রাজশাহী মহানগরীর টি-বাঁধ এলাকা। বিকেলের সূর্য তখন মিষ্টি তাপ ছড়িয়েছে। সেই আলোয় পদ্মাপাড়ের বালিতে পেতে রাখা চেয়ারে সবে চোখ বুঝে মিষ্টি রোদ গায়ে মাখছে অনন্যা ও বিথি। তারা দুজনেই রাজশাহীর একটি কলেজে পড়াশোনা করে। পড়ার ফাঁকে নিজেদের একটু জিরিয়ে নিতে প্রায়দিনই তারা এখানে আসে। তারা বলেন, সারাদিন ক্লাস-কোচিং করে বেশ ক্লান্ত হয়ে আমরা এখানে আসি। কিছুটা মিষ্টি রোদ আর হালকা শীতল বাতাস মিলে এক মজার অনুভূতি হয়। এখান থেকে সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে বাড়ি যাই। এখানে আসলেই সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। মনে হয় যেন সমুদ্রপাড়ে আছি।
পদ্মার পানির কাছাকাছি সারি সারি ছাতার নিচে পাতা রয়েছে এ ধরনের বিচ চেয়ার। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) পক্ষ থেকে পদ্মাপাড়ের দর্শনার্থীদের বিনোদনের নতুন সংযোজন হিসেবে এই ছাতা-চেয়ারের পাশাপাশি বিচ বাইকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। বদলে যাওয়া পদ্মাপাড়ে এখন মিলছে সমুদ্রের স্বাদ। এই স্বাদ নিতে অবশ্য গুনতে হবে ২০ টাকা। এ টাকায় সমুদ্রের মতো স্বাদ নেওয়া যাবে এক ঘণ্টা। মহানগরীর সাহেব বাজার থেকে এসেছেন নিশাত মজুমদার ও তার ভাবি রিয়া মজুমদার। এক ছাতার নিচের চেয়ারে বসে রয়েছেন। নিশাত বলেন, রাজশাহীর মানুষের ঘুরে বেড়ানোর জায়গা বলতেই পদ্মার পাড়। আগে পদ্মার পাড়ে তেমন মজা হতো না। এখন বসলেই একটু মজা করে গল্প করা যায়।
গল্প চলতে চলতেই পাশে এসে পড়লেন নিশাতের ভাই সমির মজুমদার। তিনি বলেন, আমাদের অফিস শেষে প্রায়দিনই এখনে এসে বসি। সমুদ্র তো অনেক দূর। কাজের চাপে যাওয়া হয় না। এখানে এসেই সেই মজাটা নিই। সিটি করপোরেশনের কর্মচারী মনিরুল ইসলাম এসব বেঞ্চের টিকিট বিক্রি করেন। তিনি বলেন, চালুর পর প্রথমদিকে সব সময়ই ভর্তি থাকতো। এখন একটু কম থাকছে। তবে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবগুলো চেয়ার বুক থাকে।
সন্ধ্যা তখন নামবে নামবে ভাব। চেয়ারের মাথার ওপর দিয়ে পদ্মার পানিতে মিশে গেলো সূর্য। জ্বলে উঠলো শহরের বাতি। চেয়ারগুলো তখন গোছাতে শুরু করলেন কর্মচারীরা। তখন সমির বলে উঠলেন, চলো যাই, সমুদ্রতো বাড়ির কাছেই। কাল আবার পদ্মায় সমুদ্রের হাওয়া খাওয়া হবে।