সময়টা এপ্রিল মাসের প্রথমের দিকে, আমি একদল পড়ুয়ার সাহচর্যে ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে মধ্যরাত্রিতে কলকাতা নিউ জলপাইগুড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপে নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশে রওনা দিলাম। ট্রেন ছাড়ল এবং এক অপূর্ব তালে তালে চাকার বোল তুলে সে ছুটে চলল। এই গতির নেশায় সবকিছু তুচ্ছ জ্ঞান করে অজানার আকুল আহ্বানে অজানার উদ্দেশে পাড়ি দিলাম। ট্রেনে ওঠার পর সবাই পড়ল ঘুমিয়ে। কিন্তু আমার তো আনন্দে উত্তেজনায় রাতের নিদ্রা তিরোহিত হল। খোলা জানলার ভিতর দিয়ে নিশুতি রাতের রূপ দেখছিলাম, তাতে আমার অন্তরাত্মা দৈনন্দিন কর্মক্লান্ত গ্লানিময় জীবনের অজ্ঞতা, মূঢ়তা ও সংকীর্ণতা সব প্রক্ষালন করে পেয়েছিলাম বিমল আনন্দ।
পরদিন সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে আমাদের ট্রেনের গতি শ্লথ হয়ে এল। আমরা নামার জন্য প্রস্তুত হলাম। তখন স্টেশনে নানা শব্দ-কোলাহল, লোকজনের ছুটোছুটি, ফেরিওয়ালাদের উৎপাত। আমরা স্টেশনে এসক্যালেটরে করে নীচে নামলাম। লাটাগুড়িতে বুক করা রিসর্টের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য মোটরগাড়ি আগে থেকেই স্টেশনের বাইরে অপেক্ষারত ছিল। আমরা সেই গাড়িতে চেপে রিসর্টের উদ্দেশে রওনা দিলাম। লাটাগুড়ি গ্রামের অভ্যন্তরে চা-বাগানের মাঝে গড়ে ওঠা লাটাগুড়ির ওই ইকো রিসোর্টের পিছনে ও সামনে পুরো এলাকা জুড়ে আছে বিশাল চা বাগান। রিসর্টের চারপাশ সবুজের সমারোহ। চা বাগানের ভিতর দিয়েই প্রবেশ করতে হয় নান্দনিক এই রিসর্টে। মৃদুমন্দ বাতাসেও ভিজে ভাব। পুরো আকাশ ঢাকা না থাকলেও আকাশে জলভরা মেঘেদের ইতস্তত আনাগোনা। তার সঙ্গে অন্য মাত্রা পায় কোকিল ও ময়ূরের ডাক। সেদিন সন্ধ্যায় রিসর্টে ওঁরাওদের গানের সুরে দলগত নাচ পরিবেশন করেন ওঁরাও আদিবাসী মহিলারা। ঝমকি, কিরকিরি, ধামসা, মাদল প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রে তাঁদের সঙ্গত দেন ওঁরাও পুরুষেরা। ওঁরাওদের প্রথাগত নাচের তালে পা মেলালেন আমাদের বান্ধবীরা।
প্রথম তিনদিন ধরে আমরা নেওড়ানদী চা বাগান, কালামাটি বনবসতি ও উত্তর ঝাড়মাটিয়ালি গ্রামে ক্ষেত্র সমীক্ষার কাজ চালিয়ে রাজবংশী, ওঁরাও জনগোষ্ঠী সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করলাম। শেষদিনটা ছিল শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্য। তাই, প্রথমেই যাওয়া হল কালিম্পং জেলায় সামসিং। একসঙ্গে চা বাগান, নদী আর পাহাড়ের সমাবেশ। দু’পাশে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে আমাদের গাড়ি এসে দাঁড়াল ভিউ পয়েন্টে যেখানে রাস্তার একদিকে চা বাগান আর অন্যদিকে বেশ খানিকটা নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে মূর্তি নদী। তারপরেই সবুজ পাহাড়ের রেঞ্জ। একদিকে চা বাগানের নিস্তব্ধতার ঘনিষ্ঠতা, অন্য দিকে ধূসর পাথরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নদীর গর্জন; সব মিলিয়ে সামসিং যেন ছবির মতো। সামসিং পেরিয়েই রকি আইল্যান্ড। মূর্তি নদী এখানে বড় বড় পাথরের মধ্যে এক অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তৈরি করেছে যা সকল ভ্রমণপ্রেমী মানুষকেই হাতছানি দেয়।
এরপর যাওয়া হল পরের গন্তব্যে। আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলল চালসা থেকে কুমানি, গৈরিবাস হয়ে জঙ্গলের পথ দিয়ে ঝালং-এর দিকে। ঝালং একটি অপূর্ব সুন্দর গ্রাম। ঝালং দিয়েই বয়ে চলেছে জলঢাকা নদী। রূপালি ফিতের মতো জলঢাকা নদী। নীল জল। ওপরে ছোট্ট একটা ব্রিজ। এই স্থানটি অপূর্ব নিরিবিলি ভ্রমনক্ষেত্র। এখানে কাঠের ঘরবাড়ি, রাস্তার ধারে কমলালেবুর বাগান, ধূসর পাহাড়ের গায়ে ঘন সবুজ বন এবং ঝরনার শব্দ মিলিয়ে একটা মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
এরপর যাওয়া হল আমাদের শেষ গন্তব্য বিন্দুতে। পাহাড়ি রাস্তা ধরে আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে। আহা প্রান জুড়িয়ে যায়। যত উপরে উঠছি বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। ঝালং-এর পাশেই ছবির মতো পাহাড়ি গ্রাম বিন্দু। এটি হচ্ছে ভারত ও ভুটানের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম এটিকে ভারতের শেষ গ্রাম বলেও ধরা হয়। এখানে রয়েছে জলঢাকা জলবিদ্যুৎ ব্যারেজ। এখানে বিন্দুর ড্যাম সত্যি দেখার মতো। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। আমার আবেগপ্রবণ মনকে বেশ খানিকটা প্রশ্রয় দিলাম। ঠিক করলাম পাহাড়ের খাঁজে পা দিয়ে নীচে নামব। এখানে আমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ক্যামেরাবন্দি করলাম।
এখানে প্রচুর গাছগাছালি রয়েছে ফায়ারবল, পিটুনিয়া, গ্ল্যাডিয়োলা আর অর্কিডের ফুল। বিন্দুতে জলঢাকা ব্যারেজের ওপারে ভুটান। বাঁধের উপর পায়ে হেঁটে হেঁটেই দেখে নেওয়া যায় ওপারের ভুটানের চৌহদ্দি। বিন্দু নদী জলঢাকায় মিশেছে। নদীর গা থেকে খাড়াই উঠে গিয়েছে ভুটান পাহাড়। তবে আকাশ পরিচ্ছন্ন থাকায় বিন্দু থেকে হিমালয়ের বরফশৃঙ্গ দেখার সৌভাগ্য হয়ছিল। এই এলাকার নৈস্বর্গিক প্রকৃতি সকলের মন ছুঁয়ে যায়। ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃতির অবারিত সান্নিধ্যে দাঁড়িয়ে বিস্ময় বিমুগ্ধ হৃদয় এক অনির্বচনীয় আনন্দ অনুভব করলাম। পরদিন বাড়ি ফেরার পালা। পড়ন্ত বিকালবেলায় এতদিনের প্রাপ্তির স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে সবাই মিলে স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম। নৈশাহার সেরে ট্রেনে চাপলাম বাড়ির উদ্দেশে। এই কয়েকটা দিন ধরে ঘুরে অনেক অভিজ্ঞতা জমা যা সত্যিই অভিনব।
পরদিন সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে আমাদের ট্রেনের গতি শ্লথ হয়ে এল। আমরা নামার জন্য প্রস্তুত হলাম। তখন স্টেশনে নানা শব্দ-কোলাহল, লোকজনের ছুটোছুটি, ফেরিওয়ালাদের উৎপাত। আমরা স্টেশনে এসক্যালেটরে করে নীচে নামলাম। লাটাগুড়িতে বুক করা রিসর্টের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য মোটরগাড়ি আগে থেকেই স্টেশনের বাইরে অপেক্ষারত ছিল। আমরা সেই গাড়িতে চেপে রিসর্টের উদ্দেশে রওনা দিলাম। লাটাগুড়ি গ্রামের অভ্যন্তরে চা-বাগানের মাঝে গড়ে ওঠা লাটাগুড়ির ওই ইকো রিসোর্টের পিছনে ও সামনে পুরো এলাকা জুড়ে আছে বিশাল চা বাগান। রিসর্টের চারপাশ সবুজের সমারোহ। চা বাগানের ভিতর দিয়েই প্রবেশ করতে হয় নান্দনিক এই রিসর্টে। মৃদুমন্দ বাতাসেও ভিজে ভাব। পুরো আকাশ ঢাকা না থাকলেও আকাশে জলভরা মেঘেদের ইতস্তত আনাগোনা। তার সঙ্গে অন্য মাত্রা পায় কোকিল ও ময়ূরের ডাক। সেদিন সন্ধ্যায় রিসর্টে ওঁরাওদের গানের সুরে দলগত নাচ পরিবেশন করেন ওঁরাও আদিবাসী মহিলারা। ঝমকি, কিরকিরি, ধামসা, মাদল প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রে তাঁদের সঙ্গত দেন ওঁরাও পুরুষেরা। ওঁরাওদের প্রথাগত নাচের তালে পা মেলালেন আমাদের বান্ধবীরা।
প্রথম তিনদিন ধরে আমরা নেওড়ানদী চা বাগান, কালামাটি বনবসতি ও উত্তর ঝাড়মাটিয়ালি গ্রামে ক্ষেত্র সমীক্ষার কাজ চালিয়ে রাজবংশী, ওঁরাও জনগোষ্ঠী সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করলাম। শেষদিনটা ছিল শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্য। তাই, প্রথমেই যাওয়া হল কালিম্পং জেলায় সামসিং। একসঙ্গে চা বাগান, নদী আর পাহাড়ের সমাবেশ। দু’পাশে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে আমাদের গাড়ি এসে দাঁড়াল ভিউ পয়েন্টে যেখানে রাস্তার একদিকে চা বাগান আর অন্যদিকে বেশ খানিকটা নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে মূর্তি নদী। তারপরেই সবুজ পাহাড়ের রেঞ্জ। একদিকে চা বাগানের নিস্তব্ধতার ঘনিষ্ঠতা, অন্য দিকে ধূসর পাথরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নদীর গর্জন; সব মিলিয়ে সামসিং যেন ছবির মতো। সামসিং পেরিয়েই রকি আইল্যান্ড। মূর্তি নদী এখানে বড় বড় পাথরের মধ্যে এক অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তৈরি করেছে যা সকল ভ্রমণপ্রেমী মানুষকেই হাতছানি দেয়।
এরপর যাওয়া হল পরের গন্তব্যে। আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলল চালসা থেকে কুমানি, গৈরিবাস হয়ে জঙ্গলের পথ দিয়ে ঝালং-এর দিকে। ঝালং একটি অপূর্ব সুন্দর গ্রাম। ঝালং দিয়েই বয়ে চলেছে জলঢাকা নদী। রূপালি ফিতের মতো জলঢাকা নদী। নীল জল। ওপরে ছোট্ট একটা ব্রিজ। এই স্থানটি অপূর্ব নিরিবিলি ভ্রমনক্ষেত্র। এখানে কাঠের ঘরবাড়ি, রাস্তার ধারে কমলালেবুর বাগান, ধূসর পাহাড়ের গায়ে ঘন সবুজ বন এবং ঝরনার শব্দ মিলিয়ে একটা মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
এরপর যাওয়া হল আমাদের শেষ গন্তব্য বিন্দুতে। পাহাড়ি রাস্তা ধরে আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে। আহা প্রান জুড়িয়ে যায়। যত উপরে উঠছি বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। ঝালং-এর পাশেই ছবির মতো পাহাড়ি গ্রাম বিন্দু। এটি হচ্ছে ভারত ও ভুটানের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম এটিকে ভারতের শেষ গ্রাম বলেও ধরা হয়। এখানে রয়েছে জলঢাকা জলবিদ্যুৎ ব্যারেজ। এখানে বিন্দুর ড্যাম সত্যি দেখার মতো। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। আমার আবেগপ্রবণ মনকে বেশ খানিকটা প্রশ্রয় দিলাম। ঠিক করলাম পাহাড়ের খাঁজে পা দিয়ে নীচে নামব। এখানে আমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ক্যামেরাবন্দি করলাম। এখানে প্রচুর গাছগাছালি রয়েছে ফায়ারবল, পিটুনিয়া, গ্ল্যাডিয়োলা আর অর্কিডের ফুল।
বিন্দুতে জলঢাকা ব্যারেজের ওপারে ভুটান। বাঁধের উপর পায়ে হেঁটে হেঁটেই দেখে নেওয়া যায় ওপারের ভুটানের চৌহদ্দি। বিন্দু নদী জলঢাকায় মিশেছে। নদীর গা থেকে খাড়াই উঠে গিয়েছে ভুটান পাহাড়। তবে আকাশ পরিচ্ছন্ন থাকায় বিন্দু থেকে হিমালয়ের বরফশৃঙ্গ দেখার সৌভাগ্য হয়ছিল। এই এলাকার নৈস্বর্গিক প্রকৃতি সকলের মন ছুঁয়ে যায়। ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃতির অবারিত সান্নিধ্যে দাঁড়িয়ে বিস্ময় বিমুগ্ধ হৃদয় এক অনির্বচনীয় আনন্দ অনুভব করলাম। পরদিন বাড়ি ফেরার পালা। পড়ন্ত বিকালবেলায় এতদিনের প্রাপ্তির স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে সবাই মিলে স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম। নৈশাহার সেরে ট্রেনে চাপলাম বাড়ির উদ্দেশে। এই কয়েকটা দিন ধরে ঘুরে অনেক অভিজ্ঞতা জমা যা সত্যিই অভিনব।