বিশ্বের অনেক দেশে সুন্দর সুন্দর দ্বীপ আছে। ছুটির সময় সেসব দ্বীপে অনেকেই বেড়াতে যান। সে এক মজার অভিজ্ঞতা। বেড়ানোর জন্য, আমার বিবেচনায়, থাইল্যান্ডের দ্বীপগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি ভালো। ওখানকার পরিবেশ ও খাবার বেশ ভালো। আমি এ-পর্যন্ত সাতবার থাইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছি। আমি যখনই ওখানে যাই, আমার মন প্রশান্তিতে ভরে যায়; নিজেকে বেশ সুখী মনে হয়। বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদের নিয়ে থাইল্যান্ডের সামুই দ্বীপে বেড়াতে যাবো। আলিম ভাই, আপনি কি কখনো থাইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছিলেন?
আলিম. না, সুবর্ণা, থাইল্যান্ডে বেড়াতে যাবার সুযোগ আমার এখনো হয়নি। তবে, আমার খুব ইচ্ছে, ওখানে বেড়াতে যাওয়ার। আশা করি আমি সে-সুযোগ পাবো।
সুবর্ণা. আশা করি আপনি সে সুযোগ পাবেন। আমি নিশ্চিত ওখানে গেলে আপনার ভালো লাগবে। বিশেষ করে ওখানকার দ্বীপগুলো আপনাকে বেশ আকর্ষণ করবে। আসলে থাইল্যান্ডের উপকূলীয় এলাকায় অনেক ছোট ছোট দ্বীপ আছে। দ্বীপগুলোতে নানা ধরনের হোটেল ও রিসোর্ট আছে। এসব দ্বীপের মধ্যে সামুই দ্বীপ উল্লেখযোগ্য। রাজধানী ব্যাংকক থেকে আকাশ পথে এক ঘন্টায় দেশটির দক্ষিণে অবস্থিত এ দ্বীপে পৌঁছানো যায়। দ্বীপের মোট আয়তন ২৪৭ বর্গকিলোমিটার। এটি থাইল্যান্ডের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। এর আশেপাশে আরো ৮০টি ছোট দ্বীপ রয়েছে। তবে সেগুলোর অধিকাংশই নির্জন। দ্বীপগুলোর মধ্যে মাত্র ৪টিতে মানুষ বাস করে।
এখানকার সৈকতের রঙ সাদা, সমুদ্রের পানি সবুজাভ নীল। সমুদ্রের পানিতে নানা ধরনের বহুবর্ণ মাছ ও প্রবাল দেখা যায়। ২০ বছর আগেও সামুই দ্বীপে কোনো লোক বাস করতো না। দ্বীপ থেকে রাজধানীতে নারিকেল পরিবহণের সময় পাশ্চাত্যের একদল পর্যটক সর্বপ্রথম এই দ্বীপের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য আবিষ্কার করেন। বর্তমানে দ্বীপটি থাইল্যান্ডের সবচে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর অন্যতম। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০টি বিমান ব্যাংকক, ফুকেট, সিংগাপুর ও হংকং থেকে এ দ্বীপে যাতায়াত করে।
আলিম. আচ্ছা, আপনার মুখ থেকে সামুই দ্বীপের সুন্দর দৃশ্যের পরিচয় শোনার আগে চলুন একটি গান শোনা যাক। ছোট্ট দ্বীপে বসে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করার অনুভূতি ফুটে উঠেছে এ গানটিতে।
সুবর্ণা. সামুই দ্বীপ আমার খুব প্রিয়। কয়েক বছর আগে আমি থাইল্যান্ডের ফুকেট দ্বীপে বেড়াতে যাওয়ার সময় এ সামুই’র নাম শুনি। তখন স্থানীয় এক গাইড আমাকে বলেছিলেন, সামুই-এর দৃশ্য থাইল্যান্ডের দ্বীপগুলোর মধ্যে সবচে সুন্দর এবং স্থানীয় অঞ্চলের লোকও খুবই আন্তরিক। বিমান থেকে নেমে এ ছোট দ্বীপে পৌঁছার পরপর আমি বুঝেছিলাম, গাইড একটুও বাড়িয়ে বলেননি। আমার মন দারুণ এক প্রশান্তিতে ভরে গিয়েছিল। এ দ্বীপে নারিকেল গাছের ঘন বন আছে। এখানকার সৈকতের পানি স্বচ্ছ।
আলিম. শুনেছি সামুই দ্বীপে বেশ কয়েকটি সৈকত আছে এবং প্রতি সৈকতের প্রাকৃতিক দৃশ্যই দারুণ সুন্দর। এসব সৈকতের মধ্যে ছাওয়েং (chaweng) আর লামাই (lamai)-এ পর্যটকেদর আনাগোনা সবচে বেশি। দুটি সৈকতই দ্বীপের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। ছাওয়েং সৈকতের দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার। এর আকার বাঁকা চাঁদের মতো। সবুজ পাহাড় ও রিফের কোলে এ সৈকতের পরিবেশ দারুণ সুন্দর। সামুই দ্বীপে বেশ কয়েকটি পাঁচ তারা হোটেল আছে।
সুবর্ণা. হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। আমি ছাওয়েং সৈকতের কাছে এক হোটেলে ছিলাম। এ সৈকতের কাছে নানা ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। এখানকার পাব স্ট্রিট ও নাইট বাজারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের দেখা যায়। ছাওয়েং সৈকতের কাছেই লামাই সৈকত। সেখানকার পরিবেশ ছাওয়েংয়ের তুলনায় নিরিবিলি। তবে এখানেও ডাইভিং, নৌকা-ভ্রমণ ও সার্ফিংসহ বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। তা ছাড়া, সামুই বিমান বন্দরের কাছে একটি পাহাড়ে সোনালী রঙয়ের একটি বড় বুদ্ধের মূর্তি আছে। বুদ্ধের মূর্তির কাছে বসে সূর্যাস্তের অনুপম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। আমি সেখানে অনেক প্রেমিক ও প্রেমিকা দেখেছি, যারা একসঙ্গে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করে। খুবই রোমান্টিক পরিবেশ সৃষ্টি হয় তখন।
আলিম. এক সময় সামুই দ্বীপের বাসিন্দাদের জীবিকার প্রধান উত্স ছিল কৃষিকাজ। এখানে প্রচুর নারিকেল গাছ আছে। রাস্তায় হাঁটলে নারিকেলের সুগন্ধ পাওয়া যায়। তো, প্রতি মাসে প্রায় ২০ লাখ নারিকেল সামুই থেকে রাজধানী ব্যাংককে যায়। সামুইকে ‘নারিকেল দ্বীপ’ নামেও ডাকা হয়।
সুবর্ণা. সামুই দ্বীপের সাথে ব্যাংককের অনেক পার্থক্য। ব্যাংককের মতো দ্বীপটি লোকজনে গমগম করে না। এখানে এলে কেমন একটা আদিম গন্ধ পাওয়া যায়। এখানে আসা পর্যটকদের সবচে প্রিয় স্থান সৈকত। আঁকাবাঁকা সৈকত, সমুদ্রের স্বচ্ছ পানি পর্যটকদের বেশ টানে। এখানে সূর্যস্নান করা, সাঁতার কাটা, সমুদ্রের জলে মোটরবোট চালানো, সৈকতে ভলিবল খেলা, সৈকতের কাছাকাছি স্থানে স্পা করা—এ সবকিছুই পর্যটকদের বিনোদনের মাধ্যম। নারিকেলের জ্যুস বা নারিকেলের তৈরী আইসক্রিমও পর্যটকদের বেশ প্রিয়।
আলিম. সামুই দ্বীপের কথা শুনে আমার কিন্তু সেখানে যেতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু বেড়াতে যাওয়া মানেই তো অর্থব্যয়। আচ্ছা, আমি যদি পেইচিং থেকে সেখানে বেড়াতে যেতে চাই তাহলে আমার বাজেট কেমন হওয়া উচিত?
সুবর্ণা. আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে আপনি সামুই দ্বীপ ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন। বাজেটও ঠিক করবেন সেভাবে। আমি মনে করি বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে বিমান ভাড়া ও হোটেলের খরচ। বিমানের খরচ সম্পর্কেতো আপনাদের ধারণা আছেই। আমি জানাচ্ছি হোটেলের খরচ কেমন হবে। সামুই দ্বীপে অনেক সস্তা হোটেলও আছে।
এসব হোটেলের প্রতিদিনকার রুম ভাড়া ২০০ ইউয়ান বা ৩৩ ডলারের মতো। আর নাইট বাজারে ৫০ ইউয়ান বা ৮ ডলার খরচ করে আপনি সুস্বাদু খাবার খেতে পারেন। এখানকার এক ধরনের মিষ্টি খাবার আমার অতি প্রিয়। এর নাম প্যানকেক। এটা সাধারণত কলা ও আম দিয়ে তৈরী করা হয়। এ ছাড়া, ডিম দিয়ে তৈরী একধরণের হাল্কা প্যানকেকও পাওয়া যায়। এই কেকের মাঝখানে কলা, আম ও অন্যান্য ফলের টুকরা থাকে। এটি খেতে খুবই সুস্বাদু। প্রতিটি প্যানকেকের দাম মাত্র ৬ ইউয়ান বা এক ডলার।