মৃত্যুর পূর্বে যেই কয়েকটি স্থান একবার হলেও দেখা উচিত তন্মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ভেনিস। বিশ্বের অনেক শহরকেই ভেনিসের সাথে তুলনা দেয়া হয়ে থাকে ; কিন্তু বাস্তব হচ্ছে ভেনিসের সাথে অন্য কোনো শহরেরই তুলনা চলেনা। সমস্ত বিশ্বে ভেনিস একদমই ইউনিক একটি শহর যার কোনো তুলনা নেই। ভাসমান কন্যা হিসেবে পরিচিত এই শহরটি যুগ যুগ যাবৎ মন কেড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত কোটি কোটি মানুষের। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছে রাশিয়ান সাহিত্যিক ইওসিফ ব্রডস্কি যিনি মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন তার কবর যেন দেয়া হয় তার সবথেকে প্রিয় শহর ভেনিসে।
ভেনিস নিঃসন্দেহে খুবই ট্যুরিস্টি একটি শহর।
প্রতি বছর প্রায় ২ কোটির মানুষ ঘুড়তে আসে এই শহরটি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কি পরিমান মানুষের ঢল থাকে সামার টাইমে অর্থাৎ পিক সিজনে। অতিরিক্ত এই ট্যুরিস্ট দের উপস্থিতি ভেনির ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে কিছুটা নষ্টও করে দিতে পারে। লোকের ভিড়ে ঠিক মত হাঁটা যায়না, কোথাও বসা যায়না। বিষয়টি মাঝে মাঝে বিরক্তকরও লাগতে পারে। ভেনিস শহর আসলে এতো পরিমান ট্যুরিস্টদের জন্য তৈরী নয়। এই জন্য আমি সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকি যে ভেনিসের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে, ভেনিসের রোম্যান্টিক চিত্র অনুভব করতে হলে পিক মৌসুমের বাহিরে যাওয়া উচিত। মে থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় বাদ দিয়ে বছরের বাকি সময়েই ভেনিস যাওয়া উচিৎ যখন ট্যুরিস্ট দের আনাগোনা তুলনামূলক কম থাকে। সেই সময় আপনি সত্যিকার অর্থে অনুভব করতে পারবেন শহরটি কি পরিমান রোম্যান্টিক ও ইউনিক।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমি কাউন্টলেস টাইমস ভেনিসে গেলেও ভেনিসের বুড়ানো দ্বিপ কখনো যাওয়া হয়নি। ভেনিস লেগুনে মোট ৬২ টি দ্বিপ রয়েছে যার মধ্যে বুড়ানো একটি। এই দ্বিপের একটি বৈশিষ্ট হচ্ছে কালারফুল বাড়ি-ঘর। প্রতিটি বাড়ি ভিন্ন ভিন্ন রং এর হবার কারণে ইউনিক একটি সৌন্দর্য তৈরী করেছে দ্বিপটি। অতীতে এই দ্বিপটি ছিলো জেলেদের বাসস্থান। শীতের মৌসুমে ভোরের বেলায় এই দ্বিপটিতে খুব বেশি কুয়াশা পরে ; আর জেলেরা যেহেতু সারারাত মাছ শিকার করে ভোর রাত্রে বাড়িতে ফিরত আসতো, তখন সেই কুয়াশার মাঝে নিজেদের বাড়ি যেনো খুব সহজেই চিনতে পারতো তাই তারা এইভাবে বিভিন্ন রং দিয়ে তাদের বাড়িগুলো রং করতো। সেই পুরোনো ঐতিহ্য অনুযায়ী এখনো এই দ্বিপের প্রতিটি বাড়ি বিভিন্ন রং দিয়ে সাজানো হয়ে থাকে।
খালের পানির ওপর এই রং-বেরং এর বাড়ির ছায়া যখন পরে তখন চমৎকার একটি দৃশ্য তৈরী করে। দেখে মনে হবে যেনো কোনো দক্ষ শিল্পী তার তুলিতে এই শহরটি এঁকেছে এবং আপনি সেই আঁকা ছবিটি জীবন্ত দেখতে পাচ্ছেন। যারা ভেনিস যায় তাদের বেশির ভাগ মানুষই আসলে এইসব দ্বিপ গুলোতে না গিয়ে শুধু প্রধান দ্বিপটি ঘুরেই চলে আসে। এটি একটি বড় ভুল এবং ভুলটি আমি নিজেও করেছি। আমার বর্তমান কাজ/ট্যুর এর খাতিরে যখন জানতে পেরেছিলাম যে ভেনিস আসা হবে, তখনই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম যে এবার আমি এই বুড়ানো দ্বিপে যাবোই। চমৎকার কিছু সময় পার করেছি।