দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই বিশ্বের অন্যতম পর্যটনের দেশ মালদ্বীপ। ভারত মহাসাগর বেষ্টিত অপরূপ সুন্দর এই দেশ ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম প্রিয় স্থান।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপ ভ্রমণ তুলনামূলক কিছুটা ব্যয়বহুল সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে মালদ্বীপ মানেই কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ ধারণাটা পুরোপুরি সঠিক নয়। মাঝারি ব্যয়ে পরিকল্পনা করে মালদ্বীপ ঘুরে আসা যায়।
মালদ্বীপ ভ্রমণ না করা অনেক পর্যটকের ধারণা মালদ্বীপ মানেই হোটেলে কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয়। রিসোর্টে থাকলে এক রাতে গুণতে হয় ১০০ থেকে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত।
তবে রাজধানী মালে শহরে রয়েছে স্বল্প মূল্যের হোটেলেও। ৩০-৫০ ডলারের মধ্যে ডাবল/ফ্যামিলি বেডের রুম পাওয়া যায়। এর চেয়েও কম ভাড়ার হোটেল রয়েছে কিছু। মান কিছুটা কম হলেও স্বল্প-মধ্যম আয়ের ভ্রমণকারীদের জন্য হোটেলগুলো চমৎকার। শিক্ষা সফর করা ব্যক্তিরা এমন হোটেল বিবেচনা করতে পারেন। প্রায় সব হোটেলের মালিক মালদ্বীপিয়ান হলেও অধিকাংশ হোটেলের ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন বাংলাদেশিরা।
খাবার-দাবারে অন্তত বাংলাদেশিদের তেমন কোনো সমস্যাই নেই। মালেতে বাংলাদেশি হোটেল আছে কয়েকটি। গরুর মাংস থেকে ভাত- দেশি অনেক খাবারই পাওয়া যায় মালদ্বীপের হোটেলগুলোতে। বাংলাদেশের গরু মালদ্বীপের রুপিতে ৪০, ভারতের গরুর মাংস ৩৫, বাংলার রুই মাছ ৩০-৩৫ রুপি।
মালদ্বীপের আয়তনে ভূখণ্ড খুবই কম। খাদ্য-ফসলের জন্য মালদ্বীপ অনেকটাই নির্ভরশীল শ্রীলঙ্কা, ভারত ও বাংলাদেশের ওপর। মালদ্বীপের খাবারের স্বাদ নিতে হলে সামুদ্রিক মাছই শ্রেয়। সামুদ্রিক মাছ ভেদে দাম ৫০-১০০ রুপি। মালদ্বীপের এক রুপি বাংলাদেশের পাঁচ টাকার মতো।
মালে খুবই ছোট্ট শহর। মালদ্বীপের অধিবাসীদের প্রায় সবারই স্কুটি বা বাইক রয়েছে। পর্যটকরা মালে শহরে যানবাহন হিসেবে ব্যবহার করেন ট্যাক্সি। মালে শহরের যেই জায়গায় নামেন ৩০ রুপি ভাড়া দিতে হবে। রাজধানী মালেকে ব্রিজ দিয়ে হনুমালের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। মালে থেকে হনুমালেতে সাগর পাড়ি দিয়েও যাওয়া যায় আবার ব্রিজ দিয়েও যাওয়া যায়। ব্রিজ দিয়ে গেলে ট্যাক্সিতে পড়বে ৭৫ রুপি আর বোটে গেলে দশ রুপি। হনুমালে মালদ্বীপের নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠছে। ঢাকার বারিধারার মতো আবাসিক এলাকা। বড় বড় বিল্ডিং, বিভিন্ন দ্বীপ থেকে হনুমালেতে অনেক ফ্ল্যাট কিনছেন।
ছোট্ট শহর মালে এক-দুই দিনেই ঘুরে দেখা যায়। মালের বাইরে অন্য কোনো দ্বীপে যেতে হলে স্পিডবোট, স্টিমার প্রধান মাধ্যম। সেক্ষেত্রে দ্বীপ ভেদে স্পিডবোটে আসা-যাওয়ার ভাড়া ২০০-৮০০ রুপি।
অনেক প্রবাসী পর্যটক মালদ্বীপ বিমানবন্দরে নেমেই স্পিডবোটে রিসোর্টে যান। যারা অনেক অর্থশালী তারা বিমানে নেমে আবার ডমেস্টিক ফ্লাইটে বড় বড় রিসোর্টে যান। মালদ্বীপের মূল সৌন্দর্য দেখতে হলে রিসোর্টে যেতে হয়। রিসোর্ট একটু বেশি ব্যয়বহুল। একদিন-রাত রিসোর্টে কাটাতে হলে সর্বনিম্ন ২০০ ডলার গুণতে হবে। এরপর রিসোর্ট ভেদে কয়েক হাজার ডলারও ব্যয় হতে পারে এক রাতের জন্য।
মালদ্বীপের আয়তনের অধিকাংশই ভারত মহাসাগর জুড়ে। মালদ্বীপের বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গও এই মহাসাগর। ভ্রমণপিপাসুদের অনেকেই সার্ফিং, বোটিং করতে পারেন ভারত মহাসাগরের বুকে। এজন্য খুব বেশি অর্থ গুণতে হয় না।
এক ঘণ্টা সার্ফিংয়ের জন্য ৩০-৪০ রুপি খরচ হবে। সার্ফিং, বোটিংয়ের সঙ্গে কয়েকটি রাইড নিলে প্যাকেজে ২০০-৩০০ রুপির মধ্যেও সম্ভব। মালদ্বীপের আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় প্যারাগ্লেডিং এবং সাবমেরিন।
ভ্রমণপ্রেমীরা অনিন্দ্য সুন্দর এই দেশটিতে ঘুরে আসতে পারেন বছরের যেকোনো সময়। চমৎকার আতিথেয়তা, মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আর অপার সৌন্দর্যের এই দেশ স্মৃতিতে রেখে দেবে একরাশ মুগ্ধতা।