তুরস্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব পর্যটকদেরই মুগ্ধ করে। এজন্যই প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক সেখানে ভিড় করেন। ঐতিহাসিক ও অতি আধুনিক শহর হিসেবে তুরস্ক বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেছে।
প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর তুরস্কে আছে পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র, হ্রদ, জলপ্রপাত, নদী, বন এমনকি উষ্ম জলস্রোত। প্রকৃতি যেন তার সবটুকু সৌন্দর্য যেন ঢেলে দিয়েছে তুরস্কে। তুরস্কের খাবারেও জনপ্রিয় অনেক। বিশেষ করে তুর্কি চা ও কফি সব দেশের মানুষের কাছেই সমাদৃত।
তুরষ্ক মূলত একটি পর্বতবেষ্টিত উচ্চ মালভূমি। সেখানকার জনসংখ্যা প্রায় সাত কোটি ১৫ লাখ। সিআইএ ফ্যাক্টবুক অনুসারে, তুর্কি পুরুষের গড় আয়ু ৭০ দশমিক ৬৭ বছর ও মহিলাদের গড় আয়ু ৭৫ দশমিক ৭৩ বছর। মোট জনসংখ্যার গড় আয়ু ৭৩ দশমিক ১৪ বছর।
তুরস্কে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান আছে। যেগুলো পর্যটকদের বরাবরই আকর্ষণ করে। আর এ কারণেই অবসর যাপনে বিশ্বের দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন তুরস্কে। যদি কখনো সময় করে সেখানে ঘুরতে যান, তাহলে কয়েকটি দর্শনীয় স্থানে ঢুঁ মেরে আসতে ভুলবেন না।
ভ্রণপিপাসুরা তুরস্কে গেলে প্রথমেই ইস্তাম্বুল দিয়ে শুরু করেন। এ শহরটিই তুর্কি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু। পৃথিবীর একমাত্র শহর এটি, যেখান থেকে দুটি মহাদেশে প্রবেশ করা যায়- ইউরোপ ও এশিয়া।
এর মধ্যে অটোমান টপকাপি প্রাসাদ, হাগিয়া সোফিয়া এবং ভূ-গর্ভস্থ বেসিলিকা সিস্টারন। সেখানে গিয়ে শপিং করতে পারেন গ্র্যান্ড বাজারে। এ ছাড়াও চমৎকার নীল মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন। গ্যালাটা টাওয়ারে দাঁড়িয়ে শহরের পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
তুরস্কের রাজধানী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আঙ্কারা। সেখানেই তুরস্কের বেশিরভাগ তারকারা বাস করেন। এ শহরেই আছে তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের সমাধি।
এছাড়া নামকরা সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানও আঙ্কারায়। যেখানে আপনি খুঁজে পাবেন শিল্প ও সংস্কৃতির বিশাল ভাণ্ডার। শহরের প্যানোরামিক ভিউ উপভোগ করতে সেখানকার ওল্ড কোয়ার্টারের উলুস বেন্টড্রেসে অবস্থিত আঙ্কারা সিটাডেলে যেতে পারেন।
শহরটি এজিয়ান সাগরের পাশে। সৈকতপ্রেমীদের আনাগোনায় সব সময় ব্যস্ত থাকে বোড্রাম। এ কারণেই দর্শনার্থীরা ভূ-মধ্যসাগর দর্শনে বোড্রামে যান। সেখানে প্রচুর ক্যাফে, রেস্তোঁরা ও বিলাসবহুল হোটেল আছে।
বোড্রামে গেলে আপনি দেখতে পাবেন বোড্রাম ক্যাসল, আন্ডারওয়াটার প্রত্নতত্ত্বের প্রাচীন সংগ্রহশালা, প্রাচীন বোড্রাম থিয়েটার ও মেন্ডস গেট।
নিরিবিলি অবকাশ যাপনের জন্য কাস হলো অন্যতম এক স্থান। এটি একটি শান্ত সমুদ্র উপকূলীয় শহর। এটি তুরস্কের ভূ-মধ্যসাগরীয় উপকূলরেখার আন্টালিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে গেলে আপনি সমুদ্রতলের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন
কারণ সেখানকার সমুদ্রে নেমে আপনি ডাইভিং প্রশিক্ষকের সঙ্গে আপনি সমুদ্রের গভীরে ভ্রমণ করতে পারবেন। সমুদ্র উপকূলের ক্যাফে ও বর্ণিল রাস্তাগুলোতে হাঁটতে হাঁতে আপনি কল্পনারাজ্যে হারিয়ে যাবেন।
ইজমির থেকে প্রায় এক ঘন্টা দূরত্বে অবস্থিত এফিসাস। বর্তমানে সেখানকার ধ্বংসাবশেষগুলো দেখতে ইতিহাসপ্রেমীরা এফিসাসে ভিড় জমান।
পুরো অঞ্চলটি এখন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত। সেখানে গেলে অবশ্যই দেখবেন র্টেমিসের মন্দির, হ্যাড্রিয়ানের মন্দির, সেন্ট জনের বেসিলিকা ও এফিসাস জাদুঘর।
এটি উত্তর-পূর্ব তুরস্কের কৃষ্ণ সাগরের পাশে অবস্থিত। পন্টিক পর্বতমালা ট্যাবসনের মধ্য দিয়েই গেছে। এ অঞ্চলটিও বেশ নিরিবিলি। ট্যাবসনের মূল আকর্ষণ হলো সেখান থেকে পর্বতমালা উপভোগ করতে পারবেন।
সেইসঙ্গে বোজতেপে কৃষ্ণ সাগরের উপরের সূর্যাস্তও দেখতে পারবেন। উজুন গুল বা লং লেকের কাছে এক রাত কাটালে তার স্মৃতি সারাজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ট্র্যাবসনেও হাগিয়া সোফিয়ার এক সংস্করণ আছে, যা ইস্তাম্বুলের চেয়ে কিছুটা আলাদা।
উষ্ম প্রস্রবনের ধারা বয়ে যায় পামুক্কালেতেই। চারপাশে ধোঁয়া, যেন সাদা মেঘে ঢেকে আছে চারদিক। দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের এ স্থানে আছে খনিজ ট্র্যাফট্রিন সমৃদ্ধ গরম জলস্রোত।
ইউনেস্কোর একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষিত- পামুক্কালের খনিজ বন, জলপ্রপাত এবং টেরেসড। সেখানে গিয়ে পামুক্কেল দুর্গ ঘুতে পারবেন। সেইসঙ্গে লাওডিকিয়ার রোমান ধ্বংসাবশেষও দেখতে পাবেন।
চারপাশে নানা রঙের বেলুন দেখতে পাবেন ক্যাপাডোসিয়াত প্রবেশ করলেই। এ যেন এক অভূতপূর্ব সৌন্দর্য। যা হয়তো আপনি দেখেননি। ক্যাপাডোসিয়ায় পর্টকরা হট এয়ার বেলুনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যান। এ বেলুনগুলো চড়ে আপনিও উড়তে পারবেন আকাশে।
এছাড়া সেখানে দেখতে পাবেন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকাভুক্ত গোরমে ওপেন এয়ার জাদুঘর। যা একসময় বাইজেন্টাইন সন্ন্যাসীদের আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছিল ঐতিহাসিক এ গীর্জা।
ক্যাপাডোসিয়ার সবচেয়ে অবাক করা সৌন্দর্য হলো সেখানকার ভূ-গর্ভস্থ শহরগুলো। কায়মাকলি আন্ডারগ্রাউন্ড সিটিতে সর্বাধিক মানুষ বাস করেন।
ইস্তাম্বুল এবং আঙ্কারা ঘুরে আপনি সরাসরি ফ্লাইটে তুরস্কের কেন্দ্রীয় আনাতোলিয়ান অঞ্চল থেকে ক্যাপাডোসিয়ায় যেতে পারবেন। বিভিন্ন মৃৎশিল্পের দোকান, পাসবাগ এবং ডেভ্রেন্ট ভ্যালি এমনকি একটি গুহার হোটেলও দেখতে পারেন ক্যাপাডোসিয়ায়!
একসময় অটোমান রাজ্যের রাজধানী ও শিল্পকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল বুরসা। এর গুরুত্ব আজও অব্যাহত। এখানে আছে সুউচ্চ সব পাহাড় ও পর্বতামালা। শীতকালে পর্বতারোহীদের গন্তব্য হয়ে ওঠে বুরসা।
সেখানকার কুমিলাকিজাকে দেখতে পাবেন অদ্ভুত বাঁধাকপির মতো রাস্তা। এটি শহরের কেন্দ্রের ঠিক বাইরে একটি সংরক্ষিত অটোমান গ্রাম। পেইন্টিং, ফিলোগ্রাফি, সিরামিকস এবং টাইলস, ক্যালিগ্রাফি, মেটাল আর্ট সবকিছুর জন্য বিখ্যাত এ স্থানটি।
এটি তুরস্কের রোমান্টিক শহর হিসেবে খ্যাত। কবিদের আনাগোনা বেশি এ শহরে। কোন্যাতে আপনার প্রথম গন্তব্যটি হওয়া উচিত মেভালানা জাদুঘরে। গোলাপ দ্বারা সজ্জিত তুরস্কের বিখ্যাত কবি ম্যাভলানা রুমির সমাধি আছে সেখানে।
সন্ধ্যার দিকে কোন্যার সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে। ওই সময় এক কাপ তুর্কি চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে সেখানকার প্রেমে পড়ে গিয়ে আপনি কবি হয়েও উঠতে পারেন!
সূত্র: ক্লিয়ার ট্রিপ