1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন

দুবাই ভ্রমণ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪

স্বপ্নের শহর দুবাই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭টি আমিরাতের মধ্যে দুবাই অন্যতম। মধ্যপ্রাচ্যের এই শহরে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালোয়েশিয়া ছাড়িয়ে ভ্রমণপিপাসু বাঙালির এখন অন্যতম ভ্রমণপ্রিয় জায়গা দুবাই। বাংলাদেশ থেকে দুবাই ৪৫৪৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সময়ের পার্থক্য ২ ঘণ্টা। বাংলাদেশে যখন সকাল ৮টা দুবাইয়ে তখন ভোর ৬টা।

সার্বিক বিবেচনায় দুবাই ভ্রমণ কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও সঠিক পরিকল্পনা করলে কম খরচেও দুবাই ঘুরে আসা সম্ভব। আজ আপনাকে জানাবো কম খরচে ৪ রাত ৫ দিনের দুবাই ভ্রমণের পরিকল্পনা।

দুবাই ভিজিট ভিসা করবেন যেভাবে

বাংলাদেশ থেকে খুব সহজেই দুবাই ভিজিট ভিসা বা দুবাই ভ্রমণ ভিসা করা যায়। দেশের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে দুবাইয়ের ভিসা করার সুযোগ রয়েছে।

দুবাই ভিসার ফি কত?

দুবাই ভিসা ফি, ভিসা প্রসেসিং ফি, ট্রাভেল ইন্সুরেন্সসহ জনপ্রতি খরচ হবে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। এই ভিসায় আপনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে একবার প্রবেশ করে ৩০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারবেন। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই খরচ জনপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা হবে।

দুবাই ভিসা করতে কী লাগবে?

অন্যান্য দেশের মতোই সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা করতে নির্ধারিত কিছু কাগজপত্র দরকার হয়। নিচের তালিকায় উল্লেখিত ছাড়াও ট্রাভেল এজেন্সি প্রয়োজন মতো আরো কিছু কাগজপত্র চাইতে পারে।

  1. নতুন ও পুরনো পাসপোর্টের তথ্যবলী সম্বলিত পেইজের স্ক্যান কপি।
  2. পূর্বে কোনো দেশ ভ্রমণ করে থাকলে সেই ভিসার স্ক্যান কপি।
  3. ভ্রমণের পর দেশে ফিরে আসার সম্মতিপত্র।
  4. ৩ মাসের মধ্যে তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবির সফট কপি। যার ব্যাকগ্রাউন্ড হবে সাদা।
  5. ভিজিটিং কার্ডের স্ক্যান কপি।
  6. শিশুদের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদের স্ক্যান কপি।
  7. ব্যবসায়ী হলে অফিসিয়াল প্যাড বা কোম্পানি লেটার হেডের কপি।
  8. চাকরিজীবী হলে অফিসিয়াল এনওসির এর স্ক্যান কপি।
  9. অফিসিয়াল পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি।
  10. ডাক্তার হলে বিএমডিসি সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি।
  11. আইনজীবি হলে বার কাউন্সিল সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি।
  12. শিক্ষার্থী হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি।
  13. বিবাহিত তবে পাসপোর্টে স্বামী/স্ত্রীর নাম উল্লেখ না থাকলে ম্যারেজ সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি।

দুবাই যেতে এয়ার টিকিট করবেন কীভাবে?

আকাশপথে বাংলাদেশ থেকে দুবাই যেতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। দেশ – বিদেশের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স থেকে টিকিট সংগ্রহ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেতে পারেন। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা দেশটির অন্য যে কোনো বিমানবন্দরে অবতরণ করেও দুবাই যেতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন শহরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইট রয়েছে। এয়ারলাইন্সভেদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই যেতে আসা-যাওয়ায় খরচ হতে পারে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে নিজেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।

দুবাই টাকার রেট কত?

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুদ্রার নাম দিরহাম। বাংলাদেশ থেকে ক্যাশ ডলার নিয়ে দুবাই শহরের বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ থেকে বিনিময় করে দিরহাম নিতে পারেন। তবে দুবাই শহরের অধিকাংশ সেবায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার সুবিধা রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে ডলারের বিনিময়ে বেশি দিরহাম পাওয়া যায়। আজকের রেট অনুযায়ী দুবাই ১ দিরহাম বাংলাদেশের ৩০.০৯ টাকা।

দুবাইয়ে হোটেল ভাড়া ও বুকিং

দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটকদের কাছে দুবাইয়ে থাকার জন্য ডেইরা এলাকা বেশি পরিচিত। দুবাই ভ্রমণে অনেক সময় ইমিগ্রেশনে হোটেল বুকিং দেখতে চায়। এজন্য হোটেল বুকিং করে দুবাই যাওয়াই ভালো। অনলাইনে আগোডা, বুকিং ডট কম থেকে হোটেল বুকিং করতে পারেন। ভ্রমণের তারিখ থেকে যত আগে হোটেল বুকিং করবেন খরচ ততো কম পড়বে। সাধারণ ডেইরা এলাকায় হোটেলে থাকতে দুই জনের প্রতি রাতের জন্য খরচ হতে পারে ২০০ থেকে ৩০০ দিরহাম।

দুবাইয়ে কোথায় খাবেন?

ডেইরা এলাকায় থাকলে চারপাশের পরিবেশ বাংলাদেশের মতই মনে হবে। কারণ এখানকার অধিকাংশ দোকান পরিচালনা করছেন বাংলাদেশি ও ভারতীয়রা। অনেক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ও গ্রোসারি শপ রয়েছে এখানে। পছন্দ অনুযায়ী একেক সময় একেক রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে পারেন। দুই জনের প্রতি বেলায় বাংলাদেশি খাবারে খরচ হতে পারে ১ হাজার টাকা। এছাড়া কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ড’স এর মতো আন্তর্জাতিক রেস্টুরেন্টগুলোর শাখাও রয়েছে আশেপাশেই।

দুবাই ভ্রমণের ৪ রাত ৫ দিনের পরিকল্পনা [Dubai Tour Details]

প্রথম দিন

দুবাই ভ্রমণে আমি বেছে নিয়েছিলাম ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। বাংলাদেশ থেকে বিকেল ৫ টার ফ্লাইটে দুবাই পৌঁছেছিলাম সেখানকার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টায়। খুব দ্রুতই ইমিগ্রেশন শেষ হয়েছিল। এরপর মেট্রো রেলে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১৫ মিনিটেই পৌঁছে যাই ডেইরাতে আমাদের হোটেলে। হোটেলের পাশেই ছিল ডেইরার বিখ্যাত বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ‘ব্রেকফাস্ট’। এই রেস্টুরেন্টে কর্মরত সবাই প্রায় বাংলাদেশি। খাবারও ছিল বেশ সুস্বাদু। দামও ছিল সাধ্যের মধ্যেই।

দ্বিতীয় দিন

দুবাই ভ্রমণের দ্বিতীয় দিনের সকালটা ঘুরে দেখতে পারেন ডেইরার পাশেই দুবাই ক্রিক। ডেইরা দুবাই আর বার দুবাই দুই অঞ্চলের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ক্রিক নদী। স্থানীয়রা বলেন ‘ডেরা ক্রিক’। এই ছোট্ট নদীর বুক দিয়ে বয়ে চলে ছোট ছোট নৌকা। আরবিতে যাকে বলা হয় ‘আবরা’। অর্থাৎ খেয়া পারাপারের নৌকা।

দুপুরের খাবারের পর যেতে পারেন গ্লোবাল ভিলেজ। ডেইরা থেকে ট্যাক্সি বা বাসে এখানে যেতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো নানা ভাবে তুলে ধরা হয়েছে এখানে। পাশাপাশি রয়েছে কেনাকাটার সুবিধাও। এখানে বিশ্বের অনেক দেশের প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এসব প্যাভিলিয়নে গেলে সেসব দেশের পরিবেশ ও সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যাবে। চাইলে সেখান থেকে ওই দেশের জনপ্রিয় খাবার, পোশাকও কিনতে পারবেন।

Dubai-Global-Village

গ্লোবাল ভিলেজ বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত খোলা থাকে। গেটে টিকিট পাওয়া যায়। দাম ২৭ দিরহাম। তবে অনলাইন থেকে কাটলে ২২.৫ দিরহাম পড়বে। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে টিকিটের দাম কম-বেশি হয়।

গ্লোবাল ভিলেজের চারপাশের পরিবেশ আপনাকে মুদ্ধ করবেই। কারণ এখানকার প্যাভিলিয়নগুলো এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যে, একটি প্যাভিলিয়নই যেন একটি দেশ। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়েও রয়েছে নানা রকমের রেস্টুরেন্ট।

dubai-palm-jumeirah

গ্লোবাল ভিলেজ ঘুরে রাতে ৮-৯টার দিকে যেতে পারেন পাম জুমেইরাহ। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ। এখানেই রয়েছে বিশ্বখ্যাত হোটেল ‘আটলান্টিস’। সমুদ্রের বুকে পাম গাছের আকারে তৈরি এই দ্বীপ দুবাইয়ের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। গ্লোবাল ভিলেজ থেকে ট্যাক্সিতে যেতে পারেন পাম জুমেইরাহ। দ্বীপের একদম শেষ প্রান্তে আরব সাগরের তীরে গাড়ি থামিয়ে কাটাতে পারেন খানিকটা সময়।

তৃতীয় দিন

দুবাই ঘুরতে যাবেন আর মরুভূমিতে ঘুরতে যাবেন না তা তো হতে পারে না। মরুভূমিতে ঘুরতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির সাথে। গুগলে একাধিক ট্রাভেল এজেন্সি সন্ধান পাবেন। যাদের মাধ্যমে ‘ডেজার্ট সাফারি’ প্যাকেজটি নিতে পারেন। জনপ্রতি খরচ হবে ৯০-১০০ দিরহাম। প্যাকেজ অনুযায়ী দুপুরের খাবার পর আপনাকে হোটেল থেকে গাড়িতে নিয়ে যাবে এবং সব শেষে আবার হোটেলে দিয়ে যাবে।

dubai-desert-safari

হোটেল থেকে ঘণ্টাখানেক পথ পেরিয়ে প্রথমেই নিয়ে যাবে একটি ঐতিহ্যবাহী দোকানে। যেখান থেকে আরব্য সংস্কৃতির নানা রকমের পোশাক কিনতে পারবেন। এখান থেকে নিয়ে যাবে মরুভূমির এক প্রান্তে। ৩০ মিনিটের বিরতি। এই সময়ে সেখানে কিছু দিরহাম খরচ করে ‘এটিভি কোয়াড বাইক’ চালাতে পারেন।

dubai-desert-safari

এরপর আবারো ৩০ মিনিটের পথ পেরিয়ে নিয়ে যাবে আরেকটা মরুভূমিতে। এখানে গাড়ি পরিবর্তন হবে। মরুভূমির উঁচু নিচু পথে চলার উপযোগী একটি গাড়িতে করে ১৫ মিনিটের রোমাঞ্চকর ভ্রমণ শেষে গাড়ি থামবে মরুভূমির ভেতর একটি ‘আস্তানায়’। এই আস্তানার চারদিকে কেবলই মরুভূমি। ভেতরে আরব্য ধারায় বসার জায়গা। ঠিক মাঝখানে ছোট্ট একটি মঞ্চ। এখানে বেলি ড্যান্স, তনুরা ড্যান্স, ফায়ার শো দেখা যাবে। সবশেষে রাতে খাবার। আবারো ঘণ্টাখানেক পথ পেরিয়ে হোটেলে।

চতুর্থ দিন

এদিন সকালেই কেনাকাটা করে ফেলতে পারেন। ডেইরাতেই রয়েছে কম খরচে ভালো কেনাকাটার জন্য ‘নেস্টো হাইপার মার্কেট’। প্রয়োজনের সবকিছুই পাওয়া যাবে এখানে।

দুবাই যাবেন আর সোনার অলংকার কিনবেন না তা কীভাবে হয়। সোনার অলংকার কিনতে যেতে পারেন ডেইরা গোল্ড সুকে। পছন্দের সব ডিজাইনের সোনার অলংকার পাবেন এখানকার সব দোকানেই। বিদেশ থেকে কোনো ধরনের কাস্টমস চার্জ ছাড়া ১০০ গ্রাম পর্যন্ত সোনার অলংকার আনতে পারবেন। সোনার অলংকার কেনার সময় যে ট্যাক্স আসবে দেশে ফেরার সময় এয়ারপোর্টে নির্ধারিত ট্যাক্স রিটার্ন কাউন্টারে তার রসিদ দেখিয়ে ট্যাক্স ফেরতও পাবেন।

কেনাকাটা শেষে বিকেলে যেতে পারেন মেরিনা বিচে। ডেইরার বানিয়াস মেট্রো স্টেশন থেকে সরাসরি মেরিনা বিচে যেতে পারেন। এই বিচ সবসময় ইউরোপিয়ানদের পদচারণায় মুখরিত থাকে।

Burj-Khalifa-Dubai-Arman

মেরিনা বিচ থেকে আবারো মেট্রো রেলে যেতে পারেন দুবাই মল ও বুর্জ খলিফায়। এখানে না গেলে আপনার দুবাই ভ্রমণ অনেকটাই বৃথা। দুবাই মলের প্রতিটি ফ্লোরই আকর্ষণীয়। চাইলে কেনাকাটাও করতে পারেন। এখান থেকে বের হলেই বুর্জ খলিফা। নিচের ফাউন্টেইন শো। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এই শো দেখা যায়। বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই ফাউন্টেইন শো দেখার জন্যও অনেক পর্যটক দুবাই আসেন।

পঞ্চম দিন

পঞ্চম দিন অর্থাৎ দুবাই ভ্রমণের শেষ দিনে সকালেই আমরা ট্যাক্সিতে এয়ারপোর্ট চলে আসি। ফেরার সময় ইমিগ্রেশনে একটু ভিড় বেশি থাকে। তাই সময়ও লাগে বেশি। এজন্য হাতে পর্যপ্ত সময় রাখবেন।

শুভ হোক আপনার দুবাই ভ্রমণ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com