হিমালয়কন্যা নেপালের সৌন্দর্যে মুগ্ধ বিশ্ববাসী। এজন্যই দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা নেপাল ভ্রমণে গিয়ে থাকেন। তবে বাংলাদেশিদের জন্য সৌভাগ্যের হলো নেপালে যেতে প্রয়োজেন নেই ভিসার। সেই সঙ্গে বাসে চড়েও সড়কপথে কম খরচে নেপাল ঘুরে আসা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন ভারতের টানজিট ভিসা।
ভ্রমণপিপাসুরা সবসময়ই খোঁজ রাখে কোন সময় কোথায় গেলে কিংবা কম খরচে কীভাবে ভ্রমণ করা সম্ভব? তারা জানলে অবাক হবেন, খুবই কম বাজেটে বাসে নেপাল ঘুরতে যাওয়া সম্ভব। হিমালয়কন্যা বলা হয় নেপালকে। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আবহাওয়া খুবই মনোরোম।
এ ছাড়াও মাউন্ট এভারেস্ট, শত বছরের পুরনো মন্দির, আকাশচুম্বী পর্বতমালা, জলপ্রপাত, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, বিভিন্ন উৎসব রয়েছে দেশটিতে। পৃথিবীর যেসব দেশে সহজেই একা ভ্রমণ করা যায়, তার মধ্যে নেপাল অন্যতম।
বিশ্বের পর্বতারোহীদের পছন্দের স্থান নেপাল। অন্নপূর্না কিংবা এভারেস্ট জয়ের জন্য সারা বছরই তারা এখানে ভিড় করেন।
নেপাল পর্বতারোহীদের পছন্দের দেশ হলেও সাধারণ পর্যটরাও এখানে যান হিমালয়ের পাশ থেকে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে। অন্নপূর্না পর্বতের শুভ্র চূড়া দেখতেও কেউ কেউ ভিড় করেন সেখানে। প্রত্যেক বছর হাজারো পর্যটক ভ্রমণ করেন এই পাহাড়ি কন্যার দেশে।
এ ছাড়াও কাঠমান্ডু, পাটান কিংবা ভক্তের মতো মধ্যযুগীয় শহরে ঘুরে বেড়াতেও পছন্দ করেন অনেকে। এ দেশের থামেল এবং পোখারার ট্রেকিংয়ের দোকান, বেকারি কিংবা অন্যান্য দোকানে ঘুরতে ঘুরতে মনে হতে পারে আপনি ডিজনিল্যান্ডে আছেন।
পুরো বছর এখানে পর্যটকের আনাগোনা থাকলেও অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস এখানে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। কারণ এ সময় আকাশ পরিষ্কার থাকে, হিমালয়ও তার অপূর্ব সৌন্দর্য তুলে ধরে।
জেনে নিন কীভাবে যাবে নেপালে
সড়কপথে নেপাল যেতে ভারতের ট্রানজিট ভিসা নিতে হবে। এতে এন্ট্রি এবং এক্সিট পোর্ট দেবেন চ্যাংড়াবান্ধা/ রাণীগঞ্জ। এরপর নেপালে পৌঁছালেই মিলবে অন অ্যারাইভাল ভিসা। এ স্টিকার ভিসা মিলবে এন্ট্রি পোর্টেই। বাসে প্রথমে বুড়িমারি বর্ডারে চলে যেতে হবে সরাসরি। সেখানে ইমিগ্রেশনের যাবতীয় কাজ শেষ করে প্রবেশ করবেন চ্যাংড়াবান্ধায়।
সেখানে কাজ শেষে যেতে হবে রাণীগঞ্জ বর্ডারে। এরপর সেখান থেকে যেতে হবে নেপালের কাঁকড়ভিটায়। শিলিগুড়ি থেকেও বাসে সরাসরি চলে যেতে পারেন কাঁকড়ভিটা। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে কাঁকড়ভিটা থেকে পাবেন পোখারার বাস। জনপ্রতি ১ হাজার ৫০০ রুপির মতো পড়বে খরচ। সময় লাগবে ১২ ঘণ্টার বেশি।
এ ছাড়াও শ্যামলী ট্রাভেলসের বাস এখন ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা, ফুলবাড়ি, শিলিগুড়ি পার হয়ে ভারতের কাকরভিটা সীমান্ত দিয়ে সরাসরি নেপালের কাঠমন্ডু যায়। এভাবেও যেতে পারবেন।
নেপালের মূল আকর্ষণ কাঠমান্ডু, নাগরকোট, পোখারা। কাঠমান্ডু নেপালের রাজধানী, একই সঙ্গে নেপাল ভ্রমণের গেটওয়ে। কাঠমান্ডুতে দেখতে পারবেন বসন্তপুর দরবার স্কয়ার, শম্ভুনাথ মন্দির, পাঠান দরবার স্কয়ার, ভক্তপুর দরবার স্কয়ার, বুদ্ধনাথ মন্দির ইত্যাদি।
কাঠমান্ডু শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে নাগরকোট। নেপালের যেসব স্থান থেকে সবচেয়ে মনোরম সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়, নাগরকোট তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা। হিমালয়ের মোট ১৩টি পর্বত রেঞ্জের মধ্যে ৮টিই নাগরকোট থেকে দেখা যায়।
পোখারা নেপালের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। কাঠমান্ডু থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে। পোখারায় দেখবেন ডেভিড ফলস, গুপ্তেশ্বর গুহা ও শ্বেতী নদী। এ নদীর পানির রং সাদা। বিখ্যাত ফেওয়া লেকে করতে পারেন নৌ-ভ্রমণ। আর সূর্যোদয় দেখতে খুব সকালে যেতে হবে সরংকোট।
খরচ
কাঠমান্ডুতে দর্শনীয় স্থানগুলো মোটামুটি কাছাকাছি হওয়ায় তেমন খরচ নেই বললেই চল। এ ছাড়া সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য মন্দিরগুলোর টিকেট বিদেশিদের থেকে প্রায় এক তৃতীয়াংশ কম দামে পাওয়া যায়।
খাবার এর থালি নেপালে ১৫০-৩০০ রুপির মধ্যে পাওয়া যায়। তাই থাকা-খাওয়া ও বেড়ানোর খরচ মিলিয়ে কমের মধ্যে হয়ে যাবে। জনপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকার মধ্যে খুব ভালোভাবে এসব দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
থাকতে হলে থামেলের চেয়ে উপযুক্ত স্থান আর দ্বিতীয়টি নেই। কারণ পুরো থামেলের গলি ঘুপচিতে অসংখ্য হোটেল/ ব্যাকপ্যাকার হোস্টেল রয়েছে। ১০০০ থেকে ১৮০০ রুপির মধ্যে ভাল ডাবল রুমের বাজেট হোটেল এখানে পাওয়া সম্ভব। ৪০০ রুপিতে সিঙ্গেল রুমের হোটেল ও এখানে আছে।
বাজেট আরেকটু বেশি যেমন- ৩ হাজার রুপি বা তার বেশি হলে ডিলাক্স রুমের খাবারসহ অনেক ভালো হোটেল পাওয়া যায়। তবে থামেলের হোটেলগুলো আগে থেকে বুকিং না দিয়ে বরং কয়েকটি হোটেল ঘুরে যাচাই-বাছাই করলে সস্তায় ভালো হোটেল পাওয়া সম্ভব।
খাবেন কোথায়?
নেপালের লোকাল খাবার হিসেবে তারা ভাতের থালিকেই প্রাধান্য দেয়। তাই কাঠমান্ডুর যেখানেই যাওয়া হোক না কেন ভাত না খেয়ে থাকা অসম্ভব। ভাতের সঙ্গে ডাল, মাছ, মুরগি, সালাদ, রায়তা, শাক ও পাঁপড় থালিতে থাকে।
নেপাল শীতপ্রধান দেশ বলে সেখানে মোমোর প্রচলন আছে। থামেল ও কাঠমান্ডুর অন্যান্য জায়গায় অসংখ্য মোমোর দোকান আছে। এ ছাড়াও আছে নানা স্বাদের নানা রংয়ের চা ও কফি। ফুলের পাপড়ি থেকেও চা তৈরি করেন তারা।
কেনাকাটা
থামেল হলো কাঠমান্ডু থেকে কেনাকাটা করবার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। কারণ এখানে এতো বেশি দোকান ও তার মনোহর সামগ্রী যে তা কাঠমান্ডুর অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে টুরিস্ট এলাকা হিসাবে এখানে অবশ্যই দাম অস্বাভাবিক রকমের বেশি থাকবে। দামাদামি করে কিনতে হবে।