হলিডে উৎযাপনের জন্য সিঙ্গাপুরকে বেছে নেয়ার প্রথম কারণ হতে পারে বাংলাদেশ থেকে এর স্বল্প দূরত্ব। সঙ্গে অসংখ্য ফ্লাইট অপশন। ঘুরে বেড়ানোর জন্য বিচিত্র সব আকর্ষণীয় জায়গা তো রয়েছেই।
এখানে রয়েছে শিশুদের মাতিয়ে রাখার মত সব পার্ক, প্লে-গ্রাউন্ড, রাইড ইত্যাদি। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রয়েছে উপভোগ করার মত শপিং মল, মারিনা, সূর্যাস্ত দেখার জায়গা ইত্যাদি।
সেন্টোসা দ্বীপ
মজার রাজ্য নামে খ্যাত সেন্টোসা দ্বীপ শিশুদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য চমৎকার একটা জায়গা। এই দ্বীপে যাওয়ার পথ থেকেই যেন রোমাঞ্চ শুরু। মাউন্ট ফ্যাবার থেকে ক্যাবল-কার যোগে যেতে হয় সেন্টোসা দ্বীপে। ক্যাবল-কার থেকে আপনি উপভোগ করতে পারবেন সিঙ্গাপুর হারবারের এরিয়াল ভিউ।
সাতটি ভিন্ন ভিন্ন থিমে সাজানো ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে গিয়ে উঠতে পারেন রোমাঞ্চকর সব রাইডে। সাই ফাই সিটি জোনে শিশুদের জন্য রয়েছে ব্যাটেলস্টার গ্যালাক্টিকা, হিউম্যান ভার্সেস সাইক্লোন রোলার কোস্টার। রিভেঞ্জ অব দ্যা মামি সিনেমার থিমে রয়েছে আরও একটি রোলার কোস্টার।
মাদাম তুসো জাদুঘরে গিয়ে বিশ্বের নামীদামী সব ব্যক্তিত্বের অবয়বে তৈরি মোমের পুতুলের সাথে সেলফি তুলতে পারেন সপরিবারে।
পরিবার নিয়ে একবার হলেও অবশ্যই যাওয়া উচিত এসইএ একুরিয়ামে। দশটি জোনে বিভক্ত এই একুরিয়ামে আপনি দেখতে পারবেন হাঙ্গর, মানটা রে সহ এক লাখের বেশি সামুদ্রিক প্রাণী। আরও রয়েছে চোখ ধাঁধানো অপটিকাল আর্ট মিউজিয়াম, ট্রিক আই মিউজিয়াম, থ্রিডি আর্ট।
সিঙ্গাপুরের ওয়াটার স্লাইড গুলো সারা বিশ্বে সমাদৃত। এডভেঞ্চার কোভ ওয়াটার পার্কের রেইনবো রিফে পরিবারের সবাইকে নিয়ে স্নোরকেলিং করতে পারেন। যেখানে পানির নিচে সাঁতার কেটে দেখতে পারবেন বিশ হাজারের বেশি রঙ বেরঙের মাছ। ডলফিন দ্বীপে গিয়ে দেখা করে আসতে পারেন বিলুপ্ত প্রজাতির বোতল আকৃতির নাক বিশিষ্ট ডলফিনের সাথে।
সিঙ্গাপুর চিড়িয়াখানা
১১টি জোনে বিভক্ত সিঙ্গাপুর চিড়িয়াখানায় দেখা মিলে ৩০০ এর বেশি প্রজাতির বন্য প্রাণীর। আপনার শিশুদের সাথে নিয়ে ওরাংউটাং এর পাশে বসে সকালের নাস্তা করার সুযোগটাও হাত ছাড়া করবেন না।
সন্ধ্যায় ঢুকে যেতে পারেন রেইনফরেস্ট লুমিনা-তে। এটি এশিয়ার সর্বপ্রথম মাল্টি সেন্সরি ভারচুয়াল প্রাণী প্রদর্শনী। এখানে কৃত্তিম উপায়ে তৈরি করা হয়েছে বন্য প্রাণী। যারা প্রযুক্তির সাহায্যে জ্যান্ত প্রাণীর মতই নড়াচড়া করতে পারে ও শব্দ করতে পারে।
নাইট সাফারি
শিশুদের জন্য মজার জায়গার তালিকাতে নাইট সাফারির নাম থাকা অবশ্যক। এটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম সাফারি পার্ক যেটা বানানো হয়েছে নিশাচর প্রাণীদের বিচরণের জন্য। এই পার্কে রয়েছে ২৫০০ এর উপরে নিশাচর প্রাণী। নিরক্ষীয় আফ্রিকা, হিমালয়ের পাদদেশ, ইন্দো-মালয় সহ মোট সাতটি ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত রয়েছে এই সাফারি পার্কটি। গাইডের নির্দেশনায় ট্রামে করে সপরিবারে ঘুরে আসুন রোমাঞ্চকর এই সাফারি পার্কে।
গার্ডেন বাই দ্যা বে
সিঙ্গাপুরে পারিবারিক ভ্রমণে গেলে যে জায়গায় বাদ দেয়া চলবে না সেটা হল- গার্ডেন বাই দ্যা বে। এটি একটি অত্যাধুনিক বোটানিক্যাল গার্ডেন। এই বাগানে সন্ধ্যায় গেলে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হবেন। কারণ এখানে রয়েছে সুপারট্রি নামের বিশাল বিশাল কাঠামো। যার শরীর বেয়ে উঠে গেছে নানা জাতের লতানো গাছ ও নানা রঙের আলোকসজ্জা। এই সুপারট্রি গুলোতে বেয়ে উঠেছে প্রায় ২০০ জাতের লতা গাছ। এই বাগানেই আয়োজিত হয় গার্ডেন র্যাপসডি নামের প্রদর্শনী। সুপারট্রি গুলোর পাদদেশে নানা রকম আলোর খেলা ও শব্দ বিন্যাসে সাজানো এই গার্ডেন র্যাপসডি শো।
গার্ডেন বাই দ্যা বে এর আরেকটি আকর্ষণ হল ক্লাউড ফরেস্ট ডোম। দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সত্যিকারের ক্লাউড ফরেস্টের আবহাওয়াকে কৃত্তিম ভাবে তৈরি করা হয় এই গার্ডেনের ভিতরেই। এখানে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ৩৫ মিটার দীর্ঘ কৃত্তিম জলপ্রপাত। এখানে দেখতে পাবেন চোখ জুড়ানো সুন্দর নানা ধরনের পরগাছা যেগুলো প্রাকৃতিক ভাবে শুধুমাত্র ক্লাউড ফরেস্টেই জন্মায়।
গার্ডেন বাই দ্যা বে তে রয়েছে ফ্লাওয়ার ডোম নামের বিশ্বের সব চেয়ে বড় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গ্রিন হাউজ। এটি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের প্রকৃতিকে হুবাহু তৈরি করে এই কাঁচের তৈরি ঘরের ভেতর। যেখানে কৃত্তিম ভাবে বেড়ে উঠছে ১৬০ প্রজাতির প্রায় ৩২,০০০ গাছ।
মেরিনা বে স্যান্ডস স্কাইপার্ক
সিঙ্গাপুর ভ্রমণকে পরিপূর্ণ করতে পরিবার নিয়ে চলে যান মেরিনা বে স্যান্ডস হোটেলের চূড়ায় অবস্থিত স্কাইপার্কে। মাটি থেকে ২০০ মিটার উঁচুতে ৫৭ তলার উপরে এই পার্কটি আসলে একটি পর্যবেক্ষণ ডেস্ক। যেটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। পুরো সিঙ্গাপুরের প্যানোরামা ভিউ দেখতে পাবেন মেরিনা বে স্যান্ডস হোটেলের এই চূড়া থেকে। পানি ও আলোকবর্তিকার প্রদর্শনী দেখতে পারেন মেরিনা বে স্যান্ডস হোটেলের স্পেক্ট্রা-তে। নান্দনিক অর্কেস্ট্রা সঙ্গীতের তালে তালে আলোকরশ্মি ও পানির ফুয়ারার নাচনের এই শো দেখতে পাবেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।