ভিয়েতনামের হা লং শহরের নামে এই উপসাগরের নাম রাখা হয়েছে হা লং বে। ভিয়েতনামী শব্দ ‘হা লং’ অর্থ ‘ভূমিতে নেমে আসা ড্রাগন’। হা লং উপসাগরের আয়তন এক হাজার ৫৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এই সম্পূর্ণ এলাকা জুড়ে প্রায় দুই হাজার পাথরের দ্বীপ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র দুটি বড় দ্বীপ আছে। ‘তুয়ান চাউ’ এবং ‘কাট বা’ হা লং উপসাগরের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। এসব দ্বীপের মূল উপাদান হলো চুনাপাথর। ধারণা করা হয়, প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে চুনাপাথরগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল। উপসাগরে কিছু দূর পরপর গোলকধাঁধার মতো চুনাপাথরের পাহাড়ি দ্বীপগুলো ছড়িয়ে রয়েছে।
হা লং উপসাগরের এসব পাহাড়ি দ্বীপে ছোটবড় বেশ কিছু গুহাও আছে। এখানকার সবচেয়ে বড় গুহার নাম ‘সাঙ্গ সট’। যার অর্থই হলো ‘আশ্চর্য গুহা’। এই গুহার ছাদ থেকে অদ্ভুত রকমের পাথরের প্রাকৃতিক কারুকাজ চোখে পড়ে। গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রায় ১০ হাজার বছর আগে থেকে মানুষ এখানে বসবাস করে আসছে। বর্তমানেও এখানে মানববসতি রয়েছে। এমনকি এই উপসাগরের মাঝেও রয়েছে চারটি ভাসমান গ্রাম। গ্রামগুলো ‘কুয়া ভান’, ‘বা হ্যাং’, ‘চং টাউ’ এবং ‘ভুং ভিয়েঙ’ নামে পরিচিত। এসব গ্রামে মাত্র দুই হাজারেরও কম লোক বসবাস করে। ভাসমান গ্রামের সবাই পেশায় মৎস্যজীবী।
হা লং উপসাগরকে কেন্দ্র করে একটি উপকথা প্রচলিত আছে। স্থানীয়রা ধারণা করেন, অতীতের শত্রুদের হাত থেকে ভিয়েতনামীদের রক্ষা করার জন্য ঈশ্বর একটি ড্রাগন পরিবারকে পাঠিয়েছিল। যেখানে ড্রাগনরা অবতরণ করেছে সেই স্থানের নাম হয়েছে ‘হা লং’। যার অর্থই হলো ‘ভূমিতে নেমে আসা ড্রাগন’। তখন থেকেই এসব চুনাপাথরের দেয়ালগুলো তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছে। যখন দস্যু জাহাজ তাদের আক্রমণ করতে আসতো, তখন এসব জাদুকরী পাহাড়গুলোর সঙ্গে ধাক্কা লেগে শত্রু জাহাজ ধ্বংস হয়ে যেতো।
এছাড়া তারা আরো মনে করে ড্রাগনরা লেজ দিয়ে তাদের শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। যে জায়গায় ড্রাগন লেজ দিয়ে যুদ্ধ করেছে, সেই জায়গার নাম ‘বাক লং ভি দ্বীপ’। তাদের বিশ্বাস ড্রাগনের থুতু মণিমুক্তা হয়ে সাগরে ছড়িয়ে রয়েছে। দস্যুদের সঙ্গে যুদ্ধ শেষে ড্রাগনরা এই নয়নাভিরাম পরিবেশে স্থায়ীভাবে বাস করার ইচ্ছা পোষণ করে। যেখানে ড্রাগন শিশুরা তাদের মায়েদের সঙ্গে বসবাস করতো, সেই স্থানের নাম ‘বাই তু লং দ্বীপ’। ‘লং’ অর্থ ‘ড্রাগন’ এবং ‘বাই তু’ অর্থ ‘মায়ের সঙ্গে ছেলে’।
হা লং বের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যেও সমৃদ্ধ। এখানে প্রায় ৪৫০ প্রজাতির শামুক ঝিনুক জাতীয় অমেরুদন্ডী প্রাণী, ২০০ প্রজাতির মাছ এবং ১৪ প্রজাতির ফুল রয়েছে। এই উপসাগরের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। এখানে মূলত দুইটি ঋতু। শীতকাল ও গ্রীষ্মকাল প্রতি বছর ২৫ লাখেরও বেশি লোক হা লং উপসাগরে বেড়াতে আসেন। ঘুরতে আসা দর্শকদের জন্য কায়াকিং, মাছ ধরা, স্কুবা ডাইভিং এবং স্নোরকেলিংয়ের ব্যবস্থা আছে।
ডেইলি-বাংলাদেশ