আমাদের কর্মব্যস্ত এই জীবন সর্বদাই ছুটে চলেছে। ক্লান্তি বা অবসাদ থাকা সত্ত্বেও থেমে নেই কোনো কিছু। মাঝে মাঝে উপলব্ধি করতে পারবেন জরাজীর্ণ সময় থেকে আপনি কিছু সময়ের জন্য মুক্তি পেতে চান। ইচ্ছা হবে নিজেকে উপভোগ করতে কিংবা আমার আমিকে খুঁজে পেতে। সতেজ এবং প্রাণবন্ত একটি পরিবেশে ভ্রমণ আপনাকে এই মুক্তি দিতে পারে।
আপনাকে করে তুলবে আরও সতেজ এবং প্রাণবন্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্যের সাথে প্রাণবন্ত একটি জায়গা ইন্দোনেশিয়ার জিলি আইল্যান্ড। আনন্দদায়ক ভ্রমণের জন্য এবং মুগ্ধতায় ভরা টাটকা অভিজ্ঞতা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে ইন্দোনেশিয়ার জিলি আইল্যান্ডে। এটি পৃথিবীর মধ্যে এমন একটি জায়গা যেখানে মোটর চালিত কোন কিছু নেই, নেই কোন ট্রাফিক শব্দ। সব মিলে দারুণ একটি উপভোগ্য পর্যটন স্থান।
জিলি আইল্যান্ড মূলত তিনটি আইল্যান্ড এর সমন্বয়ে গঠিত-জিলি ট্রাওয়ানগান, জিলি মেনো, জিলি এয়ার যেগুলো ইন্দোনেশিয়ার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত । প্রায় ১৫ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে জিলি দ্বীপ অবস্থিত। এখানকার তাপমাত্রা ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত থাকে।
জিলি দ্বীপে আগত ভ্রমণকারীদের ছবির মত আঁকা রূপ প্রেরণ করে। এটি পর্যটকদের ভ্রমণ এর জন্য অসাধারণ একটি দ্বীপ। এখানে অবস্থিত সমুদ্র তটে রয়েছে সারিবদ্ধ অসংখ্য বার এর দোকান এবং রেস্টুরেন্ট। এই জায়গাগুলো শেষ রাতে বিভিন্ন ধরনের ডি জে পার্টি এবং সরাসরি মন মাতানো ব্যান্ডের গান ইত্যাদি দিয়ে উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়।
এখানে বারগুলো চরম পর্যায়ের ককটেল পরিবেশন করে এবং অনেক সময় আগুন নিয়ে খেলা করে। নৃত্যশিল্পীরা তাদের মনোমুগ্ধকর আগুন নিয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করে। সাধারণ দর্শকদের উচ্ছ্বসিত আকর্ষণের মাত্রা বেড়ে যায় অনেক গুণে।
জিলি দ্বীপে খুব সহজেই কাচের মতো স্বচ্ছ পানিতে পরিভ্রমণ করতে পারেন। পানিতে ডাইভিং এর জন্য এটি পৃথিবীর অন্যতম খ্যাত নামা জায়গা। এক্ষেত্রে পর্যটকদের সাহায্য করার জন্য দক্ষ কর্মী রয়েছে। দক্ষ কর্মীরা আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। কাঁচের মত স্বচ্ছ পানিতে ডুব দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় গভীর দেশের সামগ্রিক জীববৈচিত্র্য অভিভূত হওয়ার মত। মনে হবে যেন সমুদ্রের নিচে কোন নিখুঁত কারিগরের সৃষ্টি অন্য আরেক জগত। ভ্রমণের জন্য জিলি দ্বীপে প্রায় ১৯টি জায়গা রয়েছে। জনপ্রিয় কয়েকটি জায়গা হল সার্ক পয়েন্ট, মান্তা পয়েন্ট, বায়োন্টি রেক।
খুব সহজেই অনেকটা সময় সমুদ্রের তলদেশের দৃশ্যপট দেখতে চাইলে নলাকৃতি মত এক ধরনের বস্তু মুখে প্রবেশ করাতে পারেন এবং মাছের মতো বিশেষ পোশাক পরিধেয় করাটাও অনেকটা জরুরী। যদি নিজস্ব পোশাক নাও থাকে সেক্ষেত্রে আপনি স্থানীয় দোকানগুলো থেকে ভাড়া করতে পারেন।
জিলি দ্বীপের পানি বেশিরভাগ জায়গায় অগভীর। নির্দিষ্ট মৌসুমে ঘুরতে আসলে বোনাস হিসেবে আপনার সাথে সামুদ্রিক কচ্ছপেরাও ঘোরাফেরা করতে পারে। যখন সমুদ্রের তলদেশে ঘুরে বেড়াবেন মনে হবে যেন নীল জলরাশিতে আরো অনেক কিছু অন্বেষণ করে বেড়াই। এই অন্বেষণ যেন শেষ না হয়।
জিলি সার্ফিংয়ের খেলার মাঠ উপভোগ করা বিশেষ রোমাঞ্চকর। সারফিং-এর দৃশ্যগুলোতে দেখা যাবে বিভিন্ন ধরনের পানিতে কার্যকলাপ। প্রবাল প্রাচীরের উপর এই কৌশল দেখে মনে হতে পারে কত সহজেই মানুষগুলো এসব পরিচালনা করছে। আপনি চাইলে নিজেও অংশ নিতে পারেন। যদি নিজস্ব কোন সার্ফিং বোর্ড অর্থাৎ সারফিং-এর জন্য তক্তা না থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ভাড়া নিতে পারেন।
শুধু তাই নয় জিলি দ্বীপে রয়েছে পানির নিচে সবথেকে আকর্ষনীয় কিছু মানুষের মূর্তি। যেগুলো দেখে মনে হবে বহু বছর পূর্বে এখানে কেউ বসবাস করত। যদিও এটি এক বিশেষ প্রত্নতাত্ত্বিক বিদ্যায় তৈরি করা হয়েছে।
তিনটি জিলি দ্বীপের মধ্যে ট্রাওয়ানগান জিলি দ্বীপে পর্যটকরা বেশি সময় যায়। এখানে একটি রহস্যময় পাহাড় রয়েছে। পাহাড় বেয়ে উঠতে উঠতে অস্বাভাবিক অনেক কিছু আবিষ্কার করতে পারবেন। প্রথমেই দেখতে পাবেন একটি রহস্যময় ঘর যেটি মুসলিম সমাধিস্থল সংলগ্নে অবস্থিত। এরপর আপনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাপানের একটি বাংকারে হোঁচট খাবেন। আপনার দেখে মনে হবে যুদ্ধের ধ্বংসলীলা যেন পৃথিবীর সর্বত্রই বিরাজমান ছিল, বাদ যায়নি এই জিলি দ্বীপও।
একদম শেষে উপরে ওঠার পর আপনার নিজের শ্রমসাধ্য বেয়ে ওঠার ক্লান্ত দেহ নিমিষেই আনন্দে ভরে যাবে। পাহাড়ের উপর থেকে পুরো দ্বীপ দেখেতে পাবেন। চারপাশের অথৈ পানি, সৈকতের পাড়, মহিমান্বিত রিনজানি পাহাড়ের সীমান্তবর্তী জায়গা সবকিছু মিলে মিশে এক অপার সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। আর সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় সময়টাকে বলা হয় সবথেকে উৎকৃষ্ট সময়।
ভ্রমণের জন্য আপনি ঘোড়ার পিঠে চড়তে পারেন অথবা ঘোড়ার এক বিশেষ গাড়ি যাকে স্থানীয় ভাষায় সিডোমো বলা হয় সেখানে উঠতে পারেন। এগুলো দ্বীপের সর্বত্রই পাওয়া যায়। দুই থেকে চার জন পর্যন্ত যাত্রী উঠতে পারেন। এছাড়া আপনি সাইকেলে করে ঘুরতে পারেন।
শুধু ঘোরাঘুরি কেন, ছুটির দিনে স্থানীয় খাবার রান্না করা শিখতে পারেন। ট্রাওয়ানগান দ্বীপে বিভিন্ন ক্লাস নেয়া হয় রান্নার ওপরে। মিষ্টান্ন খাবার থেকে শুরু করে ঝাল জাতীয় বিভিন্ন খাবারের উপর ক্লাস করানো হয় যা খুবই জনপ্রিয়।
এছাড়া রয়েছে বিশেষ স্পা ব্যবস্থা। ঐতিহ্যবাহী মেসেজ এবং প্রয়োজনীয় তৈলাক্ত উপকরণ দিয়ে শরীরের সমস্ত ক্লান্তি নিমিষেই দূর করে দেওয়া হয়। নিজেকে সতেজ ও প্রাণবন্ত তৈরি করতে এখানকার স্পার জুড়ীর কমতি নেই।
যেভাবে যাবেন :
বাংলাদেশ থেকে জিলি দ্বীপে যেতে হলে প্রথমত ঢাকাস্থ শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে লম্বকে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার সময় লাগবে প্রায় ৯ ঘণ্টা এবং খরচ পরবে ১৩,০০০ টাকা থেকে ৪২,০০০ টাকা পর্যন্ত। এরপর বাসে করে সেনজিজিতে যেতে হবে। এক্ষেত্রে খরচ পরবে ১০০ টাকা। সেখানে পৌঁছনোর পর ট্যাক্সি করে বাংসালে যেতে হবে। এক্ষেত্রে খরচ পরবে প্রায় ৩৫০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকা পর্যন্ত। বাংসালে যাওয়ার পর পাবলিক নৌকায় করে জিলি দ্বীপে যেতে হবে। এক্ষেত্রে খরচ পরবে প্রায় ৫০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা পর্যন্ত।
খাওয়া-দাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা :
জিলি দ্বীপের আশেপাশে অসংখ্য হোটেল রয়েছে থাকার জন্য। প্রতি রাতের জন্য খরচ পরবে প্রায় ৫০০ টাকা থেকে ১৪,০০০ টাকা পর্যন্ত। এখানে খাবারের খরচ খুব কম। মাত্র ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
লক্ষনীয় বিষয় :
জান্নাতুল ফেরদৌস