1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৭ অপরাহ্ন

প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪
প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি বাংলাদেশ। এখানে প্রতিনিয়ত প্রকৃতিতে চলে রঙ বদলের খেলা। ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে প্রতিটি ঋতুরই আছে আলাদা রূপ, রস, রঙ, গন্ধ এবং বৈচিত্র্য। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায় প্রকৃতির রঙ। রাস্তার দু’ধারে গাছের সারি। তার দু’পাশে অবারিত ফসলের মাঠ। কোনো ঋতুতে মাঠ থাকে সবুজ ফসলে ছেয়ে। ফসল পাকলে তা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। গ্রাম-বাংলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন:‘আমি বাংলার মুখ দেখিয়াছি,  তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’।
নদীমাতৃক এ দেশে বর্ষায় নৌকা করে মাঝিরা এক গাঁ থেকে অন্য গাঁয়ে যাত্রাপথে পল্ল­ীগীতি, ভাটিয়ালি, বাউল গান গাইত। বর্ষার পানি কমে গেলে মাছ ধরার হিড়িক পড়া ছিল একটা নিত্য-নৈমিত্তিক দৃশ্য। ঝাঁকে ঝাঁকে পুঁটি, কই, বোয়াল, শোল, খলসে, ভেটকি ইত্যাদি মাছে ভরে যেত! বৃষ্টির দিনে আম আঁটির ভেঁপু বাজানো, লুডু, তাস, যদু-মধু, গানের কলি, পাঁচগুটি আরো কত শত খেলার আসর বসে ঘরের মেঝেতে। আবার কেউ কেউ কাঁথা মুড়ি দিয়ে টিনের চালের শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে। অন্যদিকে বুড়ো-বুড়িরা নাতি-পুতিদের নিয়ে পুরনোদিনের গল্পের আসর জমায়। এই টিপটিপ বৃষ্টি একসময় রূপ নেয় বর্ষায়। কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দেয়। দখিনা বাতাসে কদমগাছের সবুজ কচি পাতার আড়ালে ফুটে থাকা হাজারো কদমফুলের সুগন্ধ প্রাণটা জুড়িয়ে দেয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কদমফুল ছিঁড়ে খেলা করে। এ ফুলের পরাগ খুলে আঁকে প্রিয়জনের নাম। অথচ এখন সবই স্বপ্নের মত।
পাল্কিতে চড়ে এখন আর বউ শ্বশুরবাড়ি যায় না। কারণ গ্রামের মানুষের গায়ে লেগেছে আমাদের যান্ত্রিক জীবনের ছোঁয়া। রাস্তার পাশে নাই সারি সারি গাছ। গড়ে উঠেছে সারি সারি বাড়ি। আবাদি জমিগুলোও ঢেকে যাচ্ছে নতুন নতুন বাড়িতে। সবাই ব্যস্ত নগর পরিকল্পনা নিয়ে! কিন্তু যেভাবে দ্রুত আবাদি জমি কমে যাচ্ছে একের পর এক বাড়ি তুলে সেদিকে কারো কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।
আজ থেকে ১০ বছর আগেও গ্রামগঞ্জে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। কিচিরমিচির শব্দ আর এদের শৈল্পিক বাসা মানুষকে পুলকিত করত। অপূর্ব শিল্প শৈলীতে প্রকৃতির অপার বিস্ময় এদের সেই ঝুলন্ত বাসাবাড়ির তালগাছসহ নদীর পাড়ে, পুকুর পাড়ে, বিলের ধারে এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। আগের মতো বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রাম-বাংলার জনপদ।
গ্রাম-বাংলার চির ঐতিহ্য নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা শান্তির নীড় মাটির তৈরি বাড়ি-ঘর এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। যা একসময় ছিল গ্রামের মানুষের কাছে গরিবের এসি বাড়ি নামে পরিচিত। কিন্তু কালের আবর্তে আজ হারিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘরবাড়ি। গ্রাম-বাংলার শীতের সকাল খুব মিষ্টি প্রকৃতির হয়। আর সেই সকাল আরও মিষ্টি হয় খেজুরের তাজা রসে। শীতের সকালে টাটকা খেজুরের রস সকলের কাছেই লোভনীয়। ভোর হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই খেজুরের রসে মনে এবং শরীরে উষ্ণতা অনুভূত হতো। বর্তমানে খেজুরের রস এবং শীতের সকালের সুন্দর অনুভূতি দুটোই ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে।
কবিগুরু বলেছেন, ‘বাঁচতে হলে লাঙল ধরো আবার এসে গাঁয়।’ সকালে কৃষক পান্তা খেয়ে বলদ নিয়ে লাঙল কাঁধে ফসলের মাঠে যায়। সে দৃশ্য অনেক কবি-সাহিত্যিকের মন কেড়ে নেয়। বাতাসে যখন ফসল দোল খায় সে দৃশ্যে যে কারো মন আনন্দে দুলতে থাকে। কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠোর পরিশ্রমে ফসল ফলায়। আর সেই ফসলের দ্বারা আমাদের জীবন বাঁচে। কৃষক হচ্ছে সবচেয়ে বড় সাধক। সবচেয়ে খাঁটি বড় নেতা। আধুনিক নগর সভ্যতার যুগে গ্রাম আজ বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। তার স্থান দখল করছে ইট, কাঠ আর পাথরের বড় বড় অট্টালিকা।
মাঝে মাঝে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে ছবির মত বাংলার গ্রামে। কিন্তু গ্রামগুলোর সেই সৌন্দর্য বিলুপ্তপ্রায়।  জাতির প্রত্যাশা প্রকৃতির চিরচেনা সুন্দর এবং সচ্ছল রূপ বৈচিত্র্য অটুট থাকুক। আবহমান গ্রাম-বাংলার রূপ বৈচিত্র্য জাতি একইভাবে উপভোগ করতে চায়। চিরসবুজ অপার সৌন্দর্যের বিলুপ্তি কখনই জাতির কাছে কাম্য নয়। আসুন আমরা আমাদের দেশকে, গ্রামকে রক্ষায় সোচ্চার হয়ে জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা গড়ে তুলি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com