1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন

জাপানের এক অদ্ভুত গ্রাম

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪

গ্রামের কথা বললেই সবার মনে ভেসে ওঠে সারি সারি ফসলের ক্ষেত, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী, ছোট হাট-বাজার, বাচ্চারা বই হাতে করে স্কুলে যাচ্ছে, গ্রামের বয়স্করা চায়ের দোকানে বসে গল্প করছে। কি তাই তো?

যদি আপনারা গ্রাম বলতে তাই বুঝে থাকেন, তাহলে আজ আপনাদের বলবো এক ভিন্ন গ্রামের কথা। অদ্ভুত এক গ্রাম। নিঝুম পরিবেশ, নেই কোনও গাড়ি ঘোড়ার কোলাহল। চাষবাসের জমি, দোকানপাট যদিও রয়েছে। কিন্তু এই গ্রামে মানুষের সংখ্যাই বড় কম। আবার দূর থেকে দেখলে এই গ্রামে যাদেরকে মানুষ বলেই মনে হয়, তারা আসলে মানুষ নন, তারা হল কাকতাড়ুয়া। অদ্ভুত না?

জাপানে অবস্থিত এই গ্রামটির নামও বড়ই অবাক করার মত। জাপানের ইয়া উপত্যকার এই গ্রামের নাম দেয়া হয়েছে স্কেয়ারক্রো গ্রাম। শোনা যায় এই গ্রামে বহু সংখ্যক কাকতাড়ুয়া থাকায় এমন নামকরণ। যদিও স্থানীয়দের কাছে এই গ্রামটি কাকাশি নো সাতো নামেই পরিচিত।

অবাক করার মত নানা ঘটনায় দেখা যায় এই গ্রামে। দূর থেকে কাকতাড়ুয়াগুলোকে দেখলে একদম জীবন্ত বলে মনে হয়। কাকতাড়ুয়াগুলিকে এমন ভাবেই রাখা আছে যেন তারা কোন একটি নির্দিষ্ট কাজ করছে। কোথাও দেখা যায় কাকতাড়ুয়ার দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ টেলিফোনের লাইন ঠিক করছে, কেউ আবার বাসের জন্য অপেক্ষা করছে।

কাকতাড়ুয়াদের জন্য নানা ব্যবস্থা করা হয়েছে জাপানের এই গ্রামে। এখানে থাকা দুশোটিরও বেশি কাকতাড়ুয়ার নাম, লিঙ্গ, বয়স সকল কিছুই রেজিস্ট্রি করে রাখা আছে। গ্রামে তাদের তিন বছরের বাস পার হয়ে গেলেই সরিয়ে দেয়া হয়। তারপর ওই কাকতাড়ুয়ার বদলে নিয়ে আসা হয় অন্য এক কাকতাড়ুয়াকে।

যদিও শোনা যায়, জাপানে এমন ভুতুড়ে গ্রাম তৈরির নেপথ্যে রয়েছেন একজন মহিলা। তাঁর নাম সুকিমি আয়ানো। তিনি ওই গ্রামে কাকতাড়ুয়াদের মা বলেই পরিচিত। জাপানের এই গ্রাম নিয়ে অনেক তথ্য অনুসন্ধানের পর সুকিমির এক সাক্ষাৎকার ওই কাকতাড়ুয়াদের ব্যাপারে আসল তথ্য জানা যায়।

সিএনএন ট্রাভেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুকিমি জানিয়েছিলেন, ওই গ্রামে তার জন্ম হলেও পড়াশোনার জন্য গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি। তিনি যখন গ্রাম ছেড়েছিলেন তখন ওই গ্রামে মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে তিনি যখন ফিরে এলেন তখন দেখলেন গ্রামে মাত্র ২৭ জন মানুষ রয়েছে। এই ২৭ জনের মধ্যে যিনি কনিষ্ঠতম তার বয়স ৫০ বছর।

আর সেকারণেই গ্রাম যাতে মানুষহীন মনে না হয় তাই নিজে হাতে বানাতে শুরু করেন কাকতাড়ুয়া। সবার প্রথমে সুকিমি তার বাবার আদলে একটি কাকতাড়ুয়া বানিয়ে নিজের বাড়ির সামনে রেখেছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, যখনই কেউ তার বাড়ির সামনে দিয়ে যায়, ওই কাকতাড়ুয়ার দিকে হাত নাড়িয়ে দিয়ে যায়। এরপরই তার মাথায় আসে, গ্রাম যাতে ফাঁকা ফাঁকা না লাগে তাই তিনি বিভিন্ন আকৃতির কাকতাড়ুয়া বানাবেন আর তা ছড়িয়ে দেবেন সারা গ্রামে।

এরপর ঠিক যেমন ভাবা তেমন কাজ। ২০১৩ সালের মধ্যে ৩৫০টি কাকতাড়ুয়া বানিয়ে ফেলেছিলেন সুকিমি। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম রোববার নাগোরো এলিমেন্টারি স্কুলের কাছে স্কেয়ারক্রো উৎসব হয়। প্রতি মাসের চতুর্থ বুধবার সুকিমি ওয়ার্কশপের আয়োজনও করে থাকেন। আর একারণেই তাঁকে কাকতাড়ুয়াদের মা বলে মানা হয়। বর্তমানে সুকিমি অন্যান্য গ্রামবাসীদের কাকতাড়ুয়া বানানোও সেখান। সারা গ্রাম জুড়ে কাকতাড়ুয়াদের দেখে যেন মনে হয় গ্রামবাসীরাই ছুটে বেড়াচ্ছে এদিক-ওদিক।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com