1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্য থেকে টরন্টো

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ জুন, ২০২৪

আমাদের বাচ্চারাও বড় হচ্ছে , নিজেদের কাজ নিজেরা একটু এক্টু করে শিখে নিচ্ছে । এবেলা সেবেলা, এভাবে সেভাবে দেখতে দেখতে জীবন কেটে যেতে লাগলো ।ক্যানাডাতে আসার পরে বিশেষ করে বাড়ী কেনার পর আমার আমেরিকা থাকা ভাই বোনেরা এসে বেড়িয়ে গেলো । আমরাও বেড়াতে গেলাম ওদের ওখানে । দেশ থেকে অনেক দূরে চলে আসলেও মনে হোল যে আমরা ভাই বোনেরা অনেক কাছাকাছি আছি । এভাবেই আমাদের ভাই বোনদের কাজিনদের আসা যাওয়া চলমান থাকলো । দেখতে দেখতে এ বাড়ীতে চার বছর কেটে গেলো । আমাদের দেশের মতো এখানে কেউ নিজের তৈরি করা বা কেনা এক বাড়ীতে জীবন কাটিয়ে দেয় না। নানা কারনে মানুষ বাড়ী বদলায়। কেউবা অন্য এলাকাতে যেতে চায়, কেউ বাচ্চাদের অন্য স্কুলে পাঠাতে চায়। কেউ ছোট বাড়ী থেকে বড় বাড়ীতে যায় আবার কেউ বড় বাড়ী থেকে ছোট বাড়ীতে যায় নানা কারনে। খুব কম মানুষই আছে এখানে যারা কিনা এক বাড়ীতেই জীবন কাটিয়ে দিয়েছে। যারা এখানকার আদি বাসিন্দা তাদের মাঝে মাঝে দেখা যায় , বাড়ী বদলানোর ঝামেলা না করে পুরানো বাড়ীটা ঠিক ঠাক করে বছরের পর বছর সেখানেই থেকে যায় ।

আর আমরা? এখান থেকে সেখানে ছুটা ছুটি করাটা অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। আমাদের এই বাড়ীর দুই তিন রাস্তা পরেই একটা বাড়ীতে সেল লাগানো হয়েছে দেখলাম। একদিন এমনিতেই বাড়ীটা দেখতে গেলাম। সেদিন ওই বাড়ীতে ওপেন হাউস ছিলো । মানে ইচ্ছে করলে সবাই বাড়ী দেখতে পারে। সেদিন সাধারনত বাড়ীর মালিক বাড়ীতে থাকে না শুধু যে এজেন্টের মাধ্যমে বাড়ী বিক্রি হবে সে থাকে। সে এজেন্ট ঘুরে ঘুরে বাড়ী দেখায়। সেদিন আমরাও গেলাম বাড়ী দেখতে। বাড়ী দেখে আমরা মুগ্ধ। পেছনে বিশাল জায়গা। সেখানে ফল ও ফুলের বাগান। আপেল, চেরি। পিয়ার, পীচ নানা রকমের ফল গাছ। সে সময়টা ছিলো এখানকার গ্রীষ্ম কাল। ফল ধরা ও ফুল ফুটার সময়। কাজেই বাড়ীর মালিকের বাগানে নানা রকম ফুল ফুটে আছে আর ফল গাছগুলোতে অসংখ্য ফল ঝুলে আছে। এতো সুন্দর বাড়ীটা কেনো বিক্রি করতে চাচ্ছে বাড়ীর মালিক বুঝতে পারলাম না। ঐ যে বললাম নানা কারনে এখানে মানুষ বাড়ী বদলায়।

বাড়ীতে ফিরে আমরা স্বামী স্ত্রী ভাবতে বসলাম , বাড়ীটা কিনলে কেমন হয়? কিন্তু কিনতে হলে আমাদের নিজেদের এজেন্ট প্রয়োজন। সেটা কোন সমস্যা না। আমরা এই বাড়ী যার মাধ্যমে কিনেছি তাকেই আবার নিয়োগ করবো ।

এজেন্টরাতো বাড়ী কেনা বেচার জন্য তীর্থের কাকের মতো বসেই থাকে। এটাই তাদের ব্যবসা । বড় সমস্যা হোলো আরেকটা বাড়ী বিক্রি করতে হলে আমাদের এই বাড়ী বিক্রি করতে হবে। কিন্তু আমরা খুবই উৎসাহী ঐ বাড়ীটা কেনার জন্য । আমরা আমাদের এজেন্ট কে দিয়ে বাড়ী কেনার প্রস্তাব কাগজ পাঠালাম। বাড়ীর মালিক যে দাম চেয়েছিলো তার চাইতে কিছুটা কম দামে আমরা অফার পাঠালাম। বাড়ীর মালিক রাজী হোলো না। আমরা আবার কিছুটা দাম বাড়িয়ে আবার অফার দিলাম । এভাবে আমাদের এজেণ্ট একদিনেই কয়েকবার ছুটাছুটি করলেন এবাড়ী সেবাড়ী । এভাবে দুই পক্ষ একটা নির্দিষ্ট দামে রাজী হলাম । নিয়ম মাফিক কাগজ পত্রে স্বাক্ষর করা হোলো। আবারো তিন মাস সময় নিলো বাড়ীর মালিক বাড়ী ছাড়ার জন্য । আমরা কোন আপত্তি করলাম না। আমাদেরও বাড়ী বিক্রি করতে হবে । আইন গতো ভাবে সকল সর্ত পূরণ হবার পর আমাদের প্রস্তুতি শুরু হোলো বাসা বিক্রি করার ।

বাড়ী কেনা যেমন সহজ না , বিক্রি করাটাও তেমন সহজ না । ক্রেতাদের যেনো বাড়ী পছন্দ হয় সে ভাবে সবসময় বাড়ী সাজিয়ে গুছিয়ে পরিস্কার পরিছন্ন করে রাখতে হয়। সবকিছু ঠিক করে আমরা বাড়ীতে সেল সাইন লাগালাম। দুপুরে একটা পরিবার বাসা দেখে গেলো ।আমাদের কপালটা এতোটাই ভালো ছিলো যে সকালে এজেন্ট সেল সাইন লাগিয়ে গেলো আর রাতেই সে আবার আসলো যারা বাসা দেখে গিয়েছিলো তাদের বাড়ী কেনার অফার নিয়ে। সব কিছু মিলে যাওয়াতে সে রাতেই আমাদের বাড়ী বিক্রি হয়ে গেলো । যাক বাঁচা গেলো আমার সকাল বিকেল বাড়ী সাজাতে হোল না। শুরু হোল আবার নতুন বাড়ীর জন্য গুছানোর পালা। তিনমাস পরে উঠে এলাম আমাদের অতি পছন্দের বাড়ীতে । এ বাড়ীতে এসে ছেলেমেয়েদের কোন অসুবিধা হোল না কারন আমরা একই এলাকাতে আছি, তাই ওদের স্কুলও একই থাকলো । এখানে এসে আগের বন্ধুদের সাথে আরো নতুন বন্ধু পেলো ।

ম্যাল্টন, কানাডা

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com