1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৪ অপরাহ্ন

নীলগিরি

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০২৪

চিম্বুক পাহাড় ঘুরে পৌছালাম নীলগিরি রিসোর্টে মেঘদূত রুম ছাড়াও উপরে কয়েকটি রুম আমাদের বুকিং ছিল, ২০ জনের একটা টিম সেখানে গিয়েছিলাম। নিজেদের গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম, যদিও  ওখানকার  রাস্তা খুব আকাঁবাঁকা। পথের মোড় দেখা যায় না, দূর থেকে যখন রাস্তা দেখছিলাম, উপরে উঠার মনে হচ্ছিল ৫/৬ ফিট চওড়া, কিভাবে এই রাস্তা অতিক্রম করে উপরে উঠব? অগোছালো এলোমেলো রাস্তা পাহাড় ডিংগিয়ে যখন টপ লেবেলে পৌঁছে গেলাম, মনে হল জীবনের বিশাল একটা পরিক্ষায় পাশ করলাম, নামার কথা চিন্তা করতেই, গলা শুকিয়ে গেল, হাত পা কম্পন রিতীমত ।

ভয়ানক একটা ব্যপার। আমাদের সামনে দুটি গাড়িকে ফলো করছিল আমাদের গাড়ির ড্রাইভার, তাকে বলা হয়েছিল, তুমি সামনের গাড়ি ফলো করবা, যদিও সামনের গাড়ির যাত্রী আমাদের। ২০ জনের একটা গোয়েন্দা বাহিনী। যেন পাহাড় পর্বত আবিষ্কার করতে বের হয়েছি।

বিকাল হয়ে গেল, আকাশে সাদা কালো মেঘের ভেলা, পশ্চিমের আকাশে লাল আভা উঁকি দিচ্ছি, যাক ওয়েদার বেশ ভাল, আমরা পাহাড়ের উপর যে সব ফসল হয় তাই দিয়ে নাস্তা সারব বলে দিলা, এল ভুট্টা সেদ্ধ, সাথে লবন সস, আর পটেটো ফ্রাই, ডিম সেদ্ধ, আর সব্জি পাকোড়া।

বেশ আনন্দ উপভোগ করছি, ঘরের বাইরে তাকাতেই দেখি ঝিরিঝিরি তুষার উড়ে যাচ্ছে আকাশময়। বাচ্চারা ছুটে বের হয়ে গেল, আহা বৃবৃষ্টি হবে বুঝি, হা ঝমঝম করে বৃষ্টি। বড় বড় ফোঁটা যেন মুক্তদানা। আমরা বড়রা রুমের প্রকান্ড বারান্দায় বসে উপভোগ করছি।

আমি আর মোহিত এই ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, চমৎকার মন মাতানো ঝকঝকে পরিবেশ হয়ে গেল নিমিষেই।

রাতে ডাইনিং রুমে লম্বা টেবিল জুড়ে শুধু আমরাই বসে গেলাম, পাহাড়ি মোরগের মাংস, ডাল আর ভাত ভর্তা। রান্নার একটা বৈচিত্র লক্ষ্য করলাম, আমাদের মত না, খেতে যা টেষ্ট বলে বোঝাতে পারছি না। অবশ্য টেষ্ট চেঞ্জ হলে ভালই লাগে, তার পর ছিল খালি পেট, ঘাস ভাজাও অমৃত মনে হত।

যার যার রুমে ঢুকে গেলাম, রাতে ভাল ঘুম হল,পাহাড়ে উঠার ক্লান্তি, যদিও গাড়িতেই ছিলাম।

যাই হোক সকাল হতে হতে আমাদের ঘুম প্রায় আধ ভাংগা, এমন সময় এক বন্ধুর চিতকার, কি গো বন্ধুরা? তোমরা কি ঘুমাতে এসেছো?

বাইরে আসো, প্রকৃতির রূপ দেখ, আমরা হুড়মুড় করে যে যেমন ড্রেসে ছিলাম, বের হয়ে এলাম,একি দেখছি? আমরা আকাশে? নাকি আকাশ নেমে এসেছে? আমরা ঠিক মাঝ আকাশে মেঘের ভেলায় ভাসছি। সবাই দৌড়ে হেলিপ্যাডে নেমে গেলাম, গ্রুপ ছবি তোলা হল। তার পর যার যার মত ঘুরে ফিরে রুমে এলাম, ইচ্ছে হচ্ছিল কিছু মেঘ ব্যাগে ভরে রুমে নিয়ে আসি, গায়ে হাল্কা শিশিরের ছোঁয়া গায়ে মুখে মেখে নিয়ে ফিরলাম। দুপুরে পাহাড় থেকে নেমে এদিক ওদিক ঘুরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখলাম, বাজারে গেলাম, এখানে উপজাতিদের আধিপত্য, উপজাতি নারীরা সংসার পরিচালনা করে, টাকা আয় করে ক্ষেতে ফসল ফলায়, আর বাজারে বিক্রি করে  বাজার সদাই করে।আর ঘরের ছেলেরা রান্না করে বাচ্চা লালন পালন করে।

পোষাক পরে সবাই প্রায় একই রকম, লুংগি আর সার্ট।

রাতে পাহাড়ে চলে আগুন জ্বালিয়ে  আনন্দ নৃত্য। আমরা ঘুরে ফিরে  আবার পাহাড়ের উপর উঠে ডিনার করে  খোলা আকাশের নিচে হাঁটা হাটি করছিলাম। সিকিউরিটি  ম্যান এসে সতর্ক করে গেল, মাইজি এখানে রাতে বড় পোকা উড়ে বেড়ায় (উডন্ত সাপ) শুনে ভয়ে ঘরে ঢুকে গেলাম। বাংলাদেশের  এমন প্রকৃতি দার্জিলিং এর সাথে তুলনা করা যায়। আমি দার্জিলিং গিয়েছি। তবে অনেক বড় দেশ ভারত, তার কোথাও গরম কোথাও শীত, কোথাও বরফ পড়ে। আমাদের বাংলাদেশ ছোট হলেও দেখার মত সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে, শুধু থাকতে হবে দেখার মত চোখ আর প্রকৃতি প্রেমী মন। নিজের দেশে ঘুরে ফিরে দেখুন, দেশকে চিনুন। নীলগিরি তে। এই স্মৃতি আমার কাছে অমূল্য সম্পদ।

আমরা নিকুঞ্জবাসী একবার প্লান করলাম একসাথে ঘুরতে যাব।কোথায় যাওয়া যায়? আমাদের ইচ্ছা, পাহাড়, সাগর, ঝর্ণা।।

অনেক আগে শুনেছি বান্দরবান নীলগিরির কথা, আমি প্রস্তাব রাখলাম। সবার সম্মতিতে যাওয়া ফাইনাল হল।

ছয় পরিবার, ২০ জনের একটি টিম, আমরা ট্রেনে চলে গেলাম, খালি গাড়ি ড্রাইভার চালিয়ে চিটাগং স্টেশনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। আমরা ট্রেন থেকে নেমেই গাড়িতে উঠে বসলাম, আমাদের সাথে প্রচুর খাবার ছিল।

আমরা পথে দফায় দফায় খেয়েছি। গাড়ি প্রথমে গিয়ে থামলো বান্দরবান, মিলনছড়ি রিসোর্টে।

এখানে ছয়টি ঘর নেয়া হল, ১০৩টি সিঁড়ি ডিংগিয়ে আমরা উপরে উঠলাম, যার যার রুমে চলে গেলাম। শিতল পাটির নকশা করা ঘরের ওয়াল।চমৎকার পরিবেশ, ভোরের লাল আভা ছড়িয়ে পড়ল সারা আকাশে, একটু একটু করে ভোরের আলো ফুটছে, আর থেকে থেকে চেনা অচেনা পাখির ডাক কানে আসছে। একটা পাখি থেকে থেকে জোরে টিক টক আওয়াজ করছিল, পরে শুনলাম কাঠ ঠোকরা।

এখানে ঘুরে পাহাড়ি জীবন যাত্রা দেখে বেশ কৌতুহল লাগছিল, এত কষ্ট করে পাহাড়ে বসবাস করেও এদের মুখে হাসি, কোন পূজা পার্বনে এরা  নৃত্য পরিবেশন করবে না হতেই পারে না।

পানির ব্যবস্থা বড়ই করুন। পাহাড়ের উপর থাকে তারা, পানি নিতে ঢালে নামতে হয়। খাবার পানি সংগ্রহ করতে ওদের খুব বেগ পেতে হয়। আমরা যেখানে উঠেছি, ওখানে বড় অক্ষরে লিখা, পানি অপচয় করবেন না।

এখানে নাস্তা করতে গিয়ে খুব হাসাহাসি করেছি, আমরা জন প্রতি দুইটা ডিমের অর্ডার দিয়েছি, পরে বিল দিতে গিয়ে শুনি একটা ডিমের দাম ৫০ টাকা। হাহাহা। যাই হোক মুরগি বা খাবার যাই কিছু পাহাড়ে উঠাতে খুবই কষ্ট। আমরা নীল গিরির উদেশ্য রওনা দিলাম, বিকাল নাগাদ পৌছে গেলাম।

আকাশের অবস্থা চমৎকার ছিল, যখন ওখানে যাই। আমরা ঘুরে ফিরে বেশ বিমোহিত হচ্ছি, আমাদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা হল, ভুট্টা আর পটেটো ফ্রাই। এখানে জুম চাষ সব সব্জি হয় না,তবে শশা বাংগি, প্রচুর হয়, পেঁপে কলা, এসব দেখলাম ভাল ফলন।

আমরা নীলগিরিতে রাত্রি যাপন করব, পারমিশন ব্রিগেডিয়ার ইকবাল ভাই নিয়েছেন, উনার আসা যাওয়া হয় প্রতি মাসেই। ওখানে উনার কিছু প্রকল্প আছে।

আমাদের গ্রুপে দুজন সচিব, একজন বিজনেস ম্যান, একজন টিচার, একজন সাংবাদিক, একজন আর্মি পার্সন।

আমরা মেঘের ভেলায় ভাসছি। সারা আকাশে মেঘের ভেলা। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, হঠাৎ ছুটে এলো তুষার, তার পরই বৃষ্টি। আমরা বারান্দায় বসে নাস্তা করছি, আর উপভোগ করছি।

রাতের খাবার খেতে ডাইনিং থেকে কল করল, স্যার আমাদের সোলার সিস্টেম, আর জেনারেটর চালালে ঠিক পোষায় না, আপনারা খেয়ে নিন।

আমরা ২০ জন লাইন ধরে ডাইনি রুমে ঢুকে গেলাম। ওদের লম্বা টেবিল, এ পাশে ১০ জন ও পাশে ১০ জন টেবিল ফুল ফিল।

সবাই খেয়ে রুমে চলে গেল। আমি আর এক সচিব পত্নী বাইরে রুমের সামনে হাঁটছিলাম, হঠাৎ সিকিউরিটি গার্ড এসে জানালো, ম্যাডাম জি বেশি বাইরে থাকবেন না, বড় পোকা উড়াউড়ি করে (উড়ন্ত সাপ)। ওরে বাব্বা দুজন ছুটে রুমে ঢুকে গেলাম। এর পর ক্লান্ত শরীর জার্নিতে ঘুমাই নাই, তাই বিছানায় যাওয়া মাত্রই ঘুম।

ভোর হচ্ছে নীলগিরি পাহাড়ে, একটু একটু করে সারা আকাশ নিচে নেমে এলো, আমাদের এক বন্ধু নামাজ পড়তে উঠে বাইরে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেছে। আকাশের মাঝে আমরা, মানে কি? দৌড়ে রুম থেকে বের হয়েছে। এই তোমরা উঠে দেখ, কি কান্ড, আমরা কই এখন? আমরা যে যার মত ছিলাম, সেই ড্রেসেই বেড়িয়ে এলাম। ওয়াও সুবহানাল্লাহ, ইয়া আল্লাহ তোমার কি রহমত, এই অপরূপ রূপের শোভা দেখে নয়ন সার্থক করলাম। আমরা এখন অবস্থান করছি ঠিক আকাশের মাঝে। নিচে ঘর বাড়ি গাছ পালা সব মেঘের নিচে, আর আমরা মাঝে, মাথার উপর আকাশ। উহু এটা কি করে সম্ভব?

আমরা সবাই হেলিপ্যাডে নেমে গেলাম, ওখানে গিয়ে জুটিতে জুটিতে আনন্দ মুহুর্তের ছবি তুললাম, বাচ্চাদের নিয়েও তুললাম। মোহিত আমাকে নিয়ে ছবি তুলল। আমরা মেঘ নিয়ে তুললাম, উপরে উঠে ঘুরছি সবাই, হঠাৎ নজরে পড়ল শিউলি ফুলের গাছ, নিচে বিছিয়ে রেখেছে ফুল।

সব ছেলেরা মোহিত সহ তুলে আনলো ফুল।

এবার কোন একজন ছেলেদের মধ্যে থেকে প্রস্তাব পেস করল, এই ফুল কে কিভাবে তার প্রিয়তমার হাতে দেবে, এটা তার ব্যপারে, তবে যার দেয়া ভাল হবে,তার ছবি তুলে গিফট করা হবে।

প্রথমেই এলো আমার পালা, আমি উপরে দাঁড়িয়ে দুহাত বাড়িয়ে দিলাম, মোহিত হাটু একটু ভেংগে প্রপোজ স্টাইলে আমার হাতে দিল, একটি চমৎকার কবিতার লাইন বলেছিল, আহা আমি ভুলে গেছি, আমার বাকি সাথীদের মনে থাকলে কমেন্টে লিখে দিও। সেই স্মৃতি আমার গেঁথে আছে অন্তরে, বড়ই কষ্ট এই স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকা।

হয়ত আমার সন্তান, বন্ধু কার সাথে আবার যাওয়া হবে, আমার স্মৃতিতে হাত বুলিয়ে আসব। অনেক ঘুরে বেড়িয়েছি, কিন্তু এই স্মৃতি সত্যি মনে রবে চিরকাল।

শাহিদা ইসলাম

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com