মাছের নানারকম পদ। এসবের পাশাপাশি মেন্যুতে পাবনে ব্যাঙ, ঝিনুক, শামুক, বেবি অক্টোপাস, কাঁকড়া, সাপ, মেনকি ফড়িংও। ব্যাংকক সিটির মূল আকর্ষণ হচ্ছে টাইগার রেস্টুরেন্ট যেখানে না গেলে অনেক বড় মিস হয়ে যাবে। তবে ব্যাংকক এবং পাতায়ায় কয়েকটি বাংলা হোটেলও রয়েছে এছাড়া ব্যাংককের এরাবিয়ান গলিতেও বেশ কিছু বাংলা হোটেল রয়েছে যাতে সব ধরণের বাংলা খাবারই পাওয়া যায়। তাছাড়া পাতায় সী-বিচ এরিয়াতেও রয়েছে একাধিক বাংলা হোটেল যার বেশিরভাগই চট্রগ্রাম আর সিলেটি মালিকরা পরিচালনা করেন।

আরও যা যা দেখবেন
বলিউড, টালিউডের অনেক সিনেমার শুটিং হওয়ার পাশাপাশি পাতায়া পর্যটকদের জন্যও অন্যতম পছন্দের স্থান। মাকড়শার জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য উড়ালপুল।  নাইস সিটির বুকচিরে বয়ে গেছে চাও-ফ্রায়া নদী। রাতের মায়াবি আলোয় জলপথে শহরটাকে ঘুরে দেখতে অসাধারণ লাগে। পাবেন রিভার ক্রুজের সুবিধা। এখানে আসা পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ থাইল্যান্ডের নিশিজীবন। রাত যত বাড়তে থাকে ততই রঙিন হয় ব্যাংকক সিটি। শহরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ড্যান্স বার, ডিস্কো বার। সব জায়গাতেই পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়, পাঁচিলঘেরা চওড়া মাঠ, জলাশয়। মাটি থেকে তিন ফুট উপরে প্লাটফর্মের রেস্তোরা। গোটা রেস্তোরাটি ঘেরা বুলেটপ্রুফ কাচে যাতে যেকোনো সময় কৌতূহলি বাঘের থাবা এসে পড়তে না পারে আপনার লাঞ্চ টেবিলের কাচের দেয়ালে। হঠাৎ করে বাঘ দেখলে হয়তো ভয়ও পেতে পারেন তবে ভয়ের কিছু নেই এটা শুধুমাত্র পর্যটকদের বিনোদনের জন্য মজা করে করা হয়।

থাই সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আন্তরিক আথিতেয়তার স্বাদ

ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের তথ্য সবসময় আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। যারা ভ্রমণ ভালোবাসেন তাদের প্রায় সবাই নিজের দেশের পাশাপাশি বাইরের দেশগুলোর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে চান। এশিয়া মহাদেশের পর্যটকদের জন্য শুধু নয়, বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের কাছে থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য অন্যতম পছন্দের দেশ। থাইল্যান্ড একমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্র যা যুদ্ধের সময় ছাড়া কখনও কোনো বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। মূলত সাগর তীরবর্তী এই দেশটির মধ্যভাগে সমভূমি, পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিক ঘিরে রেখেছে পাহাড় ও মালভূমি। পশ্চিমের পর্বতশ্রেণী দক্ষিণ দিকে মালয় উপদ্বীপে প্রসারিত হয়েছে। সমস্ত থাইল্যান্ডজুড়েই রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।

হৃদয় দেবনাথ

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com