1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ অপরাহ্ন

প্রকৃতি আর ইতিহাসের শহর ভিয়েনা

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

এ শহর একদিকে যেমন ঐতিহ্যবাহী আর ইতিহাসঋদ্ধ, তেমনই মনেপ্রাণে সংস্কৃতিবান। ভিয়েনার অন্দরে কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসার সুযোগ তাই হাতছাড়া করার জো নেই

সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবেদনেই প্রতিবছর এখানে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান। পুরো শহরে ২৭টি রাজপ্রাসাদ আর ১৬৩টি রাজবাড়ি রয়েছে! ঐতিহ্য আর আধুনিকতার যোগ্য মেলবন্ধনের ছাপ ভিয়েনার প্রতিটি কোণে। এখানে এলে রাজদর্শন করবেন না, তা কখনও হয়! হ্যাবসবার্গ বা স্কোনব্রান প্রাসাদ বা হফবার্গ প্রাসাদের রাজকীয় সৌন্দর্য আপনাকে বিমুগ্ধ করবেই। এখানকার ক্যাফে বা রেস্তরাঁগুলোতে পাবেন ‘ইম্পিরিয়াল’ ফিল। ঘুরে দেখে আসতে পারেন সিসি মিউজ়িয়ম। সম্রাজ্ঞী এলিজ়াবেথের ব্যবহার করা বিভিন্ন জিনিসপত্রের টুকরো কালেকশন রয়েছে এখানে। একইসঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন ভিয়েনা ফার্নিচার মিউজ়িয়মেও।

ভিয়েনার ইতিহাসের আরও কাছাকাছি পৌঁছতে চলে যান ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে। প্রাচীন ভিয়েনীয় স্থাপত্যের অনবদ্য নিদর্শনবাহক এটি। দেওয়ালে ফ্রেসকো পেন্টিং আর পুরো স্টেট হল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা স্থাপত্যশৈলী আপনাকে মুগ্ধ করবে। ভিয়েনায় রয়েছে শতাধিক মিউজ়িয়ম। আর শিল্প-স্থাপত্যের এমনই রমরমা, যে সারাবছরই হয়ে থাকে প্রচুর প্রদর্শনীও। যাঁরা শিল্পের টানে ভিয়েনা আসেন, তাঁরা ঘুরে আসতে পারেন বেলভেদার প্যালেসে। গুস্তাভ ক্লিমটের কালজয়ী সৃষ্টির বাসস্থান এটি। সেখান থেকে চলে যান মিউজ়িয়ম ফর অ্যাপ্লায়েড আর্টসে। মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের আসবাবপত্র, রূপো, জামাকাপড় ছাড়াও রয়েছে মূল্যবান হস্তশিল্পের নিদর্শন। দেখে আসতে পারেন লিওপোল্ড মিউজ়িয়মও। অস্ট্রিয়ান মডার্ন আর্টের নানা সাক্ষর বহন করে এটি। শিল্পপ্রেমীদের জন্য এটি সত্যিই ‘ট্রেজ়ার ট্রোভ’ বলা যেতে পারে।

সাংস্কৃতিক আকর্ষণ

ভিয়েনাকে বলা হয় বিশ্বের সাংগীতিক রাজধানী! কথাটা যে একটুও অতিশয়োক্তি নয়, তা একবার ভিয়েনার সাংস্কৃতিক আমেজ উপভোগ করলেই বুঝতেই পারবেন। ভিয়েনার ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির টানে যাঁরা আসেন, তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ আবার তরুণ। আর এঁদের কাছে ভিয়েনার অন্যতম বড় আকর্ষণ নিঃসন্দেহে এর সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট। মোৎজ়ার্ট, বিঠোভেন বা স্ট্রসের দেশে সারাবছরই যে সাংগীতিক পরিবেশ থাকবে, তা তো বলাই বাহুল্য। পাশ্চাত্য সংগীতের দিকপাল জ়ুবিন মেটা এখানেই গান নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। মাঝেমধ্যে ভিয়েনা ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রাও কনডাক্ট করে থাকেন তিনি। অনেকের মতে, ভিয়েনা ফিলহারমোনিক পৃথিবীর সেরা অর্কেস্ট্রা।

নতুন বছরের কনসার্ট ছাড়াও স্কোনব্রানে সামার নাইট কনসার্টেও এই অর্কেস্ট্রার পারফরমেন্স দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন সংগীতপ্রেমীরা। বছরে মোটামুটি ১৫০০ কনসার্ট হয় এখানে। ভিয়েনা স্টেট অপেরা পৃথিবীর অন্যতম বড় অপেরা হাউজ়। খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক তারকারাও এখানে পারফর্ম করতে পেরে খুশি হন। অপেরা ক্যালেন্ডারের দিকে চোখ বোলালেই বোঝা যায়, এখানে কতটা ব্যস্ততা থাকে সারাবছর। মঞ্চ আর দর্শকদের মাঝে রয়েছে ফায়ার কার্টেন। সাধারণত এপ্রিল, মে, জুন আর সেপ্টেম্বর মাসে লাইভ অপেরা আর ব্যালে শো দেখতে ভিড় জমান দেশ-বিদেশ থেকে আসা হাজার-হাজার মানুষ। ভিয়েনার ওল্ড সিটি সেন্টারের আর্চডিউক কার্ল-এর প্রাসাদের ‘মিউজ়িয়ম অফ সাউন্ড’ দেখতে যাবেন অবশ্যই। সকাল দশটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে।

ভিয়েনার ক্লাসিকাল কনসার্টের জায়গা মূলত দু’টো: ভিয়েনা মিউজ়িকভেরেইন-এর নাম অনেক সংগীতপ্রেমীদের কাছেই বেশ পরিচিত। এখানকার গোল্ডেন হলে প্রতিবছর নিউ ইয়ার কনসার্ট আয়োজন করা হয়। বিশ্বজুড়ে টি.ভির পরদায় টেলিকাস্টও করা হয় এটি। এছাড়া ভিয়েনা কোনজ়েরথউস-এও নানারকম সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। অপেরা থেকে জ্যাজ়, ক্লাসিকাল থেকে রক কনসার্টভিয়েনা সবসময়ই সরগরম। থিয়েটার, মিউজ়িক আর আর্টএই তিন ধরনের শিল্পের সমাগমে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় ভিয়েনা ফেস্টিভ্যাল।

মডার্ন ডান্সেরও আঁতুড়ঘর ভিয়েনা। ‘সিটি অফ ওয়াল্টজ়’ হিসেবে পরিচিত হলেও সারা বছর আরও কিছু উল্লেখযোগ্য ডান্স ফেস্টিভাল হয়ে থাকে এখানে। ‘ইমপালসট্যানজ়’, ‘ট্যানজ়কোয়ার্তিয়ের’ ইত্যাদি ফেস্টিভালগুলো সারা বিশ্বের নৃত্যপ্রেমীদের কাছে চিরন্তন আকর্ষণীয়। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জুন মাসের মধ্যে ভিয়েনা স্টেট ব্যালে তাঁদের ১৪টি ব্যালে প্রোডাকশন মঞ্চস্থ করতে চলেছে। ভিয়েনা বেড়াতে গেলে ঘুরে দেখে আসতে পারেন এখানকার ন্যাশনাল থিয়েটার। জার্মান ও ইংরাজি ভাষায় গাইডেড ট্যুরেরও ব্যবস্থা আছে এখানে।

শপিং ও খাওয়াদাওয়া

গয়না থেকে শুরু করে অ্যান্টিক জিনিসপত্র, ফ্যাশন বুটিক থেকে শুরু করে আর্ট স্টোরশপিংপ্রেমীদের কাছে ভিয়েনা সত্যিই স্বর্গোদ্যান। ওল্ড ভিয়েনায় ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে যাবেন একাধিক নামী ব্র্যান্ডের ফ্যাশন স্টোর, ডিজ়াইনার জুয়েলারি ও গিফট স্টোর। এপ্রিল মাসে ভিয়েনার ইস্টার মার্কেটে উত্তেজনা থাকে তুঙ্গে। গানের অনুষ্ঠান আর ইস্টার ডেকরেশন ছাড়াও খাওয়াদাওয়ার এলাহি আয়োজনও চোখে পড়ার মতো।

স্কোনব্রান প্যালেসের ইস্টার মার্কেট আবার পৃথিবীর অন্যতম রোম্যান্টিক ইস্টার ডেস্টিনেশনগুলির মধ্যে একটা! মানে, সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে ভিয়েনা ভ্রমণে এলে শপিং আর প্রেম, দুইই জমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন অ্যাম হফ-এর হ্যান্ডিক্রাফটের মার্কেটেও। ভিয়েনার প্রেটারে ইস্টার সানডে-র দিন আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। লাইভ মিউজ়িক, ইস্টার প্যারেড আর রঙীন পোশাকে সজ্জিত নরনারীদের ভিড় যে কোনও পর্যটকের কাছেই আকর্ষণীয়।

ভোজনরসিকদের জন্য স্বাদের খোরাকও রয়েছে যথেষ্ট। ভিয়েনার ভারতীয় রেস্তরাঁগুলোতে ঢুঁ মারলে সেখানকার স্থানীয় খাবার চেখে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না অবশ্যই। ভিয়েনিজ় কুইজ়িনের বিশেষত্ব হল এর বৈচিত্র্য। শুধু ভিয়েনার স্বাদ নয়, অভিনব সব ডিশে বোহেমিয়া, হাঙ্গেরি, ইতালি এমনকি বলকান স্বাদও জিভে লেগে থাকবে। এখানকার সিগনেচার ডিশ অ্যাপল স্ট্রাডেল ছাড়াও স্পেশালিটি ভিয়েনিজ় কেকও জনপ্রিয়তার দিক থেকে প্রায় কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। এ শহরে ওয়াইন অ্যান্ড ডাইন হটস্পটের কোনও অভাব নেই।

আবার দেশ-বিদেশের নানা ডিশও চেখে দেখতে পারেন। ফরাসি থেকে ইতালি বা ওরিয়েন্টাল বৈচিত্র্যের কোনও অভাব নেই। আর এ শহরের বিশেষত্ব হল ভিয়েনিজ় বিস্ত্রো। সনাতন, আরামদায়ক এই ডাইনিং স্পটগুলিতে এলে এক ধরনের ঘরোয়া আতিথেয়তার সাক্ষী থাকতে পারবেন। ক্লাসিক্যাল বিস্ত্রোগুলোতে থাকে বড় ওয়াইন বার। এখানকার ওয়াইন তো সারা বিশ্বে সমাদৃত। এছাড়া শহরের কফিশপগুলোও হ্যাংআউটের আদর্শ জায়গা। ভিয়েনার রাত্রিবিলাসও কিন্তু কম রোমাঞ্চকর নয়! সুরা, উদ্দাম গান আর উষ্ণ আমেজের সান্নিধ্যে এখানকার পার্টি স্পটগুলো ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

অন্যান্য আকর্ষণ

ভিয়েনা শহর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক পার্ক। বসন্তকালে শুধু ভোকসগার্টেন-এই ৪০০ রকমের গোলাপ ফুল ফোটে। মোট ৮৫০টি পার্ক আছে ভিয়েনাতে। এখানে বেড়াতে এলে ওয়াইন চেখে দেখবেন না, তা কী হয়! রয়েছে প্রায় ১৭৩৯ একর বিস্তৃত ভিনিয়ার্ড। বোঝাই যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফ্লেভারগুলি উৎপাদন হয় এখানে। আর বেড়াতে যাওয়ার আগে আর একটা তথ্য জেনে রাখতেই পারেন। ভিয়েনার ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্যগুলো ইউনেসকো-র ওয়র্ল্ড কালচারাল হেরিটেজ লিস্টে ঠাঁই পেয়েছে।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য রয়েছে ভিয়েনা ম্যারিয়ট হোটেল (+৪৩১৫১৫১৮০),

হোটেল ল্য মেরিডিয়ন www.lemeridienvienna.com/en,

হোটেল ব্রিস্ট www.bristolvienna.com,

হোটেল অস্ট্রিয় www.hotelaustria-wien.at,

হোটেল ভিয়েনা  www.hotelvienna.at,

অস্ট্রিয়া ট্রেন্ড পার্ক হোটেল স্কোনব্রান  www.austria-trend.at ইত্যাদি।

বিশদে জানতে লগ-ইন করুন  www.wien.info/en ও www.austria.info/in -এ।

কখন যাবেন

অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ভাল সময়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com