ভূস্বর্গ কাশ্মীর বা জম্মু ও কাশ্মীর হলো ভারতের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত একটি বিখ্যাত এবং বিতর্কিত অঞ্চল। এই অঞ্চলটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ভূরাজনৈতিক সংকটের জন্য সুপরিচিত। কাশ্মীরের জমি বরফে আচ্ছাদিত পাহাড়, নদী, হ্রদ, এবং সবুজ উপত্যকায় ভরপুর, যা পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।
কাশ্মীরকে “ভূস্বর্গ” বলা হয় এর অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। হিমালয়ের বুকে অবস্থিত এই উপত্যকা শীতকালে বরফে ঢেকে যায় এবং গ্রীষ্মে সবুজে ভরে ওঠে। ডাল লেক, নিশাত বাগ, শালিমার বাগ, এবং পহেলগাম ও গুলমার্গের মত বিখ্যাত পর্যটন স্থান এখানে অবস্থিত। শ্রীনগরের ডাল লেকের হাউসবোট এবং শিকারায় ভ্রমণ পর্যটকদের জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এছাড়া, গুলমার্গ শীতকালীন খেলাধুলা যেমন স্কিইং এবং স্নোবোর্ডিংয়ের জন্য বিখ্যাত।
ইতিহাস এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি
কাশ্মীরের রাজনৈতিক ইতিহাস জটিল এবং সংঘাতপূর্ণ। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর থেকেই এই অঞ্চলটি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং ভারত অথবা পাকিস্তানের সাথে যোগদানের পরিবর্তে স্বাধীন থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তবে পাকিস্তানি উপজাতি বাহিনীর আক্রমণের মুখে তিনি ভারতের সাথে একীভূত হওয়ার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর ফলে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধ শুরু হয়।
কাশ্মীর বর্তমানে তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত: ভারতীয়-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর, পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর এবং গিলগিট-বালতিস্তান, এবং চীনা-নিয়ন্ত্রিত আকসাই চিন। ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই সম্পূর্ণ কাশ্মীর অঞ্চলের উপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে, যা দুই দেশের মধ্যে সংঘাত এবং যুদ্ধের কারণ হয়েছে।
কাশ্মীরের সংস্কৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং প্রাচীন ঐতিহ্যে ভরপুর। এখানে মুসলিম, হিন্দু, শিখ এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সহাবস্থান দেখা যায়। কাশ্মীরি ভাষা, পোশাক, সংগীত এবং খাবার কাশ্মীরের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। কাশ্মীরি পন্ডিতদের ইতিহাসও এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে, জম্মু ও কাশ্মীর একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৯ সালে ভারত সরকার সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়। এই পদক্ষেপের ফলে অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন কমে যায় এবং এটি সরাসরি কেন্দ্রের অধীনে চলে আসে, যা নিয়ে বিতর্ক এবং প্রতিবাদ হয়েছে।
কাশ্মীরের ভূরাজনৈতিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদ এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। তবে দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন এই অঞ্চলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।