আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, চতুর্দিকে সবুজ আর রঙবেরঙের ফুলের সমারোহ, পাহাড় থেকে কলকল শব্দ তুলে নেমে আসা উচ্ছল জলপ্রপাত, টলটলে জলের লেক – এসব নিয়েই শিলং, মেঘালয়ের রাজধানী ছোট্ট পাহাড়ি শহর। নীল আকাশের গায়ে সবুজ রঙে আঁকা পাহাড় ব্রিটিশদের মনে করিয়ে দিয়েছিল স্কটল্যান্ডের কথা। শিলং-এর আরেক নাম তাই প্রাচ্যের স্কটল্যাণ্ড। আবার শিলং নাম কী করে হল তা নিয়েও গল্প আছে। বিসি গ্রামে কাছে এক কুমারী মার এক পুত্র সন্তান ছিল। দেখতে দেখতে একদিন সে হয়ে উঠল সুন্দর, শক্ত, সমর্থ্য এক যুবা পুরুষ, এ অঞ্চলের দেবতা হল সে। তার নাম শিলং আর তার নাম থেকেই শহরের নামও হল শিলং। আর এরকম কত গল্প যে ছড়িয়ে আছে শিলং শহরের আশেপাশে, জলপ্রপাত আর লেকের জলে, পাহাড়ের গায়ে তার ঠিক নেই।
শিলং পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে গেছিল, সেদিন তাই আর কোথাও যাওয়া হয়নি, রাস্তায় পড়লেও দেখা হয়নি উমিয়াম লেক। তাই পরের দিন জলখাবার খেয়ে সকাল সকাল বেরোবার কথা ছিল। বেরোলামও। আমাদের ভ্রমণ সুচীতে প্রথম গন্তব্য ছিল মাওলিলং, শিলং থেকে যার দূরত্ব নব্বই কিলোমিটারের মতো। মাওলিলং গত কয়েক বছর ধরে অনেকেরই ভ্রমণ সূচীতে স্থান পাচ্ছে তার সৌন্দর্য আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্যে। এটিই সেই গ্রাম যা এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামের স্বীকৃতি পেয়েছে। মাওলিলং-এ প্রথম দেখলাম লিভিং রুট ব্রিজ। প্রকৃতির সাহায্যেই প্রকৃতির দুর্গমতাকে জয় করার এক অদ্ভুত নিদর্শন এই লিভিং রুট ব্রিজ। এক বিশেষ প্রজাতির ভারতীয় রবার গাছের ঝুরি দিয়েই এই সেতু তৈরি হয়।
এই অঞ্চলের আর্দ্র আবহাওয়া এই রবার গাছের পক্ষে আদর্শ, তাই এখানে এদের দেখাও যায় প্রচুর। খাসি, জয়ন্তিয়া পাহাড়ের ঢাল বরাবর আছে বহু ঝরণা, জলপ্রপাত আর পাহাড়ের পা ছুঁয়ে বয়ে চলে ছোটো ছোটো খরস্রোতা নদী। এইসব নদী পেরোনোর জন্যে দরকার সেতু, এখানকার আদিম অধিবাসীরা কাজে লাগাল রবার গাছের ঝুরিকে। সুপারি গাছে কাণ্ড লম্বালম্বি আর্দ্ধেক করে চিরে ফেলে ফাঁপা করে নেওয়া হয়, তারপর যেখানে সেতুর প্রয়োজন সেখানে এই কাণ্ডগুলোকে রাখা হয় এমনভাবে যাতে রবার গাছের ঝুরিগুলো এদের মধ্যে দিয়ে যায়। ঝুরিগুলো ক্রমশ বাড়তে বাড়তে এক সময় নদীর অপর পাড়ে পৌঁছে যায় এবং সেখানে মাটির ভেতর ঢুকে যায়। কখনো কখনো দু পাড়ের দুটো গাছের ঝুরিকে এভাবে অপর দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। ঝুরির মাঝের ফাঁকফোকর পাথর দিয়ে বোজানো হয়। গাছের শেকড়ের সেতু শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এগুলো কিন্তু বেশ শক্তপোক্ত। একসঙ্গে পঞ্চাশজন লোকও যাতায়াত করতে পারে এর ওপর দিয়ে। তবে এগুলো ব্যবহারের উপযোগী হতে বেশ কয়েক বছর লেগে যায়।
এবড়ো খেবড়ো পাথুরে রাস্তায় বনের ভেতর দিয়ে অনেকটা নেমে গিয়ে দেখতে পেলাম এই লিভিং রুট ব্রিজকে। গাছের শেকড় একসঙ্গে করে নদী পারাপারের জন্যে যে এরকম সেতু তৈরি হয় তা শুনেছিলাম, তবে না দেখলে বোধহয় বিশ্বাস করা শক্ত হত। ঝুরি দিয়ে দুপাশে রেলিং-এর মতোও করা হয়েছে। অক্টোবর মাসের সকালবেলাতে যদিও সূর্যদেব প্রখর তাপ বর্ষণ করছিলেন, কিন্তু ছায়া ঘেরা এই পথটা ছিল বেশ ঠাণ্ডা ঠান্ডাই।
লিভিং রুট ব্রিজ দেখে গেলাম মাওলিলং গ্রামে। ছোট্ট একটা গ্রাম, আশি-নব্বুইটির মতো পরিবার বাস করে এখানে, স্বাক্ষরতার হার একশো শতাংশ। গ্রাম দেখে সত্যিই চোখ জুড়িয়ে গেল। এত সবুজ আর এত পরিষ্কার! রাস্তাগুলো অবধি ঝকঝক তকতক করছে। রাস্তার পাশে পাশে বাঁশের তৈরি তিনকোণা ডাস্টবিন রাখা। সম্প্রতি এখানে পর্যটকদের সংখ্যা খুব বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেকে থাকতেও চান, তাই তৈরি হয়েছে হোম স্টে। তবে শিলং থেকে এসে মাওলিলং দেখে আবার শিলং-এও ফিরে যাওয়া যায়।
পরের গন্তব্য ডওকি, ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একট ছোটো শহর। ডওকি তামাবিল একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথ। প্র্তিদিন প্রায় পাঁচশো ট্রাক এ পথে যাতায়াত করে। মাওলিলং থেকে ডওকি যাবার রাস্তাটাই খুব সুন্দর, পাকদন্ডী দিয়ে ঘুরে ঘুরে যাওয়া আর সুবিধে মতো জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে ড্রাইভার কাম গাইডভায়ের বাংলাদেশ দেখানো। আমাদের প্রতিবেশী দেশকে এসব জায়গা থেকে একেবারে পরিষ্কার দেখা যায়। ডওকি দিয়ে বয়ে গেছে উমঙ্গট নদী যা খাসি আর জয়ন্তিয়া পাহাড়কে আলাদা করেছে। মার্চ এপ্রিল মাসে এই নদীতে হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা, সেও এক দেখার জিনিস। দু পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া পান্না সবুজ উমঙ্গট এক কথায় অসাধারণ সুন্দরী। ছোটো ছোটো ডিঙি নৌকো নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জেলেরা, এ নদীতে নাকি প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। ইচ্ছে করলে এরকম নৌকোতে করে উমঙ্গটে ঘোরাও যায়। এ নদীর কিছুটা অংশ বাংলাদেশে প্রবাহিত। স্থানীয় মানুষরাই দেখিয়ে দিলেন নদীর কোন অংশের পর থেকে বাংলাদেশ।
চেরাপুঞ্জি, যার আসল নাম সোহরা, ছিল আমাদের পরের দিনের ভ্রমণ সূচীতে। সমুদ্রতল থেকে চোদ্দশ চুরাশি মিটার উচ্চে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি সবুজ পাহাড়ে ঘেরা একটা শহর। আকাশে তার যখন তখন মেঘের আনাগোনা, যখন তখনই নেমে আসে রিমঝিম বৃষ্টি, পাহাড় থেকে বয়ে আসা ঠাণ্ডা হাওয়া কাঁপন ধরায় শরীরে। চেরাপুঞ্জির কাছেই মৌসিনরাম, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী বৃষ্টি এখানেই হয়। চেরাপুঞ্জিতে রাস্তায় যেতে যেতে পাহাড়ের চূড়ো থেকে সাদা ফেনার ঘাঘরা দুলিয়ে নেমে আসা অনেক জলপ্রপাতের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওয়াহকাবা, নহ কা লিকাই আর সেভেন সিসটারস ফলস। নহ কা লিকাই আমাদের দেশের উচ্চতম এবং পৃথিবীতে চতুর্থ উচ্চতম জলপ্রপাত। তিনশ চল্লিশ মিটার ওপর থেকে এই জলপ্রপাতের ঘন বনে ঢাকা পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। কিন্তু যখন জানতে পারলাম এর এই নহ কা লিকাই নামের ইতিহাস, মন বেদনা বিধুর হয়ে উঠল।
কাছেই এক গ্রামে থাকতেন লিকাই নামে এক মহিলা, এক শিশু কন্যা নিয়ে অল্প বয়েসেই তিনি স্বামীহারা হয়েছিলেন। আবার বিয়েও করেছিলেন কিন্তু অর্থ উপার্জনের জন্যে লিকাইকে উদয় অস্ত পরিশ্রম করতে হত। কাজের জন্যে সারা দিন তিনি তাঁর বাচ্ছা মেয়ের দেখাশোনা করতে পারতেন না, তাই দিনের শেষে বাড়ি ফেরে সে ঘাটতি পুরণ করতে চাইতেন। কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় স্বামীর এটা ঘোর অপছন্দ ছিল। একদিন লিকাই-এর অনুপস্থিতিতে তিনি বাচ্ছা মেয়েটিকে হত্যা করলেন এবং তার মাংস রান্না করে রেখে দিলেন। লিকাই দিনের শেষে বাড়ি ফিরে কাউকে দেখতে পেলেন না, মেয়েকেও না। নিজেও ক্ষুধার্ত, পরিশ্রান্ত ছিলেন, তাই কিছু খেয়ে মেয়েকে খুঁজতে যাবেন ভাবলেন। কিছু না জেনেই লিকাই রান্না করা মাংস খেলেন। খাওয়ার পর অভ্যেস মতো পান খেতে গিয়ে ছোট্ট একটা আঙুল দেখতে পেলেন। লিকাই বুঝলেন কী নৃশংস কাণ্ড করেছেন তাঁর স্বামী আর না জেনে তিনিও কী করেছেন। শোকে দুঃখে উন্মত্ত হয়ে লিকাই পাহাড়ের মাথা থেকে জলপ্রপাতে ঝাঁপ দিয়ে পড়লেন। সেই থেকে এর নাম নহ কা লিকাই অর্থাৎ যেখান থেকে লিকাই পড়ে গেছিলেন। বড়োই মর্মান্তিক কাহিনি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নেমে এলাম ভিউ পয়েন্ট থেকে।
সাত ভাগে বিভক্ত হয়ে যে জলপ্রপাত খাসি পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে তার নাম সেভেন সিস্টার্স ফলস। তবে সাতটা ধারা বর্ষাকাল ছাড়া ভালো বোঝা যায় না। পরের গন্তব্য মাওসমাই গুহা। চুনা পাথরের অন্যান্য গুহার মতো এখানেও স্ট্যালাকটাইট, স্ট্যালাগমাইটের নানারকম আকার দেখা যায়। গুহার মাত্র দেড়শো মিটারই পর্যটকদের যাওয়ার জন্যে উন্মুক্ত। ক্রমাগত জল পড়ার কারণে গুহার মেঝে খুবই পিচ্ছিল, তবে আলোর ব্যবস্থা পর্যাপ্ত আছে। এবার ফেরার পালা, গাড়ি ছুটল শিলং-এর দিকে। হঠাৎ দেখি রাস্তার এক বাঁকে এক মহিলা অনেক অর্কিডের চারা নিয়ে বসে আছেন। অতএব গাড়ি থামানো এবং মহা উৎসাহে অর্কিড কিনতে যাওয়া। ভদ্রমহিলা তাঁর মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানেন না, শুধু কয়েকটি মাত্র ইংরিজি শব্দ জানেন। কোনো চারা দেখিয়ে তিনি বলেন “পার্পল,” কোনোটা দেখিয়ে, “এলো,” আবার কোনোটাকে “বাইকোলোর,” কোনোটাকে তুলে ধরে বলেন, “টু হান্দ্রেদ।” এইটুকুই। আরো অনেক কিছু বলেছিলেন কিন্তু সেসব বোঝার ক্ষমতা আমার ছিল না। শেষ অবধি আমি বাংলাতেই কথা বলতে শুরু করলাম এবং আমাদের ড্রাইভারভাই হিন্দিতে। কিছুক্ষণ এরকম অপূর্ব কথোপকথন চালিয়ে কয়েকটা অর্কিড বগলদাবা করে আমি ফিরলাম।
শিলং শহরে উপভোগ করার জিনিস এর সৌন্দর্য। কলোনিয়াল গঠনের ঘর বাড়ি, বাড়ির সামনে ফুলে ভরা বাগান, চার্চ, পাহাড় ঘিরে এঁকে বেঁকে ওঠা রাস্তা, লেক – সব মিলিয়ে শিলং মনকে মুগ্ধ করে সহজেই। শিলং পিক শিলং-এর সবচেয়ে উঁচু জায়গা। আপার শিলং-এ উনিশ শো ছেষট্টি মিটার উচ্চতায় এটি অবস্থিত। এই জায়গাটি সেনাবাহিনীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, পিকে ওঠার জন্যে সচিত্র পরিচয় পত্র গেটে জমা রাখতে হয়, সকাল দশটা থেকে বেলা তিনটে অবধি পর্যটকদের জন্যে খোলা থাকে। শিলং পিক থেকে পুরো শিলং শহরের চমৎকার ভিউ পাওয়া যায়। মাথার অপর নীল ঝকঝকে চাঁদোয়া আর তার নীচে পাহাড়ের গায়ে গায়ে যেন ছোটো ছোট্ট খেলনা ঘর বাড়ি সাজানো। দেখতে দেখতে সময় কোথা দিয়ে কেটে যায়, টেরও পাওয়া যায় না।
শিলং শহরের এক্কেবারে মাঝখানে সুন্দর বাগান ঘেরা অশ্বক্ষুরাকৃতি কৃত্রিম হ্রদটি পরিচিত ওয়ার্ডস লেক নামে। নামকরণ হয়েছে স্যর উইলিয়াম ওয়ার্ডসের নামে, যিনি এক সময় আসামের চিফ কমিশনার ছিলেন, এই লেক তৈরির পরিকল্পনা তাঁরই। লেকের স্বচ্ছ জলে ভেসে বেড়ায় রাজহাঁসের দল, সবুজ গোল গোল পাতার মাঝে উঁকি মারে পদ্মফুল। লেকের জলে বোটিং করার সুবন্দোবস্ত আছে, তবে বোটিং না করলেও লেকের ধারে বেঞ্চে বসে ফুলের শোভা দেখতে দেখতেই সময় কেটে যায়। ছোট্ট একটা ব্রিজও আছে লেক পারাপার করার জন্যে। পিকনিক করার জন্যে এক আদর্শ জায়গা এই ওয়ার্ডস লেক। পাইন আর রোডোডেনড্রন গাছে ঘেরা এক সবুজ ঢেউ খেলানো উপত্যকায় রয়েছে শিলং-এর গলফ কোর্স।
আপার শিলং-এ রয়েছে মেঘালয়ের অন্যতম বিখ্যাত জলপ্রপাত এলিফ্যান্ট ফলস। এরকম অদ্ভুত নাম কেন? জলপ্রপাতের বাঁদিকে নাকি অনেকটা হাতির আকৃতি বিশিষ্ট একটা বড়ো পাথর ছিল, যেটা দেখেই ব্রিটিশরা এর নামকরণ করে এলিফ্যান্ট ফলস। যদিও সেই পাথরটা এখন আর নেই, ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু নামটা রয়ে গেছে। এলিফ্যান্ট ফলসের তিনটি ধাপ। শেষ দুটি ধাপ দেখতে গেলে পাইন আর ঘন বাঁশঝাড়ের বনের মধ্যে দিয়ে নেমে যেতে হয় অনেকটা নীচে, তবে নানারকম পাখির কলকাকলি, রংবেরঙের প্রজাপতির ওড়াউড়ি আর অর্কিডের ফুলের বাহার দেখেতে দেখতে যেতে কিন্তু বেশ ভালো লাগে। এলিফ্যান্ট ফলসের আশে পাশে সোয়েটার, শাল ইত্যাদির দোকান আছে। চা, কফিও পাওয়া যায়। গলা ভিজিয়ে নিতে নিতে দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায় বা পছন্দমতো জিনিসপত্র কেনা যায়। শিলং-এর অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে আছে ডন বস্কো মিউজিয়াম, লেডি হাইডারি পার্ক, ক্যাথিড্রাল অফ মেরি হেল্প অফ খ্রিস্টান ইত্যাদি।
শিলংকে বিদায় জানানোর সময় হয়েছিল, যাব কাজিরাঙায়, পথে পড়ল বড়াপানি বা উমিয়ম লেক। শুনলাম লেকের বিশাল বিস্তৃতর জন্যেই নাম বড়াপানি। শিলং থেকে পনেরো কিলোমিটার উত্তরে শিলং গুয়াহাটি হাইওয়ের ওপর এই লেক। উমিয়াম নদীতে ড্যাম তৈরি করার ফলেই এই রিসর্ভারের সৃষ্টি। আর উমিয়ম নদী কীভাবে হল? সে নিয়েও রয়েছে গল্পকথা। স্বর্গ থেকে দুই দেবকন্যা মেঘালয়ে আসছিলেন। একজন গন্তব্যে পৌঁছতে পারলেও, আরেকজন পারলেন না। বোনকে খুঁজে না পেয়ে কন্যে এতই কাঁদলেন যে তাঁর চোখের জলে এক নদীর সৃষ্টি হল। খাসি ভাষায় উমিয়ম শব্দের মানে চোখের জল। তবে যেভাবেই তৈরি হোক না কেন, লেকটি অতি মনোহর।
গাড়ি দাঁড় করিয়ে হাইওয়ের ওপরে ভিউ পয়েন্ট থেকে তাকে প্রথম দেখলাম আর দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। বিশাল এক হ্রদ, তার মাঝে ছোট্ট ছোট্ট দ্বীপ, তাতে মাথা উঁচু করে আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত পাইন, পেছনে পাহাড়! গাড়ি পাকদণ্ডী বেয়ে ঘুরে ঘুরে নামল নীচে, উমিয়ম লেকের প্রবেশ পথের কাছে। গেট থেকে হাঁটা পথে অনেকটা গেলে তবেই দেখা মেলে সেই টলটলে জলের, যেখানে পাহাড় ব্যস্ত নিজেকে দেখতে। ইচ্ছে করলে লেকে নৌকো ভ্রমণ করা যায়, তাছাড়া আরো নানারকম ওয়াটার স্পোর্স্টেরও ব্যবস্থা আছে। লেকের ধারে বসে বসে প্রকৃতির শোভা উপভোগ করেই আমরা কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে দিলাম। ওদিকে ড্রাইভারভাই তাড়া দিচ্ছেন, অনেকটা পথ যেতে হবে, তাই এবার যাত্রা শুরু না করলেই নয়। গাড়ি ছুটল কাজিরাঙার দিকে, পেছনে পড়ে রইল শিলং। সঙ্গে নিয়ে গেলাম একরাশ মুগ্ধতা। পেছন ফিরে তাকিয়ে চুপিচুপি বললাম, “আবার আসব তোমার কাছে”।
কীভাবে যাবেন
হাওড়া, শিয়ালদহ থেকে একাধিক ট্রেন (কামরূপ এক্সপ্রেস, সরাইঘাট এক্সপ্রেস, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ইত্যাদি) আছে গুয়াহাটিতে যাওয়ার। কলকাতা থেকে বিমানেও আসতে পারেন গুয়াহাটি বা সরাসরি শিলং-এ। গুয়াহাটি থেকে গাড়িতে শিলং যেতে ঘন্টা তিনেকের মতো লাগে।
কখন যাবেন
যদিও অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস মেঘালয় বেড়ানোর সবচেয়ে ভালো সময়, তাও বছরের যে কোন সময়েই যাওয়া যেতে পারে। এমন কী বর্ষাকালে মেঘের নিজের দেশের সৌন্দর্যও কিন্তু অন্যরকম।
কোথায় থাকবেন
শিলং – হোটেল পোলো টাওয়ার্স