থাইল্যান্ডের বৃহত্তম দ্বীপ হলো ‘ফুকে’। এটি থাইল্যান্ডের আরেকটি পর্যটন-স্বর্গরাজ্য। ব্যাংকক থেকে ৮৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপ। এখানকার প্রধান দ্রব্য হলো টিন ও রাবার। থাও থেপ কাসাত্রি এবং থাও সিসুনথন মূর্তি এই দ্বীপের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
ফুকে একটা সুন্দরতম দ্বীপ যার আছে খাড়ি, উপসাগর, পাম ঘেরা সাদা সমুদ্র সৈকত, দ্বীপঘন সাগর, বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ, সুন্দর থাকার ব্যবস্থা, দারুণ সামুদ্রিক খাবার, রাজকীয় পাহাড়, আয়েশি জলপ্রপাত এবং অনেক সামুদ্রিক পার্ক। ফুকে অবশ্যই আপনাকে মধুর স্মৃতিসম্ভার তৈরি করতে পারে।
ফুকেতে অবস্থানকালে অনেককিছু দেখার ও করার আছে। এখানে এসে যদি কিছু করতে না চান, তাহলে আপনি সৈকতের সাদা বালির উপরে বিশ্রাম নিতে পারেন।
মাই খাও সৈকত
বিভিন্ন সৈকতের বিভিন্ন নিজস্ব বৈচিত্র্য রয়েছে। প্রথমটি হলো মাই খাও যা এখানকার দীর্ঘতম সৈকত। পরবর্তী সৈকত হলো নাই ইয়াং। এটা একটি বিশাল সমুদ্র সৈকত সাঁতার কাটা ও বিশ্রাম নেয়ার জন্য। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সামুদ্রিক কচ্ছপগুলি এখানে ডিম দেয়। আপনি যদি সমুদ্র থেকে ভিতরের দিকে এগিয়ে যান, তাহলে দেখতে পাবেন ওয়াত ফ্রা থং; যেখানে আপনি আংশিক সমাধির সংরক্ষিত বুদ্ধমুর্তি দেখতে পাবেন।
কারন ও কাটা সৈকত:
এই দুইটি সৈকত হলো কারন ও কাটা। এগুলি খুবই শান্তিপূর্ণ সাগর সৈকত আপনাকে সম্পূর্ণ সূর্যালোকে সাঁতার কাটা, স্নরকেলিং ও রৌদ্রস্নান করার সুযোগ দেবে। কাটাতে কিছু অংশ জুড়ে আছে ক্লাব মেডিটারেনিয়ান। সাদা নাই হান সৈকত ফুকের দক্ষিণাংশ জুড়ে রয়েছে। আপনি এই সমুদ্র সৈকতে জলক্রীড়া করতে পারেন অনায়াসে।
প্রমথেপ অন্তরীপ একটা দেখার মতো জায়গা। এখানে সূর্যাস্ত দেখা যায়। কারণ এটা সমুদ্র সৈকতের একদম দক্ষিণ দিকে অবস্থিত।
রাওয়াই সৈকত
সর্বশেষ সৈকত হলো রাওয়াই যেখানে আপনি আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। এখানে অনেক উপকূলবর্তী দ্বীপ আছে যে সৈকতে সুন্দর ও সাদা রঙের বালি রয়েছে। আপনি এখানে পানির নীচের দারুণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এই সৌন্দর্য স্কুবা ডাইভার ও জেলেদের আকর্ষণ করে।
সমুদ্র ছাড়াও ফুকেতে অনেক প্রাকৃতিক স্থান রয়েছে উপভোগের জন্য। যেমন আছে টন সাই জলপ্রপাত, ফরেস্ট পার্ক এবং খাও ফ্রা থায়ে বন্যপ্রাণী পার্ক যেখানে আপনি পাখি, ভল্লুক ও বানর দেখা এবং সেই সঙ্গে জলপ্রপাত ও গাছপালা দেখতে পাবেন। যদি উত্তর-পূর্ব দিকে যান, তাহলে দেখতে পাবেন চালং বে যেখানে ওয়াত চালং এ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের প্রতিমূর্তি সংরক্ষিত আছে। আর যদি দক্ষিণে যান তাহলে আপনি পৌঁছে যাবেন ফানওয়া অন্তরীপে যেখানে একটা মেরিন বায়োলজি রিসার্চ সেন্টার আছে আর আছে অ্যাকুয়ারিয়াম নানা জাতের সামুদ্রিক প্রাণী।
খাবার:
ফুকে দ্বীপে থাই, চীনা আর ইসলামি খাবার পাবেন। ফুকেতে পাওয়া সামুদ্রিক খাদ্য থাইল্যান্ডে পাওয়া সব সিফুডের মধ্যে সেরা। থাইল্যান্ডের দক্ষিণের খাবার মশলাদার কিন্তু মজাদার। যদি আরও প্রাকৃতিক খাবার খেতে চান তাহলে দ্বীপে যেসব ফলমূল পাওয়া যায় সেগুলোর স্বাদ নিতে পারেন। এখানে আনারস ও নারকেল জন্মায়। এ ছাড়া এখানে অনেক কফিশপ আছে, যেখানে আপনি সুস্বাদু কফি পান করতে পারবেন।
কেনাকাটা:
গরম থেকে বাঁচতে কেনাকাটার জন্য বের হতে পারেন। সুভিনির হিসেবে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার মতো অনেক সুন্দর সুন্দর হস্তশিল্প এখানে পাওয়া যায়। ঝিনুক ও কোরাল অলংকার এমনকি চাষ করা মুক্তা দিয়ে তৈরি অনেক হস্তশিল্পও রয়েছে।
থাকার ব্যবস্থা
একবার এসে পড়লে নিশ্চয় আপনাকে কোথাও-না-কোথাও থাকতে হবে। ফুকেতে হোটেল ও প্রমোদ নিবাসের মধ্যে আছে আমানপুরি ফুকে, সেন্ট্রাল ওয়াটারফ্রন্ট হোটেল ফুকে, দি চেদি ফুকে, দি দুসেত লেগুনা রিজোর্ট হোটেল ফুকে, লি রয়্যাল মেরিডিয়ান ফুকে এবং ইয়ট ক্লাব ফুকে এগুলো হলো প্রথম শ্রেণীর যা আপনাকে ফুকে শহরে থাকাকালীন ফ্রি যানবাহন সুবিধা দেবে। সাশ্রয়ী খরচে থাকার জায়গাও রয়েছে। আপনি যদি প্রথম শ্রেণীর হোটেলে থাকেন তাহলে কেবিন ও বাংলো কমপ্লেক্স পেতে পারেন। আপনার যদি প্রথম শ্রেণীতে থাকতে না চান তাহলে স্থানীয় স্টাইলের কমপ্লেক্সগুলোতে থাকতে পারেন; যেগুলি বাঁশ, রত্তন ও খড়ের তৈরি।
ফুকে দ্বীপের আশেপাশে অনেক ছোট্ট ছোট্ট দ্বীপ আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো জেমস বন্ড দ্বীপ এবং ফিফি দ্বীপ। এ দুটি দ্বীপ ঘুরতে গেলে মনে হবে স্বপ্নিল কোনো জগতে বিচরণ করছেন আপনি। এ ছাড়া বাঘ-সিংহ থেকে শুরু করে জিরাফ, গণ্ডার, ময়ূর, হরিণ, ভাল্লুকসহ হরেক জীবজন্তু আর পাখপাখালির যেন মেলা বসে সাফারি ওয়ার্ল্ডে। ০০৭-খ্যাত জেমস বন্ড সিরিজের চলচ্চিত্রের জীবন্ত প্রদর্শনী দেখা যাবে এই পার্কে।
ফি-ফি দ্বীপপুঞ্জ
থাইল্যান্ডের ফি-ফি দ্বীপপুঞ্জ, ফুকের দ্বীপ এবং মলাক্কার পশ্চিম প্রণালীর মাঝখানে অবস্থিত। এই সমষ্টিগত দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বৃহত্তম দ্বীপটি কোহ ফি-ফি ডন হিসাবে পরিচিত। ফি-ফি দ্বীপপুঞ্জগুলি তাদের নান্দনিক বা শিল্পরুচিসম্মত সৌন্দর্যের জন্য বেশ পরিচিত এবং প্রতি বছর বিরাট সংখ্যক পর্যটক সেখানে বেড়াতে যান। জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা দ্বারা দ্বীপটির সমুদ্র-সৈকত এবং স্বচ্ছ ফোয়ারা সংরক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে সামুদ্রিক বিনোদনমূলক কার্যক্রম যেমন স্নরকেলিং এবং স্কুবা ডাইভিং-এর জন্য কোহ ফি-ফি হলো বিশ্বের অন্যতম প্রসিদ্ধ গন্তব্যস্থল।