ভ্রমণ মানেই ভিন্ন আনন্দ, ভিন্ন অভিজ্ঞতা! ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ছুটির দিন মানেই ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান। কোথায় যাবেন-এমন ভাবনাও মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। দিনে দিনে কোথায় যাওয়া যায় এমন জায়গা বাছাই করা নিয়ে পড়তে হয় টেনশনে। পরিবার নিয়ে অল্প ছুটিতে দূরের পথ পাড়ি দেওয়া বেশ কঠিন হয়ে উঠে। কিন্তু তারপরও ঘুরতে যেতে মন চায়! তাই এক দিনেই ঘুরতে যাওয়ার মতো একটি জায়গার সন্ধান করলে ঘুরে আসতে পারেন সোনারগাঁও পেরিয়ে বাংলার তাজমহলে।
অনেকে ভারতে অবস্থিত আগ্রার তাজমহল ঘুরে দেখেছেন। কিন্তু সবার পক্ষে কি তা সম্ভব! যারা আগ্রার তাজমহল দেখতে পারেননি তাদের জন্য বলছি- আপনারা আগ্রার তাজমহল বাংলাদেশে বসেই দেখতে পারেন। ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টির পরিতৃপ্তির জন্য বাংলার ইতিহাসের প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁয়ে নির্মিত হয়েছে ভারতের আগ্রার তাজমহলের আদলে ‘বাংলার তাজমহল’।
প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগে পৃথিবীতে নির্মিত অতি আশ্চর্যের সাতটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মিসরের রাজা বাদশাহদের মমি ও ভারতের মোগল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ বেগমের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত আগ্রার তাজমহল। মমি আর তাজমহলের আদলে এ স্থাপনাগুলো নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মুক্তিযোদ্ধা আহসানউল্লাহ মনি নিজ গ্রাম পেরাবতে। যা বিশ্বের ২য় তাজমহল নামে পরিচিত!
রাজধানীর ঢাকা থেকে ১০ মাইল পূর্বে পেরাব, সোনারগাঁয়ে অবস্থিত। এটি প্রকৃত তাজমহলের (ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি মোগল নিদর্শন) একটি হুবহু নকল বা রেপ্লিকা। ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা খরচে ৫ বছরের অধিক সময় নিয়ে নির্মাণ করা হয় ব্যক্তিমালিকানাধীন এই তাজমহলটি।
সম্রাট শাহজাহানের অনুপম ভালোবাসার নিদর্শন আগ্রার তাজমহল। ভালোবাসার অমর নায়ক হিসেবে যার নামটি শোনা যায় তিনিই হলেন সম্রাট শাহজাহান! মধ্যযুগে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি স্থাপনা রচিত হয়েছিল তার হাত দিয়ে।
আহসানউল্লাহ মনি ২০০৩ সালে এর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এর উদ্বোধন করেন। তিনি একবার ঘুরতে গিয়েছিলেন আগ্রায়, সেখানে তাজমহল দেখে তার মনে জায়গা করে নিয়েছে নিজ দেশে এমন একটি তাজমহল প্রতিষ্ঠিত করবেন তিনি। সুলতানি আমলের প্রসিদ্ধ সুলতান গিয়াসউদ্দীন আযম শাহ আর বারো ভূঁইয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বীর ঈশা খাঁর রাজধানীখ্যাত সোনারগাঁয়ের এ আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত বাংলার তাজমহল এখন পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। তাজমহল সংশ্লিষ্ট জায়গার পরিমাণ প্রায় ১৮ বিঘা। তবে আশপাশে পর্যটনের জন্য প্রায় ৫২ বিঘা জায়গা সংরক্ষিত রয়েছে।
এর অভ্যন্তরে আহসানউল্লাহ্ মনি ও তার স্ত্রী রাজিয়া দুজনের সমাধির স্থান রক্ষিত আছে। চার কোণে চারটি বড় মিনার, মাঝখানে মূল ভবন, সম্পূর্ণ টাইলস করা। সামনে পানির ফোয়ারা, চারদিকে ফুলের বাগান, দুই পাশে দর্শনার্থীর বসার স্থান। এখানে আরও রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রাজমনি ফিল্ম সিটি, রেস্তোরাঁ, উন্নতমানের খাবার-দাবারের পাশাপাশি, যারা গ্রুপে বা পিকনিকে আসতে চান তাদের জন্য ও ব্যবস্থা রয়েছে।
এছাড়া রয়েছে রাজমনি ফিল্ম সিটি স্টুডিও। যে কোনো দর্শনার্থী এখানে ছবি উঠাতে পারবেন। তাজমহলকে ঘিরে বাইরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন হস্তশিল্পসামগ্রী জামদানি শাড়ি, মুক্তার মালা ও গহনাসহ আরও অন্য পণ্য। তাজমহলের পূর্বপাশে রয়েছে বিশাল জায়গা নিয়ে নির্মিত পিরামিড। পিরামিডে গেলে দেখতে পাবেন বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো চারপাশ। পাখির কিচিরমিচিরে কিছুটা স্বস্তি এনে দিবে নিজেকে। পিরামিড ঘুরে দেখলে এক অসাধারণ অনুভূতি ও ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন হবে নিজের ভিতরে।
যাওয়ার আগে যা পরিকল্পনা করবেন:
যাওয়ার আগের দিন রাত না জেগে আগেই ঘুমিয়ে যাবেন। পরের দিন যাওয়ার প্রস্তুতে যা যা প্রয়োজন সব কিছু গুছিয়ে রাখুন। সকালে উঠে নাশতা করে বের হয়ে যান। ১২টার মধ্যে স্পটে থাকতে পারলে সারাবেলা মনের আনন্দে সব ঘুরে দেখতে পারবেন। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে-যেহেতু কোথায়ও ঘুরতে গেলে আমরা ছবি তুলি ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য সেহেতু একটু কালারফুল পোশাক পরলে ছবিতে আপনাকেও সুন্দর লাগবে।
যেভাবে তাজমহলে যাওয়া যাবে:
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মদনপুর দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে থেকে প্রায় ২-৩ কিমি. ভেতরে অথবা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর হয়ে রূপগঞ্জের বরপা বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। এখান থেকে সিএনজি স্কুটারে জনপ্রতি ২৫ টাকা ভাড়ায় পৌঁছে যাবেন তাজমহলে ।
সাপ্তাহিক বন্ধ:
বাংলার তাজমহল সপ্তাহে সাতদিনই খোলা থাকে। তবে সরকারি বন্ধের দিনগুলোতে বেশি দর্শনার্থীরা আসে। আপনার সুযোগমতো যে কোনোদিন যেতে পারেন।
ভ্রমণকালে পরামর্শ ও সময়সূচি:
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে তাজমহল। বাংলার তাজমহলে প্রবেশ মূল্য ১৫০ টাকা। টিকিট কেটে প্রবেশ করার পর বাকি অংশ ফেলে দিবেন না, সেটা দিয়ে পিরামিডে প্রবেশ করতে পারবেন। পিরামিডটি তাজমহল থেকে কিছুটা পূর্বপাশে অবস্থিত। তাই টিকেট নিজ যত্নে রাখতে হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও আছে, মোটরসাইকেল ২০ টাকা ও গাড়ি পার্কিয়ের জন্য ৫০ টাকা।
ছুটির দিনগুলো তাজমহলে লোক সমাগম বেশি হয়ে থাকে। ভিড় এড়াতে ছুটির দিন বাদে অন্য দিনগুলোতে আসলে নিজের মতো কিছুটা সময় কাটিয়ে যেতে পারবেন। সন্ধ্যা হলে তাজমহলের পিলারে কালারফুল লাইট জ্বলে উঠে, এই্ দৃশ্য দেখতে চাইলে সন্ধ্যা কাটিয়েও আসতে পারেন।