1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

নুহাশ পল্লীতে কীভাবে যাবেন

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

নাগরিক জীবনের ব্যস্ততার মাঝেই নিজেকে একটু সময় দিতে যেতে পারেন বিভিন্ন অবকাশকেন্দ্রে। কর্মব্যস্ততা কিংবা ছুটির ঝামেলায় দূরে কোথাও যাওয়া যদি কষ্টসাধ্য বিষয় হয়, তাহলে একদিনেই ঢাকার অদূরে যেসব জায়গা থেকে ঘুরে আসতে পারেন তার মধ্যে অন্যতম নুহাশ পল্লী।

নুহাশ পল্লী ঢাকার অদূরে গাজীপুরে অবস্থিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বাগানবাড়ি। পারিবারিক বিনোদনকেন্দ্র ও শুটিংস্পট হিসেবে এটি বেশ পরিচিত হলেও এখানে আছে ২৫০ প্রজাতির দুর্লভ ওষুধি, মসলা জাতীয়, ফলজ ও বনজ গাছ।

গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পিরুজালী গ্রামে ১৯৯৭ সালে হুমায়ূন আহমেদ নুহাশ পল্লী গড়ে তোলেন। ছেলে নুহাশ হুমায়ূনের নামে রাখা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ৪০ বিঘার এ বাগান বাড়িটি হুমায়ূন আহমেদ মনের মতো করে নিজস্ব স্বপ্নজগত করে তোলার প্রয়াস রেখেছেন।

পিচঢালা রাস্তা থেকে নেমে রাঙা মাটির অমসৃণ পথে গজার বনের ভেতর দিয়ে যেতে হবে নুহাশ পল্লীতে। নুহাশ পল্লীর মূল ফটক পার হলেই চোখে পড়বে সবুজ ঘাসের গালিচা। যা দেখলে যে কারো চোখ ও মন দুই জুড়িয়ে যাবে। মাঠ ধরে সামনে এগিয়ে হাতের বাঁ-পাশে শেফালি গাছের নিচে একটি নামাজের ঘর আছে।

নুহাশ পল্লীতে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?

এর পাশে তিনটি পুরোনো লিচুগাছ নিয়ে একটি ছোট্ট বাগান আছে। লিচু বাগানের উত্তর পাশে জাম বাগান আর দক্ষিণে আম বাগান। সবুজ মাঠের মাঝখানে একটি বড় গাছের উপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। শুটিংয়ের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ঘরগুলো অবাক করবে আপনাকে।

মাঠের এক কোণে মাটি থেকে প্রায় দশ ফুট ওপরে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ছোট পাখির খামার। যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির কবুতরসহ আছে অসংখ্য পাখি। মাঠের পূর্বদিকে আছে খেজুর বাগান। বাগানের একপাশে অত্যাধুনিক অবকাঠামোর বাংলো ‘বৃষ্টি বিলাস’।

নুহাশ পল্লীতে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?

দুর্লভসব ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে যে উদ্যান তৈরি করা হয়েছে। উদ্যানের সবুজ শ্যাওলাযুক্ত মাটি যেন আরও বেশি সবুজ করে তুলেছে এই আঙিনা। অধিকাংশ গাছের গায়ে লাগানো আছে পরিচিতি ফলক। তবে অযত্ন কিংবা অবহেলায় অনেক গাছেই এখন আর পরিচিতি ফলক চোখে পড়ে না।

উদ্যানের পাশেই সরোবরে পাথরের মৎস্যকন্যা আর রাক্ষস। এছাড়া এখানে দেখা মিলবে হুমায়ূন আহমেদের আবক্ষ মূর্তি, ডিম্বাকৃতির সুইমিং পুল, পদ্মপুকুর, প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের অনুকীর্তি, দাবার গুটির প্রতিকৃতিসহ নানা রকম দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপত্য। এছাড়া নুহাশ পল্লীর বিভিন্ন স্থানে আছে বাচ্চাদের খেলাধুলার অসংখ্য সামগ্রী।

নুহাশ পল্লীতে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?

নুহাশ পল্লীর অন্যতম আকর্ষণ ‘দিঘি লীলাবতী’। সেখানে নামফলকে খুদাই করে লেখা আছে বিশ্বকবির লেখা- ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছে নয়নে নয়ন’। লীলাবতীর’র চারপাশজুড়ে নানা রকমের গাছ। পুকুরের মাঝখানে একটি দ্বীপ। সেখানে কতগুলো নারকেল গাছ। একসময় এখানে বাঁশের সাঁকো ছিল দ্বীপ সদৃশ জায়গায় যাওয়ার জন্য।

সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে আর সাঁকোটি চোখে পড়েনি। যার কারণে পর্যটকরা দূর থেকেই দ্বীপটির সৌন্দর্য উপভোগ করেন। ‘ভূত বিলাস’ বাংলোর অবস্থান শান বাঁধানো ঘাটের পাশেই। দিঘির আরেকপাশে, ভেষজ উদ্যানের পরে সীমানা প্রাচীরের কাছাকাছি চোখে পড়বে আরেক মাটির ঘরের।

নুহাশ পল্লীতে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?

নুহাশ পল্লীর মূল ফটকের সামনে স্থানীয়দের উদ্যোগে করা হয়েছে ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থা। স্বল্প টাকার বিনিময় দর্শনার্থীরা ঘোড়ায় চড়ার আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। পাশাপাশি ছোট ছোট দোকানে বিভিন্ন শৌখিন জিনিসিপত্র সাজিয়ে বসে আছে দোকানিরা। কলা, পেঁপেসহ নিজ বাড়িতে আবাদ করা মৌসুমি ফলমূলও বিক্রি করতে দেখা যায় অনেককে।

কীভাবে যাবেন?

রাজধানী থেকে যেতে চাইলে গাজীপুরগামী যে কোনো বাসে চড়ে বসতে হবে। আর নামবেন গাজীপুরের চৌরাস্তায়। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত নুহাশপল্লী।

নুহাশ পল্লীতে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?

গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে পেয়ে যাবেন হোতাপাড়া যাওয়ার বাস। এই বাসে করে চলে যাবেন হোতাপাড়া বাজার। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে হোতাপাড়া বাজার পর্যন্ত বাস ভাড়া ৪০ টাকা। তারপর সেখান থেকে রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইক বা সিএনজি করে সোজা নুহাশ পল্লী চলে যাবেন।

হুড বিহীন অটোরিকশায় একা কিংবা দুজনে ১২০-১৫০ টাকায় যেতে পারবেন নুহাশ পল্লীতে। এছাড়া নিজস্ব গাড়িতে করে নুহাশ পল্লীতে যেতে পারেন। যেকোনো যানবাহন নিয়ে গেলে নুহাশ পল্লীর বাইরে নিজ দায়িত্বে পার্কিং করতে হবে।

নুহাশ পল্লীতে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?

খাবেন কোথায়?

নুহাশ পল্লীর ভেতরে খাবারের তেমন সুব্যবস্থা নেই। মূল ফটকের সামনে উন্মুক্ত খাবারের হোটেল থাকলেও দাম তুলনামূলক বেশি। ভেতরে ব্যক্তি উদ্যোগে এক মেনুর খাবার (ভাত+মুরগী+ভর্তা/সবজি) পাওয়া যায়। যারা দূর থেকে নুহাশ পল্লী ঘুরতে যাবেন, তারা সঙ্গে পর্যাপ্ত খাবার নিয়ে যাবেন। বাইরে থেকে নেওয়া খাবার নিয়ে প্রবেশে কোনো বাঁধা নেই।

থাকবেন কোথায়?

নুহাশ পল্লীতে থাকার কোনো ব্যবস্থা নাই। সকাল ৮টা থেকে মাগরিবের আজান পর্যন্ত ভেতরে অবস্থান করা যাবে। একদিনে ঘুরে দেখার এই স্পটে ঢাকা থেকে সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসা যায়। ঢাকার বাইরে থেকে আসলে গাজীপুর চৌরাস্তায় যেকোনো হোটেলে থাকতে পারেন।

নুহাশ পল্লীতে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?

নুহাশ পল্লীতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে বৃষ্টিবিলাস নামে একটি বাংলো আছে। এছাড়া ভূত বিলাসেও দিনের অংশ সময় কাটানোর ব্যবস্থা আছে, তবে এখানে ভাড়া তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা।

পল্লীর একপাশে ছায়া সুনিবিড় লিচু গাছের নিচে শায়িত আছেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। কবর জিয়ারতের জন্য মূল ফটকের বাইরে বাম দিয়ে সমাধির জন্য আলাদা আরেকটি ফটক আছে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা অবধি যে কেউ সেই ফটক দিয়ে ঢুকে কবর জিয়ারত করতে পারবেন।

নুহাশ পল্লীতে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?

এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নুহাশ পল্লী সকল দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন খোলা থাকে। টিকিট মূল্য ২০০টাকা। তবে ১০ বছরের কম বয়সীদের জন্য টিকিট প্রয়োজন নেই। ডিসেম্বর থেকে মার্চ শুধু পিকনিকের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। এ সময় সাধারণ দর্শনার্থী প্রবেশের সুযোগ নেই। তবে ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী ও ১৯ জুলাই মৃত্যুবার্ষিকীতে নুহাশ পল্লী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।

নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, নুহাশ পল্লী থেকে অর্জিত অর্থের পুরোটাই পল্লীর রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মচারীদের বেতনভাতা ও হুমায়ূন আহমেদ কর্তৃক নেত্রকোনার কুতুবপুরে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের যাবতীয় খরচ মেটানোর জন্য ব্যয় করা হয়।

হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ৯ নম্বর বিপদসংকেত, বৃক্ষমানব, গৃহসুখ প্রাইভেট লিমিটেডসহ অসংখ্য কালজয়ী নাটকের দৃশ্যধারণ করা হয়েছে এই নুহাশ পল্লীতে। শুরু থেকেই নুহাশ পল্লী ছিল পর্যটকদের জন্য একটি আগ্রহের জায়গা। ইট-পাথরের ব্যস্ততম শহর ছেড়ে প্রকৃতির স্নিগ্ধ শীতল পরশে কিছুটা সময় কাটাতে চাইলে একদিনে ঘুরে আসুন প্রাকৃতিক নৈসর্গ নুহাশ পল্লী।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com