দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
আসছে অগ্রহায়ণ মাস, শীতের শুরু। উত্তরে জেঁকে না বসলেও শীত এসেছে। হিমালয়কন্যা পঞ্চগড় ভ্রমণের উপযুক্ত সময় এটি।
শীতের জনপদ পঞ্চগড় খ্যাতি পেয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট দিয়ে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে তেঁতুলিয়ায় বসে দেখা যাবে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ এ পর্বতশৃঙ্গের নৈসর্গিক দৃশ্য। পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে দেখা যাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাই বেশির ভাগ মানুষ ভিড় জমায় তেঁতুলিয়ায়। মহানন্দাতীরের এই উপজেলা থেকে স্পষ্ট দেখা যায় চূড়াটি; সঙ্গে রাতের শিলিগুড়ি শহরও।
এখন জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে এখানকার চা-বাগানগুলো। এ জেলার সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলায় বেশি দেখা যায় এসব বাগান। শিশিরে ভেজা চা-গাছের মায়াময় দৃশ্য আপনাকে আটকে দেবে খানিক সময় হলেও। চা-বাগানগুলোর সুনসান নীরব রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কাটিয়ে দেওয়া যায় পুরো দিন।
ছবি: লেখক
দেশের সবচেয়ে উত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদীর তীরে আছে বেশ প্রাচীন ডাকবাংলো। এটি তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো নামে পরিচিত। এখান থেকে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ও স্থলবন্দর খুব কাছে। ঘুরে আসতে পারেন সহজে। এই স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটানে যাওয়া যায়। তবে যেতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
এসব দেখে তেঁতুলিয়ায় দুই দিন কাটিয়ে দিতে পারেন। এরপর যেতে পারেন মির্জাপুর শাহি মসজিদ দেখতে। মোগল স্থাপনাটি পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। এখানে রয়েছে বারআউলিয়ার মাজার। এখান থেকে যেতে পারেন বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের প্রাচীন বোদেশ্বরী মন্দিরে। আরও দেখতে পারেন দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রাচীন মন্দির গোলকধাম। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত স্থাপনা।
ছবি: লেখক
এরপর পঞ্চগড়ে ফিরে খানিক বিশ্রাম নিয়ে ধীরেসুস্থে দেখতে যেতে পারেন ভিতরগড় দুর্গনগরী। প্রায় ২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার ভিতরগড়ে মহারাজার বাড়ি, কাছারি, দিঘি ইত্যাদি দেখা যাবে। এটি পঞ্চগড় শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত।
বাংলাদেশের একমাত্র রকস মিউজিয়াম পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে। পোড়ামাটি ও ইট দিয়ে তৈরি মূর্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র রয়েছে এই জাদুঘরে।
ছবি: লেখক
এর বাইরে রয়েছে উত্তরবঙ্গের নিজস্ব প্রকৃতি। হেমন্তের শেষ ও শীতের শুরুতে এখন এই অঞ্চলে মাঠভর্তি ধান। চারদিকে হলুদ ও সবুজ রঙের বাহার। ভোরে দেখা যাবে, হলুদ রঙের ধানের শিষে লেগে আছে শিশির। কোথাও কোথাও দেখা যাবে, ধানের আঁটি নিয়ে পথ চলেছেন কৃষক। ধান কেটে নেওয়া জমিতে জ্বলছে নাড়ার আগুন। এটি উত্তরবঙ্গের সিগনেচার দৃশ্য।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার উত্তরের পঞ্চগড়ে যাওয়া যায় বাস কিংবা ট্রেনে। ১০-১২ ঘণ্টা লাগবে যেতে। এ ছাড়া ফ্লাইটে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরে নেমে, সেখান থেকে পঞ্চগড় যাওয়া যায়। কমলাপুর থেকে আন্তনগর একতা, দ্রুতযান ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন যায় পঞ্চগড় পর্যন্ত। জনপ্রতি ভাড়া ৬৯৫ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। এ ছাড়া গাবতলী থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়ে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে। ভাড়া পড়বে এসি ও নন-এসি ৮৫০ থেকে ২ হাজার ৫০ টাকা। পঞ্চগড়ে ঘুরতে পারবেন বাস, অটোরিকশা, প্রাইভেট কারে।
কোথায় থাকবেন
পঞ্চগড় শহরে বেশ কয়েকটি ভালো হোটেল ও সরকারি গেস্টহাউস ছাড়াও রয়েছে এনজিও গেস্টহাউস। আবাসিক হোটেলের নন-এসি রুম পাওয়া যাবে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায় এবং এসি রুম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এ ছাড়া মহানন্দা নদীর কাছে রয়েছে তিনটি ডাকবাংলো। তেঁতুলিয়া উপজেলা বা জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সেগুলোতে থাকা যাবে।