বাঙালির একান্ত অবশ্য নয়, এটি আন্তর্জাতিক পরব। তাতে কিছু এসে যায় না। যে কোনও পরবেই আমরা মেতে উঠতে ভালোবাসি। সেরকমই ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ভালোবাসার দিন এখন সকলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। তাই স্পেশাল দিনটি স্পেশাল মানুষের সঙ্গে কাটাতে স্পেশাল জায়গাই খোঁজে প্রেমিকমন। তা ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ভালোবাসার দিন একটি সুন্দর জায়গায় কাটালে কেমন হয়?
ভূস্বর্গ কাশ্মীর। সেই কাশ্মীরের মধ্যমণি ডাল লেক। প্রকৃতির পরম যত্নে সেজে ওঠা এই হ্রদের হাতছানি এড়িয়ে যাওয়া সহজে কারও পক্ষে সহজ নয়। পাহাড়, জঙ্গল, নীলাকাশ, সাদা মেঘ, নদী আর জলাশয় সব মিলিয়ে এই স্থানের সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এই হ্রদে এসে মিলেছে উত্তর ভারতের পঞ্চনদের অন্যতম শতদ্রু নদী। হ্রদের দৈর্ঘ্য সাত কিলোমিটারেরও বেশি। প্রস্থ তিন কিলোমিটারের বেশি। এই লেকে রয়েছে দুটি দ্বীপও। একটির নাম সোনা এবং অপরটির নাম রূপা। শীতকালে এই হ্রদের তাপমাত্রা মাইনাস এগারো ডিগ্রি সেলসিয়াসে চলে যায়। তখন লেকের জল জমে বরফে পরিণত হয়। তবে বরফ না থাকলে এই হ্রদে শিকারায় ভ্রমণ অতুলনীয়। কাশ্মীরবাসীর হাজার হাজার মানুষের রুজি রোজগার নির্ভর করে এই হ্রদকে কেন্দ্র করে। সিনেমায় যেমন দেখা যায় হ্রদের জলে শিকারায় চড়ে ফুল, ফল সবজি বিক্রি করেন স্থানীয়রা, তেমনই দৃশ্য চোখে পড়বে সেখানে। আর পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল হাউজ বোট। জলের মধ্যে ভাসমান বাড়ি। এখানে থাকার জায়গা রয়েছে। ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে এই হাউজ বোটে সময় কাটানোর কোনও তুলনা হয় না। ডাল লেকে কয়েকশো হাউজ বোট রয়েছে। সেগুলি বিভিন্ন বাজেটের। ভিতরে রয়েছে অত্যাধুনিক হোটেলের মতো নানা ব্যবস্থা। সারাদিন হাউজ বোটে একান্তে সময় কাটাতে পারেন। আবার ইচ্ছে হলে শিকারা ভাড়া করে হ্রদ ভ্রমণ করতে পারেন।
ডাল লেকের তীরে রয়েছে দুটি বাগান। শালিমার বাগ এবং নিশাত বাগ। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে এ দুটি তৈরি করা হয়েছিল। সকালে বা সন্ধ্যায় বাগানে ঘোরা যায়। ছবি তুলুন, একসঙ্গে গান করুন। বেশ সিনেমার মতো লাগবে। নিজেদের শিকারায় ভাসতে ভাসতে ফুলের শিকারা থেকে ফুল কিনে সঙ্গীকে উপহার দিন। শিকারায় নানা হস্তশিল্পের জিনিসও বিক্রি করেন কাশ্মীরীরা। চাইলে সেগুলিও কিনতে পারেন। তবে হ্যাঁ, হ্রদে বেড়ালেও সেখানকার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন। জলে কোনও আবর্জনা ফেলবেন না।
দূষণমূক্ত পরিবেশে ভালোবাসর দিন কাটাতে চাইলে স্পিতি ভ্যালি হতে পারে দারুণ ডেস্টিনেশন। ভ্রমণ তথা অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে লাহৌল-স্পিতি ভ্যালি খুবই জনপ্রিয় জায়গা। রাতের বেলা স্পিতির আকাশ এতটাই স্পষ্ট থাকে যে দেখলে মনে হয় প্রতিটি তারা গোনা যাবে। কম্বলের ভিতর প্রিয় মানুষের সঙ্গে নিয়ে কালো আকাশে জ্বল জ্বল করা তারাগুলি দেখতে দেখতে মনে হবে রূপকথার রাজ্যে চলে গেছেন। এখন আবার লাহৌল-স্পিতির ইগলু ট্যুরিজম বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। শীতকালে বরফের বাড়ি তৈরি করে পর্যটকদের জন্য থাকার জায়গা করা হয়েছে। প্রিয় মানুষকে নিয়ে বরফের বাড়িতে থাকুন। বিভিন্ন বাজেটের প্যাকেজ রয়েছে। সকালে বরফের উপর স্কিই করুন, বরফের পুতুল গড়ুন। বরফের গোলা ছোঁড়াছুঁড়ি খেলায় মেতে উঠুন। ইগলু ট্যুরিজম, স্কিইং ছাড়াও প্রিয় মানুষের সঙ্গে ইয়াক বা চমরী গাই সাফারি এবং ট্রেকিং করতে পারেন। পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান স্থানীয় গ্রাম, জঙ্গল এবং অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলি। ইগলুতে থাকার প্ল্যান করলে অবশ্য অনেক আগে থেকেই বুক করতে হয়। তবে হ্যাঁ, এই স্থানে কফি, ম্যাগি ছাড়া বিশেষ খাবার দাবার পাবেন না। তাই ব্যাগে করে শুকনো খাবার নিয়ে যাওয়াই ভালো।
ভালোবাসার দিন পালন করতে গেলে মানালি হতে পারে ভালো অপশন। ভারতের অন্যতম সেরা শৈলশহর মানালি হিমাচল প্রদেশের রাজধানী। এখানকার রাস্তাঘাট, অরণ্য, পর্বত, গাছপালা সবই অপূর্ব সুন্দর। ঠান্ডা আবহাওয়ায় সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে এখানে একান্ত মুহূর্ত কাটানোর আনন্দই আলাদা। মানালির অপূর্ব সুন্দর পাহাড় এবং জঙ্গলের কোনও তুলনা হয় না। পরিবার কিংবা ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে এখানে এসে অনেকেই সময় কাটান। আবার দুজনেই অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী হলে প্যারাগ্লাইডিং, র্যাপেলিং, রিভার রাফটিং, কোয়াড বাইকিং, ট্রেকিং, ওয়াইল্ড লাইফ স্পটিং করুন। সময়টা ভালোই কাটবে।
বাড়ির কাছে সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে নিয়ে সময় কাটাতে চাইলে দার্জিলিং যাওয়া যেতেই পারে। কম খরচে অপূর্ব সুন্দর পর্যটন স্থান। গোটা জেলা ঘুরে বেড়ান, টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখুন, ম্যালে ঘুরে বেড়ান কিংবা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে মুগ্ধ হন। দার্জিলিং শহর না হলেও সেখানকার নানা গ্রামে ঘুরতে যেতে পারেন। সেসব গ্রামে রয়েছে হোমস্টের ব্যবস্থা। শীতকালে একানে পাহাড়ের গা বেয়ে কুয়াশার ঢল উড়ে বেড়ায়। কখনও কখনও কাঞ্চজঙ্ঘা সেই কুয়াশার মেঘে ঢাকা পড়ে যায়। এই সময় চা বাগানের সৌন্দর্য্য যেন অনন্য হয়ে পড়ে। ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে বেড়াতে গেলে চা বাগানগুলিই পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে পারেন। বেশ একটা বলিউডি ছবির অনুভূতি হবে।
একটু অন্যরকম ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করতে চাইলে চলে যেতে পারেন কেরালা। সেখানকার ট্রি হাউজে প্রিয় মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে সময় কাটান। সারা জীবন এই দিনগুলি মনে থাকবে। কেরল পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ এই ট্রি হাউজ ট্যুরিজম। সমুদ্র, পাহাড়, জঙ্গলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে এই গাছ বাড়ি রিসর্টগুলি। ট্রি হাউসের চেহারা দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। অপূর্ব সুন্দর এর শিল্পকলা। ভিতরের ব্যবস্থা অত্যাধুনিক। সমস্ত রকম আধুনি সুবিধেই পাবেন ট্রি হাউজে। গাছে উপরের বাড়িতে ওঠার জন্য সিঁড়ি রয়েছে। সমস্ত ব্যবস্থাটিই পরিবেশ বান্ধব। ফলে এর জনপ্রিয়তাও বেশি। দু-চারটে দিন ট্রি হাউজে থাকলে মনে হবে যেন প্রযুক্তির দুনিয়ায় আর ফিরে যেতে ইচ্ছে করবে না। ওয়েল্যান্ড, মুন্নার, থেক্কাড়ি সব কেরলের বহু পর্যটনকেন্দ্রেই ট্রি হাউজের ব্যবস্থা রয়েছে। ট্রি হাউজে থাকাকালীন নেচার ট্রেইল, বার্বিকিউ, গল্প, আড্ডা সবই চলবে সঙ্গে সঙ্গে। রাতের দিকে ট্রি হাউজে থাকতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুনতে শুনতে প্রিয় মানুষের সঙ্গে একান্তে সময় কাটান গাছের উপরের বাড়িতে। আলো আঁধারিতে এক সঙ্গে সেরে ফেলুন ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। সঙ্গে হালকা সংগীত। নতুন করে প্রেমে পড়ে যাবেন।
পার্টি, হই হুল্লোড় পছন্দ হলে গোয়ার থেকে ভালো জায়গা আর কিছুই হতে পারে না। গোয়ায় পৌঁছে অনেক নতুন বন্ধু পেয়ে যাবেন। সকালে অফিসের কাজ সেরে সন্ধ্যায় তাঁদের সঙ্গে পার্টি করুন। গোয়ায় নানা বাজেটের হোটেল, হোমস্টে রয়েছে। খাবার এবং পানীয় সেখানে বেশ সস্তা। সময় পেলেই গাড়ি, স্কুটার কিংবা জিপে চড়ে সারাদিন গোয়া ট্যুর করে ফেলতে পারেন। ডিস্কো, পাব, পার্টি, নাচ-গান সব কিছুরই অঢেল জোগান রয়েছে সেখানে। ওয়াটার স্পোর্টস্ ছাড়াও বাইক রাইডিং, ডলফিন স্পটিং এনজয় করা যায়। রাতে গোয়ার জীবন অন্যরকম। তেমনই পাল্লা দিয়ে রয়েছে সেখানকার জিভে জল আনা সি ফুড। ইচ্ছে হলে গোয়ার বাগা, ক্যান্ডোলিন, কালাঙ্গুতে সৈকতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন। ছুটির দিন ঘুরে আসুন গ্র্যান্ড আইল্যান্ড, দুধসাগর জলপ্রপাত, অগুয়াদা দুর্গ, টিটো স্ট্রিট সহ প্রায় সমস্ত জনপ্রিয় জায়গাগুলি থেকে। রোম্যান্স এবং ঘোরা দুইই হবে। মনও ভালো থাকবে।