প্রাগ, এটি চেক প্রজান্ত্রের সবচেয়ে বড় শহর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৪তম বৃহত্তম শহর। সোনার একশ স্পায়ারের শহর, বিশ্বের মুকুট ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয় এই শহরটিকে। ১৯৯২ সাল থেকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্রের এই প্রাগ শহরটি। ৪৯৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরটিতে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের বসবাস। শহরটির সর্বোচ্চ উচ্চতা ৩৯৯ মিটার। সংস্কৃতিমনা বলা চলে এই শহরের স্থানীয় বাসিন্দাদের। উৎসবের দিনগুলোতে প্রাগ সাজে অন্য রকম এক সজ্জায়। চেক প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে বিখ্যাত উৎসব হচ্ছে প্রাগ বসন্ত। খেলাধুলায়ও তাদের কোনো জুড়ি নেই। প্রাগের জলবায়ু মধ্য ইউরোপের বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
কখনও শীত আবার কখনও বা গরম। আবহাওয়া অনেকটা নাতিশীতোষ্ণ। তবে বসন্তের শেষ থেকে গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। এই সময়টিই প্রাগ শহর দেখার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। ভিড় এতটাও থাকে না আবার সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়। তবে সারাবছরই এই শহরে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। পর্যটকদের এই শহরে ভ্রমনের অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে কেনাকাটা। ওল্ড টাউন-এর আশেপাশের রাস্তাগুলোর দু-ধারের দোকানগুলো পর্যটকদের আকর্ষন করার জন্য সাজিয়ে রাখা হয় বিভিন্ন জিনিসে। এছাড়া প্রাগে বেশ বড় বড় শপিং মলও রয়েছে।দোকানগুলোতে স্থানীয়দের তৈরি পন্য, গহনা পাওয়া যায়। জেনে নেয়া যাক প্রাগের ভ্রমণ আকর্ষণগুলো সম্পর্কে :
প্রাগের জেসাস :
শহরের প্রাণকেন্দ্র মালা স্ট্রাণায় অবস্থিত এটি। মুলত যিশু খ্রিষ্টের রোমান ক্যাথলিক মূর্তি এটি। প্রতিদিন শত শত পর্যটক যান এখানে। কেওবা নিজেদের ইচ্ছা পূরনে যান আবার কেওবা শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে যান সেখানে। ওল্ড টাউন স্কয়ার : পর্যটকেরা প্রতিদিন এই ঐতিহাসিক শহরটি দেখতে ভিড় করে। এর স্থাপত্য শিল্প কৌশল সত্যিই আবাক করার মতো। চোঁখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের কোনো কমতি নেই।
আস্টোনোনমিক্যাল ক্লক : পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল এই ঘড়িটি প্রাগের গর্ব।
চার্লস ব্রিজ :
১৭৯০ সালে সম্পূর্ণ হয়েছিল এই ব্রিজটির নির্মান কাজ। অসাধারণ এক মুহুর্তের সন্ধান পেতে অনেকেই এই ব্রিজে যান বেড়াতে।
প্রাগ ক্যাসল : এটি হ্যাডকানিতে অবস্থিত। প্রাগ ক্যাসল নিঃসন্দেহে শহরের সর্বাধিক জনপ্রিয় পর্যটকদের আকর্ষণ। এটি বর্তমানে রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন।
গোল্ডেন লেন :
সোনার মতো রাস্তায় হাঁটতে অনেকেই ভিড় জমায় এই গোল্ডেন লেনে।
কেজিবি জাদুঘর : শহরের একটি সংগ্রহশালা। এখানে বিভিন্ন দূর্লভ জিনিসের সংগ্রহ রয়েছে।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড স্পট :
এখানে একটি ভাস্কার্য রয়েছে। সাত ফুট লম্বা ভাস্কর্যটি দেখে যে কেউ অবাক হবেন। এই ভাস্কর্যটি এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে বিভিন্ন দেশে প্রদর্শিত হয়েছে।
লেনন ওয়াল : দেয়ালটিতে বিভিন্ন আঁকাআকিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একটি ব্রান্ড দলকে। গানপ্রিয় মানুষ সম্মান জানাতে ভিড় জমায় এখানে।
পেট্রিন হিল : প্রাগের পাহাড়। এখানে অনেকেই আসে পাহার ভ্রমণ করতে। আবার ট্রেকিং-এ অংশ নেয়। এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে অনেকেরই আগ্রহের জায়গা হিসেবে প্রাধান্য পায় এটি।
লেটনা পার্ক :
প্রাগের অসাধারণ জায়গাগুলোর অন্যতম এই পার্কটি। কিছু অসাধারণ মুহুর্ত কাটাতে এই পার্ক হয়ে ওঠে অনেকেরই গন্তব্যস্থল।
থাকা এবং খাওয়া : প্রাগে শান্ত পরিবেশে অনেক হোটেল রয়েছে থাকার মতো। যেহেতু পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত তাই থাকার বিষয় নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আবার সেখানে বোটেলও (নৌকা হোটেল) রয়েছে। চাইলে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সেবা গ্রহণ করা যায় সেখান থেকে। প্রাগে দুপুরের খাবার বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। মাংস, ডালপুরি, ফ্রাইসহ ফাস্ট ফুডেরও সন্ধান মেলে রেস্তোরাঁগুলোতে। মিষ্টির জন্য বিখ্যাত এই শহর। শহরে একটু খোঁজ করলেই পাওয়া যায় খাবার দোকান এবং রেস্তোরাঁ। আর ট্রাভেল গ্রুপের সহায়তায় গেলে তারাই থাকা এবং খাওয়ার সকল ব্যবস্থা করে দেন।
যেভাবে যাবেন : চেক প্রজাতন্ত্র থেকে বিমানে, বাসে বা ট্রেনে করে শহরটিতে যাওয়া সম্ভব। চেক এয়ার লাইনস, উইজ এয়ার লাইন্সসহ প্রায় সকল বিমানবন্দর থেকেই শহরে প্রবেশের সুবিধা রয়েছে। পাবলিক বাস, শাটল, ট্যাক্সিতে যাওয়া সম্ভব।
সুমাইয়া জান্নাত
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, উইকিভয়েজ, ইন্সপাইরেটো