1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন

ঘুরে আসুন কাশ্মীর

  • আপডেট সময় সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

এই চমৎকার সুন্দর পৃথিবীর প্রতিটি সৌন্দর্য উপভোগ করার সৌভাগ্য না হলেও কাশ্মীর কি আমাদের সেই আক্ষেপের কিছুটা অংশ ঘোচাবে না? তবে সেই সাথে কর্মজীবীদের জন্য নিত্য কর্মব্যস্ত দিনের ফাঁকে এসব সৌন্দর্যের দিকে ছুটে যাওয়াও একদম সহজ ব্যাপার নয়! অফিসের কাজ, সঙ্গীদের সাথে সময় মেলানো আবার ঠিকঠাক প্ল্যান তৈরি করা- সব মিলিয়ে যাওয়া হয়ে ওঠে না আসলে! তবে সত্যিই যদি যাবার ইচ্ছে থাকে আমাদের প্ল্যানের সাথে কিছুটা মিলিয়ে নিতে পারেন।

অফিস থেকে ছুটি নিয়ে দিনের শেষ ফ্লাইটটাই ধরে ফেলুন না!

ঢাকা থেকে শ্রীনগরের ফ্লায়িং টাইম মোটামুটি ৫ ঘন্টার মতো। শ্রীনগরে শেখ-উল-আলম এয়ারপোর্টে পৌছাবার পর লোকাল ক্যাবে চড়ে চলে যেতে পারেন দাল লেক। বলে রাখি, দাল লেককে বলা হয় কাশ্মীরের প্রাণ। ঝিলম নদী থেকে জন্ম নেওয়া এই লেক অসংখ্য মানুষের প্রতিদিনকার রুটিরুজির উৎস। এয়ারপোর্ট থেকে শহর ছাড়িয়ে বেশ দূরে এই লেকের অবস্থান। ক্যাব থেকে নেমে দেখতে পাবেন অনিন্দ্যসুন্দর পর্বতমালা ঘিরে রেখেছে প্রেমিকার চোখের মতো শান্ত দাল লেককে। ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই হ্রদের তীরঘেষে গড়ে উঠেছে ছোট বড় প্রচুর হাউজবোট। দেখতে ছোটখাটো লঞ্চের মতো কিন্তু পুরোটাই দামী কাঠের তৈরি এবং প্রচুর নকশাদার।

অনেকে দাল লেকের কাছাকাছি হোটেলে উঠেন। তবে আপনি শ্রীনগরের সত্যিকারের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে গেলে এবং দাল লেকের রাজকীয় স্বাদটা পেতে গেলে আপনাকে হাউজবোটে থাকতেই হবে। হাউজবোট যেকোন হোটেলের চেয়ে সস্তা, অবশ্যই সেইফ এবং এর আলাদা একটা শিলপমূল্য আছে। বারান্দা, ড্রয়িংরুম, ডাইনিংরুম, বেডরুম সবই আছে এসব হাউজবোটে। মেঝেতে বিছানো কাশ্মীরি গালিচা, সিলিংয়ে ঝাড়বাতি আর জানালায় ঝুলে থাকা পশমিনা শালের পর্দা আপনাকে জানান দেবে উষ্ণ আতিথেয়তার। আর বোটহাউসের বারান্দায় বসে যদি আকাশে মিলে যায় পূর্ণিমার চাঁদ, তাহলে তো কথাই নেই।

প্রথম দিনটা লেকের আশেপাশে ঘুরুন। দুপুরে চলে যান খৈয়াম চকে। খৈয়াম চক হলো কাবাবের স্বর্গ। এমন কোন ধরনের কাবাব নেই যা এখানে পাবেন না।শ্রীনগরে সন্ধ্যা পার করবার ভালো উপায় হতে পারে শিকারা রাইড। শিকারা হলো এক ধরণের ডিঙি নৌকা যাতে চড়ে চক্কর দিতে পারেন দাল লেকের অলিগলি, দেখে নিতে পারেন নেহরু পার্ক, ভাসমান পোস্ট অফিস, চাঁদনি চক আর বাজার, যেখানে রকমারি পসরা সাজিয়ে বসেছে স্থানীয় অধিবাসীরা। ইচ্ছেমতো ঘোরাফেরা করে রাতটা হাউজবোটে পার করুন। এ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা!

দাল লেকের ওপর অলস সারসের দলের উড়াউড়ি আর ওপারের পর্বতচূড়ার ওপর আলোর খেলা দেখতে হলে পরের দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠুন। হাউজবোটের বারান্দায় এক কাপ কাশ্মীরি চায়ের সাথে এমন অভিজ্ঞতা আপনার মনে গেঁথে থাকবে বহুদিন!

সকাল সকাল তৈরি হয়ে রওনা হয়ে পড়ুন গুলমার্গ। শ্রীনগর থেকে ট্যাক্সি ক্যাব বা বাসে ২ ঘন্টার যাত্রায় দেখতে পাবেন অসংখ্য পাইন ও মেপল গাছের সারি। আসেপাশে ফুটে থাকা রঙ্গিন ফুল আপনার মন ভরাতে বাধ্য। বরফাচ্ছাদিত শুভ্র গুমলার্গে পৌছে কেবল কারে চড়ে দেখে নিতে পারেন পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীর সীমান্ত। ঘোড়ায় চড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন চেরি অরচার্ড, পাইন ফরেস্ট কিংবা বিভিন্ন বিখ্যাত সিনেমার শুটিং স্পট। এ ছাড়া এখানে রয়েছে স্লেজিং, স্কিয়িং, হাইকিং এর মতো আরও অনেক রকম বিনোদনের ব্যবস্থা।

তৃতীয় দিন শ্রীনগরেরই বিভিন্ন স্পট ঘোরার জন্য বরাদ্দ করে রাখুন। সকাল সকাল বেরিয়ে ঘুরে আসুন ইন্দিরা গান্ধী টিউলিপ গার্ডেন, চশমা শাহি, নিশাত গার্ডেন আর শালিমারবাগের মতো বড় বাগান, যেখানে শানবাঁধানো পাহাড়ি ঝরনা থেকে পড়ছে অবিরাম জলধারা আর বাগান রাঙিয়ে আছে হাজারো ফুলের গাছ। এখানে আরও আছে পরিমহল, মানসবাল লেক, নাগিন লেক, ঐতিহাসিক চারার-ই-শরিফ ও হজরতবাল মসজিদ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঝিলম নদী এবং শ্রী প্রতাপ সিং মিউজিয়াম। সারাদিন শ্রীনগরে ক্লান্তিহীন ঘোরাফেরা কখনোই আপনার একঘেয়ে লাগবে না। সন্ধ্যায় কেনাকাটা করুন। বিখ্যাত কাশ্মীরি শাল, বাদাম, জাফরান- সবই পাবেন এসব স্পটগুলোতে ঘোরাফেরার মধ্যেই।

শ্রীনগর থেকে পরের দিন ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে চলে যান পাহালগাম। একদিন না থাকলে পাহালগামের সত্যিকারের সৌন্দর্য্যটা উপভোগ করতে পারবেন না। শ্রীনগর থেকে ১০০ কিলোমিটার রাস্তা, পুরোটাই যেন উত্তেজনায় ভরপুর। রিজার্ভ গাড়ী নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বেতাব ভ্যালী, চন্দনবাড়ী, আরু ভ্যালী সহ আরো অনেক স্পট। পাহালগাম হলো আমাদের এশিয়ার মিনি সুইজারল্যান্ড। রাতে ক্যাম্পিং করে খোলা আকাশের নীচে থাকার মতো এরকম স্বর্গীয় অনুভূতি জীবনে খুব কমই আসবে, কথা দিচ্ছি!!!

পঞ্চম দিন শ্রীনগরে ফিরে আসুন। চলে যেতে পারেন সোনমার্গ। গুলমার্গের মতোই ফ্লেভার পাবেন এখানে কিন্তু প্রকৃতি কখনোই তার সৌন্দর্য্য দিয়ে মানুষকে নিরাশ করে না। সোনমার্গের বিখ্যাত উপত্যকা ঘেষে চলতে থাকলে দেখা পাবেন ঝর্ণার। ছবির মতো সুন্দর অথচ ছোট এই এলাকাটি ঘুরে দেখতে বিকেল চলে যাবে। শ্রীনগর ফিরে আসুন।

সময় শেষ হতে চলেছে।

ঘুরে বেড়ান।

নতুন মানুষ আবিষ্কার করুন।

নতুন জায়গা আবিষ্কার করুন।

হারিয়ে যান।

জীবনের এতোসব চমৎকার আয়োজনের মাঝে এভাবে হুটহাট হারিয়ে যেতে না পারলে বেঁচে থাকাটা যে বড্ড একঘেয়ে হয়ে যাবে!

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com