আবার এই লেকের মধ্যেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরি পোশাক ও শালের দোকান। আর একটু এগুতেই পৌঁছে গেলাম নেহরু পার্ক। যদিও ঐ পার্ক ঘোরবার জন্যে সিকারাওলা সময় দিয়েছিল তাও আমরা যাইনি কেননা আমার মন পড়েছিল ডাল লেকে বিক্রি হওয়া ট্রাউট মাছের দিকে। প্লেট প্রতি ২৫০ টাকা নিলেও সে মাছের স্বাদ এত ভালো লেগেছিল যে আমি একাই আড়াই প্লেট সাটিয়ে দিয়েছিলাম।সিকারা থেকেই দেখলাম অন্য সিকারায় করে কাশ্মীরি কেশর, ফুলের তোড়া বিক্রি হওয়া, এছাড়াও ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরি পোশাক পরে ছবি তোলার হিড়িকও রয়েছে। সিকারা ভ্রমণ সেরে চললাম শ্রীনগরের লাল চৌক মার্কেট ঘুরতে। সঠিক জায়গা জানা না থাকায় দু তিনবার ভুলভাল রাস্তায় চলে গিয়ে যখন মার্কেট পৌঁছলাম, বেশ দেরি হয়ে গেছিল ফলে সেদিন আর মার্কেট ভালোভাবে ঘোরা হলো না।
এরপর একে একে হজরতবল, পরিমহল,মুঘল গার্ডেন, শালিমার বাগ, চাসমে শাহী দেখে চললাম শঙ্করাচারিয়া মন্দির দেখতে। কিছুটা রাস্তা অটো করে যাবার পর প্রায় ২৬০-২৭০ খানা সিঁড়ি ভেঙে পৌঁছে গেলাম একদম মন্দিরে। একদম ওপরে পৌঁছে যখন চারপাশের দৃশ্য দেখলাম, অতগুলো সিঁড়ি ভাঙার ক্লান্তি আপনিই দূর হয়ে গেল। এই মন্দির থেকে পুরো শ্রীনগর শহর দেখতে পাওয়া যায় যা এক কথায় অনবদ্য। এখানে ফটো তোলা বারণ ফলে সেই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করা সম্ভব হলো না। এরপরে নীচে নেমে এক ভান্ডারায় দুপুরের খাবার খেয়ে সোজা চলে গেলাম আমাদের হাউসবোটে।সারাদিন ঘুরে ভীষণ ক্লান্ত লাগায় ভালো করে একটা ভাত ঘুম দিয়ে নিলাম। বস্তুত বলে রাখি শ্রীনগরের সমস্ত সাইট সিন আমরা একটা অটোতে করেছিলাম, যার জন্যে মাত্র ৬০০ টাকা খরচা হয়েছিল। যখন ঘুম ভাঙল দেখি বিকাল ছটা।
কাশ্মীরে এসে কাশ্মীরি বিরিয়ানি খাব না, সেটা আবার হয় নাকি চললাম আবার লাল চৌক। আগেরদিনের মতো যাতে ভুল না হয় তাই আগেই শর্ট-কাট রাস্তা জেনে নিলাম হাউসবোটের মালিকের থেকে। লাল চৌকে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর সোজা চলে গেলাম মোঘল দরবার। একদম পেট পুরে কাশ্মীরি বিরিয়ানি আর নান খেয়ে রুমে ফিরে সোজা ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই খাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়লাম, গন্তব্য দিল্লী। যদিও শ্রীনগর থেকে জম্মুর বাস বা শেয়ার গাড়ি খুব সহজেই পাওয়া যায় কিন্তু আমার পরিকল্পনা ছিল অন্যরকম আর তার জন্যেই ভোরবেলা বেরিয়ে পড়া, যাতে পরিকল্পনা যদি ব্যর্থও হয় তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার সময় যাতে হাতে থাকে। যখন জম্মু থেকে পাহেলগাঁও যাচ্ছিলাম তখন বানিহাল থেকে শ্রীনগর অবধি রেলপথের কথা শুনেছিলাম, তাই লাদাখ আসার আগেই ঐ ট্রেন লাইন সম্পর্কে একটু খোঁজ খবর নিয়েছিলাম কিন্তু বিস্তারিত খবর কিছুই পাইনি। শ্রীনগর বাস স্ট্যান্ড থেকে একটা অটো ভাড়া করে সোজা চলে গেলাম শ্রীনগর স্টেশনে, এই স্টেশনটি আবার, একদম সেই অমরনাথ যাত্রার পারমিশন অফিসের পাশেই অবস্হিত।
এমনকি ট্রেনের সিট গুলো চেয়ার কার ট্রেনের অগত্যা একটা ম্যাক্সি বাস ধরে মাথা প্রতি ৩০০ টাকায় ছয় থেকে সাড়ে ছয় ঘন্টায় জম্মু পৌঁছালাম। জম্মু থেকে একদম রাতের ভলভো নেয়া হলো দিল্লীর জন্যে ভাড়া পড়লো ৯০০ মতো। পরেরদিন দুপুর একটা নাগাদ সেই বাস পৌঁছে দিল কাশ্মীরি গেট। কাশ্মীরি গেট পৌঁছেই মনটা উদাস হয়ে গেল, ভাবতেই অবাক লাগছিলো ঠিক ১২ দিন আগেই এখন থেকে শুরু করেছিলাম বাসে করে লেহ জন্যে যাত্রা আর ঠিক এখানেই শেষ হলো আমাদের লাদাখের রোড জার্নি।
সেদিন এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে দিল্লীর আর কোথাও বিশেষ ঘোরা হয়নি, সোজা মাহিপালপুর এরিয়াতে একটা হোটেল নিয়ে বিশ্রাম করেই কাটিয়ে দিলাম। পরের দিনটা রেখেছিলাম দিল্লীতে কেনাকাটা আর সি.আর.পার্ক কালীবাড়ি ঘোরার জন্যে। এরপর রবিবার ভোরবেলা ফ্লাইট ধরে আবার সেই কলকাতা। লেহ লাদাখ তো ঘোরা হয়ে গেল। আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ ধৈর্য্য ধরে আমার লেখা পড়ার জন্য। আবার আসবো পরের ঘোরার গল্প নিয়ে।
লেখক: সাব্বিব হোসাইন