থাইল্যান্ডকে বলা হয় “স্মাইল” অথবা প্রশান্তির ভূমি। এটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সুন্দর একটি দেশ। ঐশ্বর্যশালী পর্যটন শিল্পের সব ধরনের আধুনিক স্বচ্ছন্দতা খুঁজে পাওয়া যায় এখানে। দক্ষিণ-পশ্চিম সমুদ্র সৈকত বা উত্তরের পাহাড়ী গ্রামে – পর্যটকগণ যেখানেই যান না কেন থাইল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কাউকেই হতাশ করবে না। তাইতো ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে থাইল্যান্ড একটি আকাঙ্ক্ষার নাম।
থাইল্যান্ড শব্দটির মানে হলো প্রথেশ্থাই অর্থাৎ “থাই প্রদেশ”| থাইল্যান্ড এর সবচেয়ে বৃহত্তম শহর এবং রাজধানীর নাম হলো ব্যাংকক যা চাও ফ্রায়া নদীর মোহনায় থাইল্যান্ড উপসাগরের তীরে অবস্থিত। থাইল্যান্ড এমন একটি দেশ যা যুদ্ধের সময় ছাড়া আর কখনো ইউরোপ অথবা অন্য কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে যায়নি।
থাইল্যান্ডের মাঝখানে রয়েছে একটি প্রশস্ত উৎপাদনশীল সমতল ভূমি। এই সমতল ভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে দেশের প্রধান নদী চাও ফ্রায়া যার কারণে এই অঞ্চলে ধান ও অন্যান্য ফসলের অধিকাংশের কৃষি, চাষ হয়। দেশটির মধ্যভাগের সমভূমি থাকলেও পশ্চিম, উত্তর পূর্ব দিক দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড় ও মালভূমি।
থাইদের প্রায় সবাই বৌদ্ধধর্মালম্বী হলেও জাতিভেদে আছে বৈচিত্র। থাইল্যান্ডে বসবাসকারী অন্যান্য জাতির মধ্যে আছে চীনা, মালয় ও আদিবাসী পাহাড়ি জাতি। থাইল্যান্ডের অনুশীলিত ধ্রুপদী সঙ্গীত ও নাচ এবং লোকশিল্প বিশ্বে বিখ্যাত। কৃষিপ্রধান দেশ হলেও থাইল্যান্ডের অর্থনীতির দ্রুত উন্নতির পেছনে এদের সমৃদ্ধ পর্যটনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
আসুন জানি দেখার মতো কি আছে দেশটিতে!
ব্যাংকক: থাইল্যান্ড এর সবচেয়ে বৃহত্তম শহর এবং রাজধানী হলো ব্যাংকক। রাতের ব্যাংকক অনন্যসাধারণ, মনোহর ও সুন্দর। কথিত আছে, ব্যাংকক সারাদিন ঘুমায় আর জেগে উঠে রাতে। রাত যতোই হোক, হোটেল থেকে বের হলেই দেখা যায় এক অন্যরকম পরিবেশ, চারদিকে ভেসে উঠেছে ডিজে উৎসব , স্ট্রিট ড্যান্স , নানা বর্ণের মানুষের আড্ডা, মদের দোকানগুলোয় উচ্চস্বরে গানের সাথে থাকে নানা দেশের মানুষের উপচে পড়া ভীড়। এছাড়াও রয়েছে চাও ফ্রেয়া নদী তীরে গ্র্যান্ড প্যালেস এবং এর পবিত্র ওয়াট ফ্রে কাউ মন্দিরের কাছাকাছি ওয়াট ফো মন্দির যেখানে দেখা মিলবে পবিত্র বুদ্ধমূর্তীর।
পাতায়া: পাতায়া থাইল্যান্ডের পূর্ব উপসাগরীয় উপকূলের শহর, সমুদ্র সৈকতের জন্য বিশ্বব্যপী সমাদৃত। মনোরম রিসোর্ট, হোটেল, শপিংমল, বার ক্লাব গুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে দর্শনার্থীদের বিনোদন জোগাতে। তাছাড়া পাহাড়ের ওয়াট ফরা ইয়ে মন্দিরে ১৮ মিটার লম্বা সোনার বুদ্ধ মূর্তি এবং ডিজাইনার গল্ফ কোর্স গুলোও বেশি জনপ্রিয় ।
ব্যাংকক থেকে পাতায়া যেতে বাসে মাত্র ২ ঘন্টা সময় লাগে। পাতায়াকে গোটা বিশ্বের আমোদপ্রিয় মানুষের পরম আকাক্ষার গন্তব্য বললেও ভুল বলা হবেনা। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এখানে আছে কোরাল আইল্যান্ড, রিপ্লিসের বিলিভ ইট অর নট, ওয়াকিং স্ট্রীট , ফ্লোটিং মার্কেট ইত্যাদি। বীচ রোডে ভোজনরসিকদের জন্য আছে সব ধরণের রেস্তোরা। পাতায়া গেলে প্রতি কদমে কদমে দেখা যাবে ম্যাসাজের দোকান। বিভিন্ন ধরনের ম্যাসাজের চার্ট নিয়ে রমনীরা দোকানের সামনে পর্যটকদের অফার করে, পাতায়া গেলে অন্য কিছু না করলেও ফুট ম্যাসাজের অভিজ্ঞতাটা নিয়ে আসতে ভুলবেন না যেন!
ফুকেট: ফুকেট থাইল্যান্ডের বৃহত্তম দ্বীপ। এটি দক্ষিণ থাইল্যান্ডের আন্দামান সাগরে অবস্থিত । হানিমুন কাপলদের কাছে এই স্থানটির আলাদা কদর আছে । ফুকেটে থাকার জন্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা হল পাতং বিচ এরিয়া। ফুকেটে অনেক গুলো সুন্দর বিচ রয়েছে এবং সেগুলো হলো: কাটা নই সৈকত , ইয়া নুই সৈকত , সুরিন সৈকত , প্যারাডাইজ সৈকত , বঙ্গটোও সৈকত,পাতং বিচ ইত্যাদি।
স্নেক ফার্ম: থাইল্যান্ডের পুরনো রাজধানী স্নেক ফার্ম। এখানে রয়েছে বিলাসবহুল সিয়াম ডিসকভারি শপিং মল। যদি আপনি বেড়াতে গেলে শপিং করতে ভালোবসেন তাহলে একবার ঢু মেরে আসতে পারেন এখান থেকে। এছাড়া ১৫০ বছরের পুরনো রামা ৫-এর বাসস্থান ভিমানমেক ম্যানশন, চাতুচাক পার্ক, সাবওয়ে ও থাইল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা বাইওকি স্কাই হোটেল থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।
কোহ ফি ফি: এটি দক্ষিণ থাইল্যান্ডের ক্রাবি প্রদেশের একটি ছোট দ্বীপপুঞ্জ। কোহ ফি ফি দ্বীপপুঞ্জ থাইল্যান্ডের বৃহত দ্বীপ ফুকেট এবং থাইল্যান্ডের মালাক্কা উপকূলের মধ্যবর্তী অঞ্চলের একটি দ্বীপপুঞ্জ । বিস্ময়কর সব দৃশ্য দ্বীপটির প্রতি পরতে পরতে। বিলাসবহুলপূর্ণ এই দ্বীপ নিজের সৌন্দর্যের মোহে পর্যটকদের বারবার নিজের দিকে আকৃষ্ট করে। যে সকল তরুণ-তরুণীদের স্নোর্কেলিং, ডাইভিং এবং ক্লিফ জাম্পিংয়ের মতো অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ তাদের জন্য এটি স্বপ্নের একটি গন্তব্য। এছাড়া এই দ্বীপের নীলাভ জলে নৌকা ভ্রমণ হতে পারে আপনার প্রশান্তিময় অবসরের সাক্ষী।
সিমিলেন দ্বীপপুঞ্জ: সিমিলেন দ্বীপপুঞ্জটি নয়টি দ্বীপের মিলনমেলা। নীলাভ রঙ জলের এবংপ্রবাল প্রাচীরে ঘেরা উষ্ণ সমুদ্র সৈকত ডাইভিং এবং স্নোরকেলিংয়ের আদর্শ স্থান। এই দ্বীপগুলির মধ্যে কোহ মিয়াংয়ের সৈকত সবচেয়ে সুন্দর। গোলাপী সূর্যাস্ত এবং ঝলমলে বালির সৈকত হিসেবে পরিচিত কোহ তাচাই দ্বীপটি । সমুদ্রপ্রেমীদের জন্য রিচেলিউ রক অন্যতম আকর্ষণ।
পাতং বিচ: দক্ষিণ থাইল্যান্ডে অবস্থিত পাতং বিচ মূলত নাইট লাইফ উপভোগ করার প্রধান স্থান । নাইট পার্টি এবং লাইভ ডিজে সংগীতের জন্য সারা বিশ্বের কাছ এর সমাদর। অত্যন্ত ছোট এই শহরটি লাইভ বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।
ক্রাবি: এটিও একটি হানিমুন স্পট। এখানে বেড়াতে যাওয়ার লোকদের বেশিভাগই নববিবাহিত দম্পতি। বিলাসবহুল হানিমুনের অভিজ্ঞতা চাইলে ক্রাবি আপনার সঠিক গন্তব্য। এখানে শপিং, পার্টি, দ্বীপ হপিং, স্কুবা ডাইভিং সবই করা যায় । প্রায় ১৩০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ক্রাবি । নির্জন ব্যক্তিগত সময় কাটানোর জন্য জায়গাটির জুড়ি নেই।
মাংকিসৈকত:এই সমুদ্র সৈকত থাইল্যান্ডের এক কোণে অবস্থিত। মূলধারার ভিড় থেকে আলাদা,এই বিচ হানিমুনদের জন্য উপযুক্ত। যারা পরিচিত গন্তব্য গুলোর বাইরে ভীড়হীন কোন জায়গা খুঁজেন তাদের জন্য মাংকি বিচ একটি ভালো বিকল্প। এখানে কায়াকিং এবং স্নরকেলিংয়ের মতো দুঃসাহসিক এডভেঞ্চারের স্বাদ নেয়ারসুযোগ আছে।
কাঞ্চনাবুরি:প্রাকৃতিক জাঁকজমকপূর্ণ আরেকটি ঐশ্বর্য কাঞ্চনাবুরি। পাহাড়ী ঝর্ণা , গুহা, হ্রদ এবং পর্বতমালার অপরূপ দৃশ্য দেখতে চাইলে চলে যেতে পারেন এখানে।কাঞ্চনাবুরি গেলে ইরাওয়ান জলপ্রপাত, সাই ইয়োক নই জলপ্রপাত, সাঁই ইয়োক ইয়ে জলপ্রপাত এবং হুয়া মাই খমিন জলপ্রপাত অবশই দেখে আসবেন।
সেন্ট্রাল ওয়ার্ল্ড ব্যাংকক:এটি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম শপিং সেন্টার।আট তলা বিশিষ্ট এই বিশাল শপিং কমপ্লেক্সটি শপিং প্রিয় মানুষের জন্য স্বর্গ। এটি বেশ কয়েকটি শাখায় বিভক্ত। ক্যাফে এবং রেস্তোঁরা বিশিষ্ট এই মলে বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু খাবার, ফলমূল, শাকসবজি, পানীয়, বেকারি এবং আমদানি করা খাবার পাওয়া যায়।
চিয়াং মাই: সস্তা এবং সুস্বাদু স্ট্রিটফুড উপভোগ করতে চাইলে অবশই যাবেন চিয়াং মাই। বিক্রেতারা এখানে বিভিন্নধরণের খাবারের পসরা নিয়ে বসেন। জনপ্রিয় প্যাড থাই এবং মুরগির সাটয় থেকে শুরু করে সামোসাস, ভাজা কলা, মিষ্টি রুটি এবং তাজা ফলের জুস্ সবই পাওয়া যায়। আপনি খাদ্য রসিক হলে চিয়াং মাই এর অভিজ্ঞতার হতে পারে আপনার জীবনের স্মরণীয় একটি অধ্যায়।
লং বিচ: সূর্যাস্ত দেখার জন্য দুর্দান্ত এই লং বিচ। সৈকতের পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে উপভোগ করতে পারেন সূর্যাস্তের অপরুপ দৃশ্য।
ব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে সময় করে আপনিও ঘুরে আসুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার ভূমি থাইল্যান্ড।