দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম ওসেনেরিয়াম এটি। সহজ ভাষায় বললে, সামুদ্রিক প্রাণীর একটি বিশাল অ্যাকুরিয়াম এটি; দারুণ একটি থিম পার্ক। এখানে পর্যটকদের জন্য বিনোদনের নানা ব্যবস্থা আছে। এখানে তারা যেমন অনেক কাছ থেকে সমুদ্রের ছোট-বড় প্রাণী দেখতে পারেন, তেমন একটু সাহসী হলে ডাইভিংও করতে পারেন। হংকংয়ে যারা বেড়াতে আসেন, তাদের অন্যতম প্রিয় জায়গা এটি। ২০০৬ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন একে ‘বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় দশটি থিম পার্কের অন্যতম’ হিসেবে নির্বাচিত করে।
এখানে ৩ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য টিকিটের দাম ১৬০ হংকং ডলার; অন্যদিকে ১২ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের জন্য ৩২০ হংকং ডলার।
হংকংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত। এখানে হংকংয়ে যে কোনো স্থান থেকে সহজে যাওয়া যায়। সাধারণত প্রেমিক-প্রেমিকারা এ স্থানটি বিশেষ পছন্দ করেন।
এখান থেকে ভিক্টোরিয়া পোতাশ্রয়, কাউলুন উপদ্বীপ ও হংকং শহর দেখা যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যায় যখন পুরো হংকং আলোকিত হয়ে ওঠে, তখন এই স্থান থেকে সেই দৃশ্য অপূর্ব লাগে! এখানে বিশেষ ট্রামে করে ঘুরে ঘুরে শহরের চারপাশ দেখা যায়। বড়দের জন্য টিকিটের মূল্য ৫৩ হংকং ডলার এবং শিশু ও প্রবীণদের জন্য যথাক্রমে ২৪ ও ৩১ হংকং ডলার।
বিশ্বের বিভিন্ন তারকার মোমের তৈরি মূর্তি সংরক্ষিত আছে এই জাদুঘরে। মূর্তিগুলো দেখলে আপনি অবাক হবেন। মনে হবে, সত্যি মানুষই দাঁড়িয়ে আছে। এখানে চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও, বাস্কেটবল তারকা ইয়াও মিং ও হংকং তারকা অ্যান্ডি লাউ’সহ অনেক বিখ্যাত মানুষের মোমের মূর্তি আছে। এখানে প্রবেশমূল্য বয়স্কদের জন্য ২২৫ হংকং ডলার এবং প্রবীণ ও শিশুদের জন্য ১৫৫ হংকং ডলার।
তারকা এভিনিউ বা এভিনিউ অব স্টারস্
হংকংয়ের তারকা এভিনিউ-এ ৭৩টি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ফলক স্থাপন করা হয়েছে। তারকা এভিনিউয়ে হাঁটার সময় আপনি হংকংয়ের বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া পোতাশ্রয়ের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া হংকং দ্বীপের তীরে বিশিষ্ট স্থাপত্য নিদর্শন আছে, আছে মাল্টিমিডিয়া সংগীত লাইট সিম্ফনি উপভোগের সুযোগ। আপনারা এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইবেন না।
ভিক্টোরিয়া পোতাশ্রয়
হংকংয়ের বৃহত্তম পার্ক। প্রতি বছরের বসন্ত উত্সব চলাকালে চীনা ফুলের বৃহত্তম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় এখানে। হংকংয়ের বিখ্যাত কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টার এখানে অবস্থিত।
হংকং ডিজনিল্যান্ড
এখানে চীনা কার্টুন চরিত্র এবং পশ্চিমা কার্টুন চরিত্রের সমাহার দেখা যায়। এ ছাড়া, ডিজনিল্যান্ডে রয়েছে হংকং ডিজনিল্যান্ড হোটেল ও ডিজনির হলিউড হোটেল। এখানে রূপকথার বিশ্ব ও চলচ্চিত্র বিশ্বের বিস্ময়কর আনন্দ উপভোগ করা যায়। বিভিন্ন ধরনের ডিজনি চরিত্র যে কোনো সময় পর্যটকদের সামনে এসে তাদের চমকে দেয়। বিস্ময় সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এখানে দু’রকম টিকিট আছে। এক দিনের এবং দু’দিনের। এক দিনের টিকিট ৪৫০ হংকং ডলার। ৩-১১ বছরের শিশুর জন্য ৩২০ হংকং ডলার এবং ৬৫ বা তারচেয়ে বেশি বয়সীদের ১শ’ হংকং ডলার। দু’দিনের টিকিট: সাধারণ মানুষ ৫৮৫ হংকং ডলার, শিশু ৪১৫ এবং প্রবীণ ১৭০ হংকং ডলার।
হংকং বিজ্ঞান জাদুঘর
হংকং বিজ্ঞান জাদুঘর পর্যটকদের জন্য আরেকটি আকর্ষণ। এখানে কম্পিউটার, যন্ত্রমানব, জ্বালানিসম্পদ, টেলিযোগাযোগ ও পরিবহন ইত্যাদি খাতের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত প্রদর্শিত হচ্ছে। জাদুঘরে সাধারণ টিকিট ২৫ হংকং ডলার। তবে গ্রুপে যদি ২০জন বা তার বেশি মানুষ থাকে তবে, জনপ্রতি ১৭.৫ হংকং ডলার। ছাত্র, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণদের জন্য ১২.৫ হংকং ডলার।
ছিং মা সেতু
হংকংয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শহরের মূল রাজপথকে সংযুক্ত করা বিশ্ব পর্যায়ের স্থাপত্য এই সেতু। এটি হংকংয়ের প্রতীক। সেতুর দৈর্ঘ্য ২.২ কিলোমিটার। সমুদ্র থেকে ৬০ মিটার উঁচুতে সেতুর অবস্থান। সেতুতে ব্যবহৃত ঝুলন্ত ইস্পাতের রশির মোট দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার। বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ঝুলন্ত সেতু এটি।
হংকং কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টার
১৯৯৭ সালে হংকং পুনরায় চীনের অধীনে আসে। এ উপলক্ষ্যে এই সেন্টারে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এখান থেকে পুরো হংকং দ্বীপ ও কাউলুন উপদ্বীপের রাতের দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
সিম শা সুই
হংকংয়ের কাউলুন অঞ্চলে অবস্থিত এ অঞ্চল। পর্যটনশিল্প ও ব্যবসার জন্য সবচেয়ে উন্নত জায়গা। জমকালো শপিংমলের পাশাপাশি বৈশিষ্ট্যময় ছোট দোকানও তরুণ-তরুণীদের কাছে খুবই প্রিয়। সিম শা সুইর রেস্তোরাঁ ও বারও বেশ জনপ্রিয় এখানে।
কজওয়ে বে
হংকংয়ের সবচেয়ে প্রধান ব্যবসা-বাণিজ্যের অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। হংকং দ্বীপের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত কজওয়ে বে। অনেকগুলো বড় শপিংমল আছে এখানে। সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। এখানে জাপানি বিনিয়োগে গড়ে ওঠা অনেক ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে।
ব্যাংক অব চায়না টাওয়ার
হংকংয়ের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপত্য। দেখতে বাঁশের মতো।
হংকংয়ের বেশিরভাগ মানুষ মূলত কুয়াংতুংয়ের। তাই এখানে ক্যানটোনিজ রন্ধনপ্রণালী জনপ্রিয়। এখানকার খাবার হালকা ও টাটকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তেওছু রন্ধনপ্রণালী হংকংয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অবশ্য বিদেশি খাবারও কম জনপ্রিয় নয়!
হংকংয়ে রাতে ভ্রমণ
হংকংয়ে রাতে ভ্রমণ করা বেশ মজার। এখানকার বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র সাধারণত রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাপ্তাহিক ছুটি বা অন্যান্য ছুটির দিনে উপচে-পড়া ভিড় দেখা যায়। ছুটির দিনে এসব স্থানে খরচও কিছুটা বেশি হয়। এখানকার অধিকাংশ বার দুপুর থেকে রাত ১টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
হংকং সত্যিই ‘কেনাকাটার স্বর্গ’। সবচেয়ে কম খরচের বিখ্যাত ব্র্যান্ডের ফ্যাশনেবল পোশাক, ঘড়ি ইত্যাদি এখানে পাওয়া যায়। চীনের মূল-ভূভাগের চেয়ে এখানে জিনিসপত্রের দাম কম। হংকংয়ে অনেক বিখ্যাত স্ট্রিট বা সড়ক আছে। যেখানে আপনি সস্তায় ভালো জিনিস পাবেন। এখানে আছে গোল্ড স্ট্রিট, এভি স্ট্রিট, ওল্ড স্ট্রিট ইত্যাদি।