1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৭ অপরাহ্ন

শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডি বেড়ানোর আদর্শ জায়গা

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শ্রীলঙ্কার চারদিকে সমুদ্র থাকার কারণে এর আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। এখানে অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। তাই পর্যটকদের এই সময়টা এড়িয়ে চলাই ভালো। শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করার জন্য বছরের সবচেয়ে ভালো সময় হলো ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস। শ্রীলঙ্কা ভারত মহাসাগরের এবং উপমহাদেশের দ্বীপ রাষ্ট্র। শ্রীলঙ্কায় যাওয়াটা হুট করেই। আমরা ব্যাংকক থেকে শ্রীলঙ্কা যাই। দেশটা খুবই নিরিবিলি এবং পরিচ্ছন্ন। আমার মনে হয়েছে, দেশটির মানুষের আচরণে ভদ্রতা-সভ্যতার বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শ্রীলঙ্কাই এগিয়ে, যদিও এখন অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত। নিকট প্রতিবেশী এত সুন্দর একটা দেশে

ঢাকা ব্যাংকক-কলম্বো আবার ঢাকা-কলকাতা-চেন্নাই-কলম্বো যাওয়া যায়। বিমানবন্দরে পৌঁছেই আমরা রওনা দিই উজফেটাকাইয়াবার হোটেল পাম ভিলেজের উদ্দেশ্যে। হোটেলটি কলম্বো সমুদ্রবন্দরের কাছে এবং সমুদ্রে পাড়েই গল ক্রিকেট গ্রাউন্ডের সঙ্গেই। শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আবহাওয়া বেশ চমৎকার। চারদিকে সমুদ্র থাকার কারণে এর আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। এখানে অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। তাই পর্যটকদের এই সময়টা এড়িয়ে চলাই ভালো। উপমহাদেশের দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে যেতে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা বাধ্যতামূলক। ঢাকাস্থ শ্রীলঙ্কা দূতাবাসে গিয়ে আগে থেকেই ভিসা সংগ্রহ করে নেয়া ভালো। কারণ কলম্বো বিমানবন্দরে গিয়ে ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যায় না। সময়ভেদে জনপ্রতি রাউন্ড ট্রিপ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পড়বে। খরচ কমাতে চাইলে ভারত হয়েও যাওয়া যায়। এভাবে গেলে খরচ কমবেশি ২০ হাজার টাকা লাগে। শ্রীলঙ্কায় ৪০ থেকে ৬০ ডলারের মধ্যে ভালো হোটেল পাওয়া যাবে সব জায়গায়। খাওয়া-দাওয়া, যাতায়াত সবকিছুর খরচ অনেক কম।

কলম্বো আসার পর বাসে বা ট্রেনে শ্রীলঙ্কার যে কোনো জায়গায় যেতে পারবেন। পর্যটন এদেশের প্রধান ব্যবসা হওয়াতে সবাই আপনাকে সহযোগিতা করবে। আর যদি কোনো ক্যাব বা থ্রিহুইলারে চড়তে চান মিটার যুক্ত বাহন ব্যবহার করুন। আগে মিটার যুক্ত বাহন কম ছিল। এখন অনেক মিটারযুক্ত বাহন পাবেন। এতে করে ঝামেলা এড়ানো যাবে। থাকার জন্য সব দামের হোটেল পাবেন। আর একটি কথা। কলম্বোতে নেমে একটি লোকাল সিম কার্ড নিতে পারলে ভালো। কারণ আপনার মোবাইলে হয়তো রোমিং করা আছে। কিন্তু তাতে খরচ পড়বে অনেক। দরকার কি অযথা অপচয় করার। বিমান বন্দরের এরাইভাল লাউঞ্জের বাইরে আসার আগে দেখবেন ২টি সিম কার্ডের বুথ। একটি হলো ডায়ালগ আরেকটি মোবিটেল।

শ্রীলঙ্কা একটি আশ্চর্যজনক দ্বীপ, যেখানে আপনি হিক্কাডুয়া সমুদ্রসৈকতে কচ্ছপদের খাওয়াতে পারেন, সিলন প্ল্যান্টেশনের মধ্য দিয়ে হাঁটতে পারেন, লিটল অ্যাডাম এবং এলা রক পিকসের চূড়া জয় করতে পারেন, মিরিসা স্পটে ঢেউ ধরতে পারেন এবং ট্রেনের যাত্রা উপভোগ করতে পারেন। দ্বীপের চারপাশে ভ্রমণের জন্য রেলওয়ে হলো সবচেয়ে সুবিধাজনক, সস্তা এবং খুব সুন্দর বিকল্প। কোনো ট্রাফিক জ্যাম নেই। ক্যান্ডি থেকে কলম্বো পর্যন্ত ভয়ানক ট্রাফিক জ্যাম হয় অনেক সময়, আপনি প্রায় যে কোনো শহরে যেতে পারেন, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ভ্রমণের সময় যে দৃশ্যগুলো দেখা যায়। ট্রেনের খোলা জানালা থেকে আপনি পাহাড়, বন, গাছপালা, সৈকত এবং গ্রামসহ দ্বীপের প্রকৃতি দেখতে পাবেন যেখানে আপনি স্থানীয়দের জীবন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

আপনি কলম্বো আসছেন, রাজধানীতে অনেক সময় ব্যয় করবেন না। শহরটি দ্বীপের আকর্ষণকে প্রতিফলিত করে না। সরাসরি স্টেশনে যান এবং ক্যান্ডির টিকেট কিনুন। প্রায় তিন ঘণ্টা ড্রাইভ করুন। এই শহর, যা একসময় রাজাদের আবাসস্থল ছিল, দ্বীপের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত এবং এটি এর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র। ট্রুথ রিলিকের মন্দিরে যান, যা জাদুঘর এবং মন্দিরগুলোর একটি জটিল। ঐশ্বরিক দাঁতটি একটি সোনার বাক্সে রাখা হয়। আপনি যদি আগস্টের জন্য ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন তবে আপনি এসালা পেরাহেরা পবিত্র দাঁতের উৎসবে যেতে পারেন। ক্যান্ডি লেকের চারপাশে হাঁটুন। প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই কৃত্রিম হ্রদটি ১৯ শতকের শুরুতে ক্যান্ডির শেষ রাজা শ্রী বিক্রম রাজাসিংহের নির্দেশে আবির্ভূত হয়েছিল। শাসকের হারেমটি হ্রদের মাঝখানে একটি ছোট দ্বীপে অবস্থিত ছিল। আপনি মঠ এবং রাজকীয় স্নানও দেখতে পাবেন। পুকুরের চারপাশে গিজ, পেলিকান এবং হেরন পাওয়া যায়। শ্রীলঙ্কার উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগতের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য প্রকৃতি সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে হাঁটুন : ৩০০ বছরের পুরনো লতা, মিনি বেত পাম, অর্কিড, লতা, সিলন ম্যাকাক, সজারু, মংগুস, পান্না তোতা এবং ঘুঘু। ক্যান্ডির বিখ্যাত চা মন ভরিয়ে দেবে আপনার। শ্রীলঙ্কা তার চায়ের জন্য বিখ্যাত, তাই এটি কীভাবে তৈরি হয় তা জানতে পেড্রো এস্টেটের মতো স্থানীয় বাগান পরিদর্শন করা মূল্যবান।

ক্যান্ডির কাছেই পথে অবশ্য ‘পিনাওয়ালা এলিফ্যান্ট অরফ্যানেজ’-এ থেমেছিলাম। এটা মূলত হাতির আশ্রম; সেখানে প্রবেশ করতে এক হাজার রুপি দিতে হয় জনপ্রতি। এ যেন হাতিদের জন্য এক জলসাঘর। এক পাল হাতি জলে আর পাথুরে ডাঙ্গায় নানারকম অদ্ভুত কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকে। শ্রীলঙ্কায় এলে অসাধারণ সুন্দর স্থানটিতে আসতে ভুলবেন না। এখানে এলে হাতির প্রতি শুধু ভালোবাসা জন্মাবে না, জায়গাটার প্রেমে পড়বেন নিশ্চিত। একটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আমার বিশেষ মনোযোগ কেড়ে নিয়েছিল, দেখতে পায়না কিন্তু সব আচরণ স্বাভাবিক। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর চলে যাই একদম উপরের ঢালে। বাতাসে উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা! চূড়া থেকে যতদূর চোখ যায়, শুধু বন আর বন। সীমানা ঘেঁষে কয়েকটা পাহাড়ের সারিও আছে। ঠিক মাঝখানে সিগিরিয়া আর পিদুরাঙ্গালা। সিগিরিয়ার সূর্যাস্ত আসলেই মুগ্ধ হওয়ার মতো। এমন নিরবচ্ছিন্ন আকাশে সূর্যাস্তের উৎসব আবেগে ভারি করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। ক্যান্ডির ক্রিকেট স্টেডিয়াম খুব বিখ্যাত সবাই আসে ক্রিকেট দেখতে।

ক্যান্ডি শহরের মাঝখানে বিশাল হ্রদ। হ্রদের চারপাশে বুদ্ধের দাঁতের মন্দির, সিংহল সংস্কৃতি কেন্দ্র এখানে নিয়মিত ঐতিহ্যবাহী নাচ দেখা যায়, উডাওয়াত্তাকেলে অভয়ারণ্যসহ আরও অনেক কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সময় নিয়ে ঘুরে দেখার মতো। উডাওয়াত্তাকেলে অভয়ারণ্যে প্রচুর জীবজন্তু আছে। প্রবেশ পথের কাছেই একটা জায়গায় বানরের দল ঘোরাফেরা করে। তবে এরা খুব নিরীহ বানর। ক্যান্ডিতে ভালো থাকার জায়গা আছে স্বার্নানাঙ্কারা মাওয়াথায় বাংলায় হবে স্বর্ণালংকার সড়কে। এখানে ব্যাকপ্যাকারের জন্য উপযুক্ত বাজেটে ঘর পাওয়া যায়, ঘরের মান বেশ ভালোই। কোনো কোনো হোটেলে ফ্রি রিভর আছে। হ্রদের পাশ ঘেঁষে একটা রাস্তা চলে গেছে শহরের মধ্যে। সেই রাস্তা ধরে, দাঁতের মন্দির পাশ কাটিয়ে আরও কিছুদূর গেলে একটা মসজিদ আছে। এখানে আমার জানা মতে ক্যান্ডির সেরা স্ট্রিং হপার পাওয়া যায়। সঙ্গে লুনু-মিরিছ, নারিকেলের চাটনি ইত্যাদি।

সিগিরিয়া রক ফোর্ট্রেস দেখতে যাই পরদিন ভোরেই। প্রথমে মিউজিয়াম দেখে সিগিরিয়া পার্কেও ভেতর দিয়ে হেঁটে যাই রক ফোর্ট্রেস। পাথর আর লোহার সিঁড়ি দিয়ে এর চূড়ায় যেতে প্রায় ৪৫ মিনিটের মতো লাগে। মাঝপথে পাথরে খোদাই করে সিংহ দরজা বানানো আছে। আরো কিছু প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে এর বিভিন্ন জায়গায়। অনেক রোদ থাকায় বেশিক্ষণ চূড়ায় থাকা হয়নি।

শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের জন্য খুবই উপযুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন দেশ শ্রীলঙ্কা। সমাজের লোকজনের আচরণে ভদ্রতা-সভ্যতার বিচারেও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শ্রীলঙ্কা সেরা। আমাদের নিকট প্রতিবেশী এত সুন্দর একটা দেশ অবশ্যই ভ্রমণ করা উচিত। বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার আবহাওয়ার মিল অনেক। একই রকম উষ্ণ এবং আর্র্দ্র আবহাওয়া সেখানে। তবে বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্য যেরকম টের পাওয়া যায়, শ্রীলঙ্কায় সেটা ঘটে না। বিষুবরেখার কাছাকাছি বলে সেখানে ঋতুভেদে তাপমাত্রার খুব একটা পরিবর্তন হয় না। তবে সেখানেও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকাল আসে। দ্বীপের দুই দিকে বর্ষা আসে বছরের দুই সময়ে। কাজেই কোন অংশে বেড়াতে যেতে চান, সেখানের আবহাওয়া কখন কেমন সেটা বুঝে শুনে গেলে ভালো হবে। শ্রীলঙ্কায় সনাতন ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেল পেতে চাইলে কলম্বো ঘুরে দেখার কোনো বিকল্প নেই। এখানে যেমন আছে ঐতিহ্যগত নিস্তব্ধতা, তেমনি আধুনিক উজ্জ্বলতাও। ইতিহাস, সংস্কৃতি, বৌদ্ধ দর্শন ইত্যাদিতে আগ্রহী হলে একটা গোটা দিন রেখে দেন জাতীয় জাদুঘরের জন্য।

তবে শ্রীলঙ্কায় নারীরা অনেক স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন মনে হলো। কারণ রাত ১১টা বা বারোটার সময় সাইকেল চালিয়ে মেয়েদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে দেখেছি বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে যা ভালো লেগেছে। সহিংসতার তেমন কোনো ভয় নেই মনে হলো।

কলম্বো শহর থেকে একটু দূরে সাগর পাড়ের ছোট শহর নিগোম্বোতে সস্তায় অনেক হোটেল আছে। আকাশছোঁয়া দামের হোটেলও আছে, তবে দামিগুলো আগে থেকেই ট্যুর গাইদের বুকিং দিয়ে ভরা। ব্যাকপ্যাকারদের জন্য ছোটখাটো সস্তাগুলোই ভালো। সাগর এখানে প্রায় শান্তই থাকে। যাদের সাগরে সাঁতারের অভ্যাস আছে তারা আরামে সাঁতরাতে পারবেন। আবহাওয়া ঠিক থাকলে তীর থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরেও সাঁতরানো যায়। অভিজ্ঞরা ১০০ মিটারেও যেতে পারবেন। নিগোম্বোতে একটা মিশনারি স্কুল আছে। স্কুলের ঠিক পাশেই ছোট্ট একটা মুদি দোকানে সকালে নারিকেলের পাটিসাপটা পিঠা বিক্রি করে। এর নাম কোকোনাট হপার। খেতে খুব সুস্বাদু।

ইতিহাস, সংস্কৃতি, বৌদ্ধ দর্শন ইত্যাদিতে আগ্রহী হলে একটা গোটা দিন রেখে দেন জাতীয় জাদুঘরের জন্য। জাতীয় জাদুঘর দালানটা খুব সুন্দর, সম্ভবত উপনিবেশিক আমলে তৈরি। জাদুঘরের সামনে বট গাছের নিচে শ্বেতশুভ্র ধ্যানরত বুদ্ধের মূর্তি আছে। যারা বৌদ্ধ দর্শনে আগ্রহী তাদের জন্য শ্রীলঙ্কাজুড়ে দেখার, শোনার, শেখার অনেক কিছু আছে। বৌদ্ধ দর্শনের ঘাঁটি হিসেবে মনে করা হয় শ্রীলঙ্কাকে। কলম্বোতে গেলে গলফেস এলাকায় যেতে পারেন। সাগরের পাশেই বিশাল মাঠে বিকাল বেলা লোকে ঘুড়ি ওড়ায়, যুবক-যুবতিরা বসে গল্প করে, বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে আসে। খুব মনোরম পরিবেশ। কলম্বোতে কেনাকাটা করতে গেলে চলে যাবেন হাউস অব ফ্যাশনসে, সবকিছু পাওয়া যায় ওখানে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com