প্রতিবছর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ এসব জায়গায় ভ্রমণে আসেন। দর্শনীয় অনেকগুলো শহরেই যাওয়া যেতে পারে। তবে ভিয়েতনামে গেলে প্রথমেই ঘুরে দেখা যেতে পারে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়। হ্যানয়ের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে উইমেনস মিউজিয়াম, টেম্পল অব লিটারেচার, ওয়েস্ট লেক, মিউজিয়াম অব এথনোলজি, হোয়ান কিয়েম লেক, লং বিএন ব্রিজ, ফাইন আর্টস মিউজিয়াম, লটে অবজারভেশন ডেক, হোয়া লো প্রিজন মিউজিয়াম ও ওয়ান পিলার প্যাগোডা।
হ্যানয়ের এই জাদুঘরে নারীদের পরিবার, ফ্যাশন ও ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন যুদ্ধে নারীদের বীরত্বের অনেক ছবি ও পোস্টার রয়েছে। এখানে নৃগোষ্ঠীদের পোশাক, উপকরণ, কারুকার্যসহ সর্বমোট ৪০ হাজার জিনিস দেখতে পাবেন।
টেম্পল অব লিটারেচার
দশম শতাব্দীর এই মন্দির একসময় ভিয়েতনামের সেরা পণ্ডিতদের আবাসস্থান ছিল। রাজবংশধরেরাই এখানে পড়াশোনা করার সুযোগ পেতেন। মন্দিরে সুন্দর সুন্দর বেদি ও ডোজো আছে। এখনো প্যাভিলিয়নে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও হলগুলোতে বিভিন্ন পরীক্ষা হয়।
হো তাই নামের এই ওয়েস্ট লেক ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় লেক। ১৭ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত লেকটির আশপাশে অনেক বাগান, হোটেল ও ভিলা আছে। লেকের পাশের রেস্তোরাঁয় মানুষ খাবার খেতে খুব পছন্দ করে।
মিউজিয়াম অব এথনোলজি
এই জাদুঘরে নৃগোষ্ঠীদের শিল্প, জীবন ও জীবিকার প্রতিফলন দেখা যায়। এখানে ৫৪টি নৃগোষ্ঠীর গ্রামীণ জীবনের ঐতিহ্য দেখতে পারবেন। মঙ্গলবার থেকে রোববার এই জাদুঘর সবার জন্য খোলা থাকে।
হোয়ান কিয়েম লেক
পঞ্চদশ শতাব্দীতে তৈরি করা লেকটি দেখতে খুব সুন্দর। সম্রাটের হাত থেকে কচ্ছপের তলোয়ার ছিনিয়ে নেওয়ার মতো রূপকথার গল্প মিশে আছে এই লেকের ইতিহাসে। লেকের মধে৵ কিছু মন্দিরের মতো পুরোনো স্থাপনা আছে।
রেড রিভারের ওপর ভিয়েতনামের দুটি শহরকে এক করেছে এই ব্রিজ। আমেরিকানরা যুদ্ধের সময় অনেকবার এই ব্রিজের ওপর বোমা হামলা করে। রাতে ব্রিজের ওপর অসাধারণ আবহ বিরাজ করে।
ফাইন আর্টস মিউজিয়াম
এটি দেশের প্রধান শিল্প জাদুঘর। এখানে বিংশ শতাব্দীর শিল্প ও সাহিত্যের নিদর্শন বেশি দেখা যায়। জাদুঘর তৈরির আগে এটি ক্যাথলিক মেয়েদের বোর্ডিং হাউস ছিল।
হ্যানয়ের ৬৫ তলা উঁচু একটি টাওয়ারে লটে অবজারভেশন ডেক। এখান থেকে সারা শহরের সবকিছু দেখা যায়। টাওয়ারের মধ্যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, শপিং মল, রেস্তোরা, বার, নাইট ক্লাবসহ অনেক কিছু আছে।
হোয়া লো প্রিজন মিউজিয়াম
ফরাসি সৈনিকেরা বিপ্লবীদের ধরে নিয়ে এই জেলখানায় আটকে রেখে অত্যচার করত বলা হয়। ১৯৯০ সালে এর অনেক অংশ ভেঙে যায়; কিন্তু গেটসহ অবশিষ্টাংশ দেখতে অনেক মানুষ এখানে ভিড় করেন।
ওয়ান পিলার প্যাগোডা
বৌদ্ধদের পবিত্র স্থান এই ওয়ান পিলার প্যাগোডা। এক পিলারের ওপর নির্মিত প্যাগোডাটি একবার ফরাসিরা ধ্বংস করে ফেলে। পরে কাঠের মাধ্যমে এটাকে আবার মেরামত করা হয়।
ঢাকা থেকে সরাসরি হ্যানয় যাওয়ার কোনো প্লেন নেই। ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক বা কুয়ালালামপুর হয়ে যেতে হয় হ্যানয় শহরে। থাই লায়ন এয়ারলাইনস, থাই এয়ারলাইনস, মালিন্দো এয়ারলাইনস, চীনা সাদার্ন বা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে হ্যানয় যাওয়া যাবে। বিভিন্ন এয়ারলাইনসে যেতে সময় বিভিন্ন লাগে। তবে যাত্রাবিরতিসহ ৭ থেকে ১০ ঘণ্টায় যাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি সময় লাগে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে, প্রায় ২৩ ঘণ্টার মতো।
খরচ
ডং জুয়ান মার্কেট থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরেই হ্যানয় কোজি হোস্টেল। এখানে খুব কম খরচে সাধারণ মানের রুম পাওয়া যায়। হোস্টেলে আমেরিকান নাস্তাও মেলে। কাছাকাছি কোথাও হাইকিংয়ের জন্য একা ভ্রমণ করলে হোস্টেলটি আপনার জন্য সেরা হবে। এখানে একজন, দুজন ও দুইয়ের বেশি মানুষ থাকার জন্য রুম ও দোতলা বেড রয়েছে। বন্ধুদের নিয়ে সীমিত খরচে ভ্রমণে গেলে মাত্র ৫০০ থেকে ৮০০ টাকাতে এই হোস্টেলে থাকতে পারবেন। তবে সিজন ও রুম অনুযায়ী ভাড়া পরিবর্তিত হতে পারে।
কম খরচে পর্যটকেরা হোস্টেলে থাকতে বেশি পছন্দ করে; যেমন হ্যানয় ওল্ড কোয়ার্টার্স ব্যাগপ্যাকার্স হোস্টেল, দ্য ফাস্ট হোস্টেল, মিউ হোস্টেল, হ্যানয় ইকো গ্রিন হোস্টেল, ডেইজি হোস্টেল, হ্যানয় কোজি হোস্টেল। এগুলোতে ৪০০-৮০০ টাকার মধ্যে এক রুমে দুজন থাকতে পারবেন।
গুন্ড কোয়ার্টারে খাবারের বেশ কিছু ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। এখানে ১০০-১৫০ টাকার মধ্যে বেশ ভালো খাবার পাবেন। খাবারের মধ্যে গই চুয়ান (একধরনের স্প্রিং রোল), এগ নগ লাটে, ফ্রায়েড বানানা, ক্যারামেল পুডিং ও ডেজার্ট সুপ খেয়ে দেখতে পারেন। পানীয়ের জন্য ‘বিয়া হৈ’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পেকজেলস ডট কম