ঠিক সামনে সাগর। ভাটায় ভেসে ওঠা ছোট্ট আইল্যান্ড। তীরে ভিড়ানো সাম্পান। বালির ওপর বিছানা পেতে যদি বসে থাকা যায়, তখন প্রকৃতি আপনার মাঝে, নাকি আপনিই প্রকৃতির মাঝে, সেটা বুঝে উঠতে বেশ ঘোরেই পড়তে হতে পারে।
হয়তো মনের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসবে- দারুণ, এইতো প্রকৃতি নিবাস। একপাশে সাগর, আরেকপাশে পাহাড়, মাঝখানে মেরিন ড্রাইভ রোড, এর মাঝে অবস্থিত এমন এক প্রকৃতি নিবাস ‘মারমেইড বিচ রিসোর্ট’।
সেখানে আরামদায়ক খাটে খোলামেলা পরিবেশে সমুদ্রে তাকিয়ে একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা মাত্রই বেশ ক’টি উচ্ছ্বাসমাখা কমেন্ট পড়ে। এরমধ্যে একটি ছিল- ‘সিমস লাইক দেয়ার ইজ নো নিড টু গো অ্যাবরোড ফর সাচ প্লেজার’।
এমন আনন্দানুভূতিতে ডুবে মধ্য দুপুরে যখন মারমেইডের ভেতর দিয়ে হাঁটাহাঁটি চলছিল, তখন চোখে পড়ছিল প্রকৃতির অনিন্দ্য আল্পনা। রোদ এসে খেলছে গাছের পাতায় পাতায়। রিসোর্টের ভেতরের সরু সুপাটি রাস্তায় গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে পড়া আলোর রেখায় অদ্ভুত আল্পনা ফুটে উঠছে।
সেই ছবি ফেসবুকে দেখে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ন্যশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ পারভেজ আহমেদ চৌধুরী কমেন্ট করেন, ‘চমৎকার, এর চেয়ে ভালো পছন্দের জায়গা আর কী হতে পারে? চলো বাংলাদেশ!’
কক্সবাজারের পর্যটন নিয়ে দীর্ঘ দিনের কাজের অভিজ্ঞতা আছে তার। পারভেজ আহমেদ চৌধুরী মনে করেন, আকাশমুখী বিল্ডিং করে সৌন্দর্য বাড়ানো যায় না। কক্সবাজারের সৈকত কলাতলী, সুগন্ধা আর লাবনী পয়েন্টের পেছনে তাকালে শুধু বিল্ডিং আর বিল্ডিং দেখা যায়। অথচ নিয়ম হচ্ছে, কোনো সৈকতের পাশে কখনো ট্রি-লেভেলের ওপরে ভবন তোলা যাবে না।
‘এক্ষেত্রে মারমেইড বিচ রিসোর্টকে ‘এ প্লাস’ দিতে হবে। এখানে বিল্ডিং নেই। কিন্ত বিস্ময় জাগানিয়া সৌন্দর্যের কোনো অভাব নেই।’
এই রিসোর্টে যারা আসেন তাদের প্রায় সবাই অন্যদের পরামর্শ দেন, অভাবনীয় প্রকৃতির কোলে নিজের ছুটির সময়টা কাটাতে ছুটে আসতে পারেন এই মারমেইডে। সাগরের কোলে বালির ওপরে বিছানা পেতে মাটির আদলের কক্ষ আপনাকে দারুণ আতিথেয়তায় মুগ্ধ করে তুলবে। এখানে দারুণ দারুণ সব খাবারও পাবেন। আছে চিংড়ি, অক্টোপাস, কাঁকড়া আর সামুদ্রিক মাছের বাহারি আয়োজন।
এ বিষয়ে মারমেইড বিচ রিসোর্টের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান বলছিলেন, প্রকৃতিকে অবিকল প্রকৃতির মতো করে রাখার পরিকল্পনা করেন রিসোর্টের চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন খান। আর তার পরিকল্পনা স্থাপত্য শৈলীতে সাজিয়ে তোলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিসুল হক চৌধুরী।
মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, পর্যটন নগরী হওয়া সত্ত্বেও কক্সবাজার খুবই অগোছালোভাবে এগোচ্ছিলো। তবে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
মারমেইড বিচ রিসোর্টের এ ম্যানেজার বলেন, প্রতিবছরের ছুটির দিনগুলোতে আমাদের দেশের বেশ কিছু এনজিওতে কর্মরত বিদেশিরা অবসর কাটাতে চলে যান থাইল্যান্ড, মালেশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতে। অথচ এখানে যে একপাশে পাহাড়, আরেকদিকে সাগর, মাঝখানে মেরিন ড্রাইভ রোড আছে, তা পৃথিবীর কোথাও নেই। এখন আমরা যদি এটাকে ঠিকমতো তুলে ধরতে পারি, তাহলে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য হবে বাংলাদেশ।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, রিসোর্টে রয়েছে ৮টি বাংলো (প্রতি রাত ১১ হাজার টাকা), ৪টি ভিলা (প্রতিরাত ১৪ হাজার ৯৪০ টাকা) ও দু’টি ফ্যামিলি কটেজ (১২ হাজার টাকা)। এতে রয়েছে কাপল (১২ হাজার ৫০০ থেকে ২৯ হাজার ৯০০) এবং হানিমুন প্যাকেজও। আছে চারটি রেস্তোরাঁও। নির্মাণ কাজ চলছে কনফারেন্স হলের।
মনোমুগ্ধকর কিছু অ্যাডভেঞ্চার আয়োজনও আছে মারমেইড বিচ রিসোর্টে। এরমধ্যে জেট স্কি রাইডিং, কায়াক রাইডিং, বিচ বাইকিং, সার্ফিং প্রশিক্ষণ, পেইন্টিং ক্লাস, লাইভ বারবি কিউ, বিচে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার, হিল ট্র্যাকিং, ডিপ সি ট্রিপ উল্লেখযোগ্য।
আসতে হবে যেভাবে
ঢাকা থেকে কক্সবাজার সড়ক ও আকাশপথ দু’ভাবেই আসা যায়। এরমধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। এ ফ্লাইটে গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগবে আধঘণ্টার চেয়ে একটু বেশি সময়। আছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যাওয়ার ব্যবস্থা। আর কক্সবাজার থেকে মারমেইড বিচ রিসোর্টের দূরত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার। এই নৈসর্গিক রিসোর্টে বুকিং বা অন্য যোগাযোগের জন্য ভিজিট করা যেতে পারে এর ওয়েবসাইট www.mermaidbeachresort.net।