লালবাগ কেল্লা রাজধানী ঢাকার দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বংশাল থানার লালবাগ নামক জায়গায় অবস্থিত। লালবাগ কেল্লার প্রাচীন নাম ছিল ‘কিল্লা আওরঙ্গবাদ’। ৩০০ বছরেরও বেশি বয়স এই কেল্লার। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে লালবাগ কেল্লার আজও কালের সাক্ষী বহন করছে।
দেশের অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান। এর আয়তন ১৯ একর। লালবাগ কেল্লার যে ছবিটি বেশি ব্যবহৃত হয় তা পরীবিবির সমাধি। এটি চতুষ্কোণ আকৃতির। বিশাল আকৃতির তিনটি দরজা আছে। এর ভেতর একটি দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত।
পরীবিবির সমাধীকে অনেকে আবার পরীবিবির মাজার বলে। এর ভেতরে আছে ৯টি কক্ষ। একটি গম্বুজও আছে, যা আগে সোনার ছিল, এখন সেটি তামা দিয়ে মোড়ানো। এছাড়া দুর্গটির ভেতরে একটি বিশাল পুকুর আছে। যা এখন পানিশুন্য।
লালবাগ কেল্লায় ঢুকতেই লক্ষ্য করবেন, সরু রাস্তার দু’পাশে নানারকম ঝাউগাছ আর পাতাবাহারের সারি। গোলাপ, গাদা, রঙ্গনসহ আছে আরও বাহারি ফুলের গাছ। সূর্য যখন হেলে পড়ে তখন লালবাগের আসল সৌন্দর্য চোখে ধরা পড়ে।
লালবাগ কেল্লায় শায়েস্তা খাঁর বাসভবন ও দরবার হল বর্তমানে লালবাগ কেল্লা জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এই দরবার হল থেকেই তিনি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন।
জাদুঘরে অনেক কিছুই আছে দেখার মতো। মোঘল আমলের পাণ্ডুলিপি, মৃৎশিল্প, কার্পেট, হস্তলিপি ও রাজকীয় ফরমানসহ আছে মোঘল আমলের বিভিন্ন সময়ের হাতে আকা ছবি যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে- রবিবার (সাপ্তাহিক বন্ধ)। সোমবার দুপুর ২.৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা (দুপুর ১২.৩০ মিনিট থেকে ২টা পর্যন্ত বন্ধ)। আর সপ্তাহের বাকি দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা (দুপুর ১.৩০ মিনিট থেকে ১.৩০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ) পর্যন্ত খোলা থাকে।
অন্যদিকে অক্টোবর থেকে মার্চ অর্থাৎ শীতকালে- রবিবার সপ্তাহিক বন্ধ। সোমবার দুপুর ২.৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা (মাঝে দুপুর ১২.৩০ মিনিট থেকে ২টা পর্যন্ত বন্ধ)।
আর সপ্তাহের বাকি দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা (মাঝে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ) পর্যন্ত খোলা থাকে। সরকারি বিশেষ ছুটির দিনগুলোতেও লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে।
ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে আপনি লালবাগ কেল্লায় যেতে পারবেন। গুলিস্তান থেকে রিকশা অথবা সিএনজিতে চড়ে আপনি সরাসরি লালবাগ কেল্লায় যেতে পারবেন।
এছাড়া আপনি ঢাকার নিউমার্কেট, শাহবাগ কিংবা আজিমপুর বাসস্টান্ড থেকে লালবাগ কেল্লায় যেতে পারবেন। যদি লাইন বাসে যেতে চান তাহলে আপনাকে নামতে হবে আজিমপুর এতিমখানা বাসস্ট্যান্ড।
সেখান থেকে রিকশায় মাত্র ২০-৩০ টাকায় আপনি পৌঁছে যাবেন লালবাগ কেল্লায়। নিউমার্কেট থেকে রিকশায় যেতে চাইলে আপনাকে ৪০-৫০ টাকা গুনতে হবে।
লালবাগ কেল্লা পরিদর্শনের জন্য আপনাকে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রথমে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। টিকিট কাউন্টার পেয়ে যাবেন প্রধান ফটকের সামনেই। টিকিটের মূল্য বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ২০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ১০০ টাকা ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা।
১. দুর্গের ভেতরে কোনো প্রকার যানবাহন, এমনকি সাইকেল নিয়েও প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে।
২. খেলাধুলা করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
৩. বড় ব্যাগ নিয়ে কেল্লায় আপনি প্রবেশ করতে পারবেন না।
৪. লালবাগ কেল্লার ভেতরের ফুলের বাগান থেকে ফুল ছেড়া বা বাগানের ক্ষতি করা যাবে না।
৫. দুর্গের মধ্যে পানাহার ও মূত্রত্যাগ করা যাবে না।
৬. দুর্গের কোনো স্থাপনার ক্ষতি সাধন বা খোদাই করে কিছু লিখলে এক বছরের জেল ও জরিমানার বিধান আছে।
লালবাগ কেল্লা ভ্রমণ শেষে আপনি চাইলে পুরান ঢাকার খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন। লালবাগ কেল্লার প্রধান ফটকের আশপাশে অনেকগুলো রেস্তোরা আছে। এছাড়া একটু হাঁটলে আপনি পেয়ে যাবেন পুরান ঢাকার সেই ঐতিহ্যবাহী শাহি বিরিয়ানি/ হাজি বিরিয়ানি/ নানা বিরিয়ানি।