দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত সবুজ আর পাহাড়ে ঘেরা একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ, যার নাম মালয়েশিয়া। একটি বহুজাতিক ও বহু ধর্মের অনুসারী শান্তিপ্রিয় জাতি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি উন্নত ও ধনী দেশ। মিনি এশিয়াও বলা হয়ে থাকে। প্রধানত দুটি খণ্ডে বিভক্ত দেশটি; পশ্চিম মালয়েশিয়া এবং পূর্ব মালয়েশিয়া।
প্রায় ৪০ মাইল বিস্তৃত সমুদ্র আলাদা করে রেখেছে দেশটির দুই অংশকে। মোট আয়তন ৩,২৯,৭৫৪ বর্গ কিলোমিটার। পূর্ব মালয়েশিয়ায় রয়েছে দু’টি বড় রাজ্য এবং একটি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত এলাকা। আর পশ্চিম মালয়েশিয়ায় রয়েছে ১১টি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত এলাকা।
গেনটিং হাইল্যান্ড:
মেঘের রাজ্য গেনটিং হাইল্যান্ডস ভূপৃষ্ট থেকে প্রায় ১৮৬৫ মিটার উঁচুতে। মালয়েশিয়ার পাহাংয়ে গেনটিং অবস্থিত। কেএল সেন্ট্রাল থেকে গেনটিং হাইল্যান্ডসের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। বাসে যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো। ১৯৬৫ সালে গেনটিং রিসোর্ট চালু হয়। ম্যাক্সিমস, গেনটিং গ্র্যান্ড হাইল্যান্ডসহ বেশকটি তারকা হোটেল, ক্যাসিনো রয়েছে সেখানে।
মালাক্কা সিটি:
এই ঐতিহাসিক শহর শুধুমাত্র পর্তুগ্রিজ ও ডাচদের উপনিবেশের জন্যই পরিচিত নয়, পঞ্চদশ শতকের সুলতানী আমলের সময়কার সংস্কৃতিকে মালয় সংস্কৃতির স্বর্ণযুগ বলা হয়। মালাক্কার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো সেইন্ট পল চার্চ নামের দূর্গ। যা ডাচ গভর্নরের বাসভূমিও ছিল।
পুলাউ টিওম্যান, পাহাং:
১৯ শতকের শেষদিক থেকেই দ্য ক্যামেরুন হাইল্যান্ডস মালয়েশিয়ার অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হয়ে ওঠেছে। ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ ভূ-জরিপকারী উইলিয়াম ক্যামেরুন এটি আবিষ্কার করেন এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেন। এই উচ্চভূমির উচ্চতা আনুমানিক ৩৬০৯ ফুট থেকে ৫৯০৬ ফুটের মধ্যে। এটি ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও বিশুদ্ধ পরিবেশের জন্য প্রসিদ্ধ। অবাক করার বিষয় হলো এই উচ্চভূমিই মালয়েশিয়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ি এলাকা। বর্তমানে এই আকাঁশছোয়া অঞ্চলে গ্রিন-টি, স্ট্রবেরি ও সবজির খামার গড়ে উঠছে। পর্যটকরা শীতল পরিবেশ ও পর্বতারোহণের জন্য এ অঞ্চলে ছুটে আসেন।
আলোর সেতার, কেদাহ:
যেসব পর্যটক মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশে ভ্রমণ করেন তাদের অধিকাংশই মূলত লংকায়িততে সময় কাটান। কিন্তু সেখান থেকে মোটামুটি ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে খুবই আকর্ষণীয় দ্বীপ রয়েছে যা আলোর সেতার নামে পরিচিত। আলোর সেতারে আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে, জহির মসজিদ, বড় ঘড়িওয়ালা ভবন, রয়েল হল এবং সুলতান জাদুঘর। পর্যটকরা চাইলে এখানে ২৫০ মিলিয়ন বছরের পুরনো, ৭১৫ ফুট উচ্চতার চুনাপাথরের পাহাড়ও দেখতে পারবেন।
যেসব খাবার পাওয়া যায়:
সবধরনের খাবারের সমারোহ আছে মালেশিয়ায়। এখানে আপনি ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি ও বাঙালি রেস্তোরা খুঁজলেই পাবেন। তাছাড়াও ফাস্টফুড চেইনের স্বাদ নিতে পারবেন মালয়েশিয়ায়। কমতি নেই স্থানীয় খাবারের। সকালের নাস্তায় দুই রিঙ্গিতের বিনিময়ে খেতে পারেন চানারুটি। দুপরের খাবারে খেতে পারেন মিক্সড ফ্রাইড রাইস নাসিগরেঙ্গ, খরচ পড়বে মাত্র ৭ থেকে ৮ রিঙ্গিতের মতো।
এছাড়াও পাবেন কাচ্চি বিরিয়ানি, তন্দুরি চিকেন, কাবাব ইত্যাদি। ২০ রিঙ্গিত বা ৫০০ টাকাতেই ভরপেট খেতে পারবেন এই রেস্তোরাঁগুলোতে। ডেজার্ট হিসেবে বেছে নিতে পারেন সিক্রেট রেসিপির কেক, এটি বেশ সুস্বাদু।
শপিং করবেন কোথায়?
মালয়েশিয়ার বেশ কিছু শপিংমল আছে যেখানে সাধ্যের মধ্যেই আপনার সেরা শপিংটা সেরে ফেলতে পারবেন। কেনাকাটার জন্য পরিবারকে নিয়ে যেতে পারেন প্যাভিলিয়ন, টাইমস স্কয়ার, বিবি প্লাজা, সানওয়ে পিরামিড মার্কেট ইত্যাদি শপিংমলগুলোতে। পৃথিবীর সবগুলো ব্র্যান্ডের পণ্যই পাবেন এই মার্কেটগুলোয়। এছাড়া মালয়েশিয়ার স্থানীয় পণ্যগুলোও গুণগত মান সম্পন্ন, দামও ক্রয়সীমার মধ্যেই।