মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের শহর লাস ভেগাস। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এটি প্রমোদ নগরী হিসেবে পরিচিত। মূলত জুয়া, কেনাকাটা, ভোজনবিলাস, বিনোদন এবং নৈশ-প্রমোদের জন্য বিখ্যাত। বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা মনোরঞ্জনের জন্যই এখানে আসেন। এটি আমেরিকার ২৮তম জনবহুল নগরী। লাস ভেগাস উপত্যকা সামগ্রিকভাবে নেভাডার শীর্ষস্থানীয় আর্থিক, বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে। কিন্তু এই শহরটির আরও একটি পরিচয় রয়েছে। এটিকে ‘পাপের শহর’ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু কেন লাস ভেগাসকে পাপের শহর বলা হয়?
স্প্যানিশ ভাষায় লাস ভেগাস অর্থ তৃণভূমি। শুরুর দিকে এই শহর অপরাধীদের তৃণভূমিতে পরিণত হয়েছিল। ১৯০৫ সালে এই শহরের জন্ম হয়। তবে নগরের মর্যাদা পায় ১৯১১ সালে। ৫০ এর দশকে এটি বদলে যেতে শুরু করে। নিউইয়র্ক ও শিকাগোর মাফিয়ারা দেশটির মোহাভি মরুভূমিতে কালো টাকা সাদা করার জন্য এবং ব্যবসা করার জন্য আসে। তখন এই শহরে কোনো আইন না থাকায় তারা অপরাধমূলক কাজগুলো এখানেই করত।
শিকাগোর মাফিয়ারা লাস ভেগাসে যাওয়ার আগেই সেখানে আস্তানা গড়ে নিউইয়র্কের মাফিয়ারা। তারা ক্যাসিনো ও হোটেল ব্যবসা থেকে বছরে প্রায় ৫ কোটি ডলার উপার্জন করত। এই দুই মাফিয়া গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কারণে তারা একসাথে সেখানে তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে শুরু করে। ফলে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ লাস ভেগাসে এসে বৈধ সম্পত্তিতে পরিণত হতে থাকে। এর ফলে মানি লন্ডারিং এবং অর্থপাচারের নগরীতে পরিণত হয় লাস ভেগাস। এই দুই মাফিয়া গোষ্ঠী সেখানে চমকপ্রদ বিভিন্ন ভবন, ক্যাসিনো ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বহু বড় বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।
ওই সময় প্রায় ৮০ লক্ষেরও বেশি লোক মরুভূমিতে গড়ে উঠা নতুন এই শহরে ঘুরতে আসে। এই বিপুল পরিমাণ পর্যটক লাস ভেগাসের ক্যাসিনোতে প্রায় ২০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে। তখন মাফিয়ারা জুয়ার পাশাপাশি সকল ধর্মের বিনোদনের ব্যবস্থা করে। লোক সমাগম আরও বাড়াতে হলিউডের ওই সময়ের বড় বড় তারকাদের আমন্ত্রণ জানায় ক্যাসিনো গুলোতে। আর এভাবে লাস ভেগাস হলিউড তারকাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। একসময় লাস ভেগাসের জুয়ার ব্যবসা তৎকালীন সময়ের খনিজ তেল শিল্পের চেয়েও অধিক মুনাফা অর্জন করতে শুরু করে।
লাস ভেগাস শহরের আসল রূপ দেখা যায় রাতে। প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের এই শহর যেন কখনোই রাতে ঘুমায় না। প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটিরও বেশি লোক এখানে ভ্রমণের জন্য আসে। বর্তমানে জুয়া খেলার জন্য বড় বড় ক্যাসিনো এবং বিলাসবহুল হোটেলের অধিকাংশই এই শহরে অবস্থিত। প্রাপ্তবয়স্ক বিনোদনের ‘তীর্থস্থান’ বলে থাকেন অনেকেই। জুয়া, পতিতাবৃত্তি ও অর্থপাচারের মাধ্যমে নিউইয়র্ক ও শিকাগোর মাফিয়াদের হাতে গড়ে ওঠে এই ‘অপরাধের শহর’। আর এভাবেই লাস ভেগাস ‘পাপের শহর’ হিসেবে পরিচিতি পায়।