ভবিষ্যতের শহর সিঙ্গাপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যের মাঝে একটি। উচ্চমানের প্রযুক্তি এবং অনেকগুলো সংস্কৃতির মিশ্রণে তৈরি সিঙ্গাপুর। মাত্র ৭১০ কিলোমিটার এলাকা বিশিষ্ট ভূখণ্ডটি মূলত একটি নগর রাষ্ট্র, কারণ এখানে একটি শহরের মাঝেই এর যাবতীয় সব কর্মকাণ্ড দেখা যায়। ব্যবসা, চিকিৎসা কিংবা ঘুরতে যাওয়ার জন্য সিঙ্গাপুর বর্তমানে অনেকের ভ্রমনের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সিঙ্গাপুর ঘুরার কিছু বিশেষ টিপস।
কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য ফ্লাইট ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। তবে ফ্লাইটটাই একটু সচেতনভাবে বুকিং করলে সাধারণের তুলনায় বেশ কম খরচে ঘুরে আসা সম্ভব। সিঙ্গাপুর ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময় ডিসেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত। তবে এর বাইরেও আবহাওয়া যে খুব একটা খারাপ থাকে তা নয়। মোটামুটি বছর জুড়েই ঘুরার মত একটি গন্তব্য এটি। ২-৩ সপ্তাহ আগে থেকে ফ্লাইট বুকিং করাটা প্রথমত বুদ্ধিমানের কাজ। তাই এই শীতেই যদি ঘুরে আসতে চান সিঙ্গাপুর, তবে ফ্লাইট বুকিং করে ফেলা দরকার এখনই।
সচেতনভাবে ফ্লাইট বুক করার আরেকটি ধাপ হল বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের মাঝে দামের তুলনা করে দেখা। বিভিন্ন তারিখে ফ্লাইটগুলোর মাঝে দেখা যায় বিশেষ পার্থক্য। কারণ অনেক সময়ই বিশেষ অফারের কারণে কিছু ফ্লাইটের মূল্য কম থাকে। আবার একই এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন সময়ের ফ্লাইটে থাকতে পারে ভিন্ন রকমের দাম। তবে সেরা মূল্য নির্ধারণ করার জন্য অফলাইনে তেমন কোন সুযোগ নেই। অনলাইনে বিভিন্ন ফ্লাইটের দামের তারতম্য করতে দেখে নিতে পারেন গোযায়ান। পছন্দের তারিখ এবং দামের ভিত্তিতে খুঁজতে পারবেন আপনার জন্য সেরা ফ্লাইট। তাছাড়া বিভিন্ন পেমেন্ট মাধ্যমের উপর আছে আলাদা বিশেষ ছাড়ও। খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলে ব্যবহার করতে পারবেন তাদের ০% ই এম আই সুবিধাটি। মানে এখনি ঘুরতে যেয়ে, পেমেন্ট করা সম্ভব কিস্তিতে।
কোথায় ঘুরবেন
সিঙ্গাপুরের নামের সাথে আছে অনেকগুলো কৃতিত্বের স্বীকৃতি। সবচেয়ে পরিষ্কার, সুপরিকল্পিত এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বিনোদনমূলক হিসেবেও পরিচিত এই নগর রাষ্ট্রটি। “সিংহের শহর” টিতে আরও আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় “ইনফিনিটি পুল”, নিশাচর প্রাণীদের দেখার জন্য পৃথিবীর প্রথম সাফারি পার্ক এবং পৃথিবীর সেরা খাবারগুলোর কিছু নিদর্শন।
সিঙ্গাপুর ভ্রমণটা শুরু হতে পারে বিখ্যাত চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকেই। চার দেওয়ালের মাঝেই ৭তলা উচ্চতাবিশিষ্ট ঝর্না চাঙ্গি বিমানবন্দরের অন্যতম আকর্ষণ। ঝর্নার চারপাশের বাগান আবার উপভোগ করা যায় ঝুলন্ত সেতু থেকে। চাঙ্গি বিমানবন্দরের জনপ্রিয়তা এতোই সুদূরপ্রসারী যে অনেকে ইচ্ছা করে লম্বা যাত্রাবিরতি চান এই দেশে। অন্য দেশ ঘুরার মাঝেও যদি সিঙ্গাপুরের একাংশ ঘুরে দেখতে চান, তবে এই লম্বা যাত্রাবিরতিই হতে পারে আপনার জন্য সেরা পথ। পর্যাপ্ত সময় যাত্রাবিরতি নিশ্চিত করতেও দেখে নিতে পারেন গোযায়ান। প্রতিটি ফ্লাইটের যাত্রাবিরতির সম্পূর্ণ হিসাব আছে তাদের ওয়েবসাইটে।
অর্ধেক মাছ, অর্ধেক সিংহের অবয়বে তৈরি “মের-লাইওন” মূর্তিটি সিঙ্গাপুরকে যথাযথ “সিংহের শহর” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। ২৮ ফিট উঁচু এই মূর্তিটি দেখতে যেতে হবে শহরের কেন্দ্রের “মারিনা বে” এর কাছে। সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যের মাঝে আরেকটি হল “গার্ডেনস বাই দ্যা বে”। উদ্যানবিদ্যার এতো সমৃদ্ধ নিদর্শন পৃথিবীতে কমই আছে। প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিত সংরক্ষিত আছে এই বৃহৎ বাগানে। এছাড়া সেন্তোসা দ্বীপ, দক্ষিণ রিজ অঞ্চল, বোটানিক্যাল গার্ডেন ইত্যাদি আছে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে।
কি কি খাবেন
ভোজন রসিকদের জন্য সিঙ্গাপুর একধরনের স্বর্গ বলা যেতে পারে। মালয়েশিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইন্ডিয়া এবং পশ্চিমা প্রভাব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে সিঙ্গাপুরের রন্ধনপ্রণালী। বিখ্যাত খাবারের মধ্যে আছে “হাইয়ানিজ চিকেন”। সাধাসিধে সিদ্ধ মুরগির মাংস এবং মসলাদার ভাত দিয়ে খাবারটি তৈরি হয়। সাথের মসলাদার সসটির জন্যই খাবারটি বেশি জনপ্রিয়। এরপরেই আছে “চিলি ক্র্যাব” কিংবা ঝাল কাকরা। কাকরা ভাজি করে টমেটো, মরিচ, পিয়াজ ইত্যাদির সমন্বয়ে তৈরি ঝোলের সাথে তা মেশানো হয়। খাবারটি খুবই জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু।
চাইনিজ এবং মালয়েশিয়ার প্রভাব মিলিয়ে তৈরি “লাকসা” আরেকটি মুখরোচক খাবার। নারিকেলের দুধ এবং মসলার সমন্বয়ে তৈরি ঝোলের মাঝে রান্না করা হয় চালের নুডুলস। এটার সাথে সাধারণত ডিম, চিংড়ি, মাছ বা মাংস ইত্যাদি খাওয়া হয়। নুডুলসের মাঝে আরেকটি জনপ্রিয় পদ “হোক্কিয়েন প্রন মি”। এটার সাথে “সাম্বাল” খাওয়া হয় সাধারণত। “স্যাটে” নামক গ্রিল করা মাংসও সিঙ্গাপুরের একটি মজাদার খাবার।
ঘুরাঘুরির জন্য সেরা মৌসুম এখনই। তাই দেরি না করে পরিকল্পনা করে ফেলুন আপনার স্বপ্নের সিঙ্গাপুর ট্যুর।