‘মাই নেম ইজ বন্ড। জেমস বন্ড।’
ব্রিটিশ সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের সুদর্শন ও চৌকস গুপ্তচর জেমস বন্ডের জন্ম নভেম্বর মাসে বলে ধরে নেওয়া হয়। যদিও এ নিয়ে খানিক বিতর্ক আছে। জন পিয়ারসনের কল্পিত জীবনী ‘জেমস বন্ড: দ্য অথরাইজড বায়োগ্রাফি অব ০০৭ ’-এ বন্ডের জন্মতারিখ ১১ নভেম্বর ১৯২০ হিসেবে লেখা হয়েছে। আবার বন্ড বিশেষজ্ঞ জন গ্রিসওল্ড বলেছেন, বন্ডের জন্মতারিখ ১১ নভেম্বর ১৯২১। তবে বন্ডের জন্মসাল পাওয়া যায় চারটি। এগুলো হলো ১৯১৭, ১৯২০, ১৯২১ ও ১৯২৪। জন্ম ১৯২৪ সাল ধরলে এ বছর বন্ডের জন্মশতবর্ষ। আর অন্য সালগুলো ধরলে হয় ১০৩, ১০৪ ও ১০৭ বছর।
এত রহস্যঘেরা যাঁর জন্মখণ্ড, তাঁর জীবন যে রোমাঞ্চকর হবে, সেটা তো বলাই বাহুল্য। বন্ডের রোমাঞ্চকর জীবনের উল্লেখযোগ্য বিষয় নিঃসন্দেহে ভ্রমণ। বিভিন্ন সূত্রে দেখা যায়, জেমস বন্ড কৈশোরকাল থেকে ভ্রমণ করছেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি চলে গিয়েছিলেন ফ্রান্সে। বন্ড সিরিজের ২৫টি চলচ্চিত্রে বন্ডকে অসংখ্য দেশে ভ্রমণ করতে দেখা যায়। এই ভ্রমণ কেবল তাঁর মিশনকে আন্তর্জাতিকই করেনি, করেছে উত্তেজনাময় ও চিত্তাকর্ষক।
ব্রিটিশ এজেন্ট হিসেবে বন্ড বেশি ভ্রমণ করেছেন ইউরোপ। বেশ কয়েকটি আইকনিক দেশ জেমস বন্ডের রহস্যময় বিচরণক্ষেত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। এগুলোর মধ্যে আছে যুক্তরাজ্য, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও জার্মানি।
এসব দেশের প্রেক্ষাপটে যেসব চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছিল, সেগুলো যথাক্রমে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ’ (১৯৯৯), ‘স্কাইফল’ (২০১২), ‘মুনরেকার’ (১৯৭৯), ‘ক্যাসিনো রয়্যাল’ (২০০৬), ‘স্পেক্টার’ (২০১৫), ‘ফর ইয়োর আইজ অনলি’ (১৯৮১), ‘আ ভিউ টু আ কিল’ (১৯৮৫), ‘থান্ডারবল’ (১৯৬৫), ‘অন হার ম্যাজেস্টি’ (১৯৬৯), ‘ডাই অ্যানাদার ডে’ (২০০২), ‘ফ্রম রাশিয়া উইদ লাভ’ (১৯৬৩), ‘গোল্ডেন আই’ (১৯৯৫), ‘অক্টোপুসি’ (১৯৮৩), ‘টুমরো নেভার ডাইস’ (১৯৯৭)। বন্ড শুধু যে ইউরোপ বা আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বিলাসী জীবন উপভোগ আর অ্যাকশন করে কাটিয়েছেন, তা নয়। এশিয়াতেও ছিল তাঁর রহস্যময় কর্মকাণ্ড।
জাপান
বন্ড সিরিজের ষাটের দশকের ‘ইউ অনলি লিভ টোয়াইস’ (১৯৬৭) চলচ্চিত্রে বন্ডকে জাপান ভ্রমণ করতে দেখা যায়। সেখানে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন ভিলেন ব্লোফেল্ডের। প্রাচীন ঐতিহ্য আর আধুনিক প্রযুক্তির মিশেলে ষাটের দশকের জাপানকে ধরে রাখা হয়েছে এই সিনেমায়।
জেমস বন্ড সিরিজের তিনটি বই। ছবি: সংগৃহীত
থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ড ছিল ‘দ্য ম্যান উইদ দ্য গোল্ডেন গান’ (১৯৭৪) ছবির পটভূমি। সেখানে বন্ড ভাড়াটে খুনি স্কারামাঙ্গার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। ছবিটি বিশেষভাবে বিখ্যাত চুনাপাথর অনন্যতা আর ফাং নাগা উপসাগরের দৃশ্যের কারণে।
চীন
বন্ডের চীন সফর ছিল সংক্ষিপ্ত। ২০১২ সালের ছবি ‘স্কাইফল’-এ সাংহাইয়ের একটি স্মরণীয় দৃশ্য রয়েছে। সেই দৃশ্য বন্ড একজন আততায়ীকে তাড়া করে। সেই অ্যাকশন দৃশ্যে সাংহাইয়ের আকাশচুম্বী দালানগুলো দারুণ দৃশ্য তৈরি করেছিল। এই চমকপ্রদ দৃশ্য ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে তৈরি আধুনিক চীনকে তুলে ধরেছিল।
ভারত
‘অক্টোপুসি’ ছবিতে জেমস বন্ড ভারতের উদয়পুর ভ্রমণ করেন। গুপ্তচরবৃত্তিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত তিনি। কিন্তু উদয়পুরের প্রাসাদ, প্রাণবন্ত স্থানীয় বাজার এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সেই উচ্চ প্রযুক্তির সঙ্গে বৈপরীত্য তৈরি করায় তা হয়েছিল দারুণ হাস্যরস। সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল উদয়পুরের প্রাকৃতিক দৃশ্য।
হংকং
‘দ্য ম্যান উইদ দ্য গোল্ডেন গান’সহ (১৯৭৪) আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে হংকংয়ের ব্যস্ত রাস্তা এবং ঝলমলে নাইট লাইফ নিখুঁতভাবে তুলে ধরা হয়েছিল।
মরুভূমিতেও গুপ্তচরবৃত্তি আর রহস্যের কিনারা করেছিলেন জেমস বন্ড। মধ্যপ্রাচ্যের বৈশ্বিক রাজনীতিতে কৌশলগত গুরুত্ব পাওয়ার কারণে বন্ডের জন্য মধ্যপ্রাচ্য ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।
উদয়পুর, ভারত। ‘অক্টোপুসি’ (১৯৮৩) সিনেমায় এ শহরকে দেখানো হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
তুরস্ক
সেই ষাটের দশকে ‘ফ্রম রাশিয়া উইদ লাভ’ (১৯৬৩) এবং ২০১২ সালে ‘স্কাইফল’ চলচ্চিত্রে ইস্তাম্বুলকে দেখানো হয়েছিল। এ শহরের ঐতিহাসিক পূর্ব-পশ্চিম সেতুবন্ধন, পুরোনো বাজার, প্রকৃতি আর মানুষ দেখা গিয়েছিল সেই সিনেমাগুলোতে।
মিসর
১৯৭৭ সালের ‘দ্য স্পাই হু লাভড মি’ ছবিতে বন্ড মিসর ভ্রমণ করেছিলেন। সেই সিনেমায় দেখা গিয়েছিল সত্তর দশকের পিরামিড আর মরুভূমি।
জেমস বন্ড চরিত্রটি ২৫টির বেশি চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে দর্শকদের নিয়ে গেছে প্রায় প্রতিটি মহাদেশে। দর্শক হিসেবে আমরা করেছি মানসভ্রমণ। বিভিন্ন সময়ে নানা দেশের দৃশ্য ধরা আছে বন্ড সিরিজের সিনেমাগুলোতে। সময় ধরে ধরে যদি দেখা যায়, তাহলে সেগুলো এক দারুণ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেয়। কারণ, চলচ্চিত্রগুলো বিখ্যাতই হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক পরিবেশের জন্য। সঙ্গে গ্ল্যামার আর হিরোইজম তো রয়েছেই।