সৈকতে বেড়ানোর পাশপাশি আছে নানা মজার আয়োজনসৈকতে সাদা নরম বালু। সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র। তাতে রংবেরঙের ছোট ছোট নৌকা। পেছনে সবুজের চাদর বিছানো পাহাড়। বেড়ানোর জায়গা যদি এমন হয়, তাহলে মুগ্ধ না হয়ে উপায় কী। থাইল্যান্ডের সমুদ্রশহর পাতায়ার প্রবাল দ্বীপের পরতে পরতে এমনই সৌন্দর্য।
আয়োজনটা বেসরকারি বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজের। পাঁচ দিনের থাইল্যান্ড সফর। ২৭ জনের সাংবাদিক দলে আমিও একজন। চট্টগ্রাম থেকে ব্যাংকক আসার পর পাতায়া যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিল। কারণ পাতায়ার সৌন্দর্যের গল্প অনেক শুনেছি। অবশেষে গত ৯ ডিসেম্বর যাত্রা। গন্তব্য পাতায়া।
সুকুমভিত থেকে সকাল নয়টায় যাত্রা শুরু। নির্ঝঞ্ঝাট পথ। চোখে পড়ল পাহাড়ঘেরা দেশটির দৃষ্টিনন্দন নানা বৌদ্ধমন্দির। দুই ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম ব্যাংকক থেকে ১৭৫ কিলোমিটার দূরের পাতায়ায়। গাড়ি থামল সৈকতের পাশ ঘেঁষেই। ছোট সৈকত। ছিমছাম, গোছানো। রাস্তার পাশে বিভিন্ন প্রজাতির সারি সারি গাছ। দূরে টিলায় ইংরেজি বড় হরফে লেখা ‘পাতায়া’।
সূর্য তখন তেতে ওঠায় পর্যটকের আনাগোনা কম। এই শহরটি দিনে ঘুমায়, রাতে জাগে। অবশ্য যাঁদের উদ্দেশ্য প্রবাল দ্বীপে যাওয়া, তাঁদের এই সময়েই বের হতে হয়। সে সুবাদে আমাদের সঙ্গে পাওয়া গেল বেশ কয়েকজনকে। বেশির ভাগই ভারতীয়। সবাই যাবেন পাতায়া থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরের প্রবাল দ্বীপে। তাঁরা দরদামে ব্যস্ত ইঞ্জিনচালিত নৌকার কর্মীদের সঙ্গে। এই ঝক্কি আমাদের নেই। আগে থেকে রিজেন্ট হলিডেজের কর্মকর্তারা সব ঠিকঠাক করে রেখেছিলেন। শুধু নৌকায় উঠতে যা সময় লেগেছে।
নৌকা ১০ মিনিট চলার পর এসে থামল সাগরের মাঝখানে একটি জেটিতে। যেখান থেকে প্যারাস্যুটে উড়ে সমুদ্র দেখেন পর্যটকেরা। আকাশে উড়ে সমুদ্র দেখার আনন্দই অন্য রকম। এসব দেখতে দেখতে ডাক পড়ল নৌকার মাঝির (বোটচালক)। উঠে পড়লাম নৌকায়। এবার আরও কিছু দূর গিয়ে নৌকা থামল ছোটখাটো দোতলা এক লঞ্চের পাশে। এখান থেকে করা যায় স্কুবা ড্রাইভিং। সাগরতলের জগৎ দেখতে নেমে পড়ছেন অনেকে। পানি ওঠার পর চোখেমুখে যেন সমুদ্রজয়ের তৃপ্তি।
পাতায়ার প্রবাল দ্বীপএবার মূল গন্তব্য প্রবাল দ্বীপের পথে। কিছুক্ষণ পর নৌকা এসে থামল সাদা বালুচরে। নীল পানিতে পা রাখতেই অন্য রকম অনুভূতি। স্বচ্ছ পানি, পরিচ্ছন্ন চারপাশ। কতটুকু হবে এই সৈকত। বড়জোর ৫০০ গজ। অথচ এতেই চলছে হাজার খানেক পর্যটকের দাপাদাপি। সেকি উচ্ছ্বাস তাঁদের। কেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত। কেউ নোনাজলে সাঁতরে বেড়াচ্ছেন। ছোট ছোট ঢেউ বলে খুব একটা বেগ পেতে হচ্ছে না। অনেকে বিচ বাইকে চেপে মারছেন এক চক্কর। পাহাড়েও চড়ার ব্যবস্থা আছে। দেরি না করে আমরাও নেমে পড়লাম পানিতে।
পানিতে দাপাদাপিতে ক্লান্ত হওয়ার পর তীরে এসে বসলাম ছাতার নিচে। সেখানেই বিক্রি হচ্ছে বড় পেয়ারা আর পাকা আম। হাতের কাছে যা পেলাম তা দিয়েই উদরপূর্তি করলাম। এবার হাঁটা শুরু সৈকত ধরে। সারি সারি দোকান। কোনোটিতে খাবার, কোনোটিতে ব্যাগ-স্যান্ডেল থেকে শুরু করে রকমারি জিনিস। ১০ মিনিটেই চক্কর দেওয়া হয়ে গেল।
একটু পর বেজে উঠল মুঠোফোনও। ফিরলাম নৌকার কাছে। ঘড়ি দেখলাম সময় দুইটার কাছাকাছি। কীভাবে যে দুই ঘণ্টা কেটে গেল টেরই পেলাম না। সবাই ওঠার পর নৌকা আবার পাতায়ামুখী।
এবার মধ্যাহ্নভোজ। রাস্তার ওপারেই ভারতীয় রেস্তোরাঁয় হলো খাওয়া। পাতায়ায় আর কিছুক্ষণ ঘুরে ব্যাংককের পথ ধরলাম। কিন্তু রাতের রঙিন পাতায়া যে দেখা হলো না! সে যাক প্রবাল দ্বীপের সুখস্মৃতি তো আছে।
যেভাবে যাবেন
ব্যাংকক যেতে বাংলাদেশ বিমান ছাড়াও থাইল্যান্ডের থাই ও ব্যাংকক এয়ারওয়েজের নিয়মিত ফ্লাইট রয়েছে।
ঢাকা থেকে তিন আর চট্টগ্রাম থেকে দুই ঘণ্টায় বিমানে ব্যাংকক। সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে দুই ঘণ্টায় পাতায়া। বিমানবন্দরে ট্যাক্সি ক্যাব, বাস, মাইক্রোবাসের ভালো ব্যবস্থা আছে।
থাকা-খাওয়া
বাংলাদেশের বেসরকারি ট্যুর অপারেটরদের নানা ধরনের প্যাকেজ আছে। থাকা, খাওয়া, বেড়ানো সব সুবিধা আছে এসব প্যাকেজে।