1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ অপরাহ্ন

রাতারগুল; বাংলাদেশের আমাজান

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪

একবার ঢাকায় বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। কালো ধোঁয়ার যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল ছেড়ে কোথাও গিয়ে নির্মল বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে সবাই ছটফট করছিলাম। এমনিতেই আমরা ঘুরবাজ মানুষ, একটু ফুসরত পেলেই কোথাও গিয়ে ঢু মেরে আসি। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম ‘সিলেটের সুন্দরবন’ কিংবা ‘বাংলাদেশের আমাজান’ খ্যাত ‘রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট’ ঘুরতে যাবো। এটাই বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন। উইকিপিডিয়ায় পাওয়া তথ্যমতে সারা পৃথিবীতে স্বাদুপানির জলাবন আছে মাত্র ২২টি। ভারতীয় উপমহাদেশ আছে এর দুটি। একটা শ্রীলংকায়, আরেকটা আমাদের রাতারগুলে। বর্ষার সময়ে রাতারগুল ভ্রমণের জন্য দারুণ সময়। অনিন্দ্যসুন্দর বিশাল এ বনের সঙ্গে তুলনা চলে একমাত্র আমাজনের। রেইন ফরেস্ট নামে পরিচিত হলেও বিশ্বের স্বাদুপানির সবচাইতে বড় সোয়াম্প বন কিন্তু এটিই। যদিও আমরা আগেও সেখানে গিয়ে ছিলাম কিন্তু আবারো যেতে ইচ্ছে হল। সত্যি কথা বলতে গেলে, কেউ যদি রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে একবার যায়, আবারও যেতে ইচ্ছে হবেই। তাই যেই ভাবনা, সেই কাজ।

সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটিগাছ ‘রাতাগাছ’ নামে পরিচিত। সেই মুর্তা অথবা রাতাগাছের নামানুসারে এই বনের নাম হয়েছে রাতারগুল। আমাজনের মতোই এখানকার গাছগাছালির বেশির ভাগ অংশ বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে থাকে। ভারতের মেঘালয়ের জলধারা গোয়াইন নদীতে এসে পড়ে, আর সেখানকার এক সরু শাখা চেঙ্গী খাল হয়ে পানি পুরো রাতারগুল জলাবনকে প্লাবিত করে। বর্ষায় বড়ই অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। এ সময় কোনো গাছের কোমর পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলোর আবার শরীরের অর্ধেকই জলে তলিয়ে যায়। এ সময় কোথাও চোখে পড়ে জেলেরা মাছ ধরছে। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন যেন অন্ধকার লাগে পুরো বনটা।

মাঝে মধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দেয় পথ। তবে বর্ষায় এ বনে চলতে হবে খুব সাবধানে। কারণ রাতারগুল হচ্ছে সাপের আখড়া। বর্ষায় পানি বাড়ায় সাপেরা ঠাঁই নেয় গাছের ওপর। বনের ভেতর দাঁপিয়ে বেড়ায় মেছোবাঘ, কাঠবিড়ালি, বানর, ভোঁদড়, বনবিড়াল, বেজি, শিয়ালসহ নানা প্রজাতির বণ্যপ্রাণী। টেংরা, খলিশা, রিঠা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবাউস, রুইসহ আরো অনেক জাতের মাছ পাওয়া যায় এ বনে। পাখিদের মধ্যে আছে সাদা বক, কানি বক, মাছরাঙা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল ও বাজ। বনবিভাগের তথ্যমতে, এই বনের আয়তন তিন হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর। এর মধ্যে ৫০৪ একর বন ১৯৭৩ সালে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। বিশাল এ বনে জল-সহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের পানি সহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। রাতারগুল বনে সাপের মধ্যে নির্বিষ গুইসাপ, জলঢোড়া ছাড়াও রয়েছে গোখরাসহ বিষাক্ত অনেক প্রজাতি।

বর্ষা মৌসুমে রাতারগুল পানিতে টইটুম্বুর। হাওরের অথৈই পানি দেখে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ভয়ে নৌকাতে উঠলো। আমরা দুটি নৌকা নিয়ে রওনা হলাম। এখানে বাচ্চারাও নৌকা চালায়। পড়ালেখার পাশাপাশি অবসরে তারা নৌকা ভাড়া দিয়ে আয় করে। আমাদের নৌকা যখন হাওরের মাঝখানে, ঠিক তখন আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। বুঝতে বাকি নাই যে বৃষ্টি হবে। হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু। আমাদের মত অনেকেই রওনা হয়েছে রাতারগুলের উদ্দেশ্যে। কারও কারও কাছে ছাতা ছিলো বলে রক্ষা। তবে আমাদের কাছে কোন ছাতা ছিলো না। তাই স্থির করলাম বৃষ্টিতে ভিজেই ‘রাতারগুল’ দেখবো। ঝুম বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে হাওরের জলে নৌকার উপর গলা ছেড়ে গান ধরলেন আমাদেরই এক বন্ধু। আমাদের নৌকার মাঝি ছিলো ছোট ছোট দুটি ছেলে। ওরাও গান ধরলো। আমরা প্রবেশ করলাম রাতারগুলে। আহা, কি রূপ! চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না- এই যে আমাদের রূপসী বাংলাদেশ। সত্যি বাংলার রূপ পৃথিবীর সব রূপের চেয়ে সেরা। অনেকটা সময় আমরা নৌকায় করে বনের চারিপাশে ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এরপর উঠলাম ওয়াচ টাওয়ারে। সেখানে উঠে পুরো রাতারগুলের ভিউটা চমৎকারভাবে দেখা যায়। বৃষ্টি ভেজা রাতারগুল সত্যি চমৎকার। আমরা প্রায় দুই ঘন্টা ছিলাম।

যেভাবে যেতে হবে:
ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে সিলেট শহর। সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট যাওয়া যায়। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে, গুয়াইন নদীর দক্ষিণে এই বনের অবস্থান। সিলেট শহর থেকে এর দূরত প্রায় ২৬ কিলোমিটার। গাড়ি বা সিএনজি অটো রিক্সা যোগে সেখানে যাওয়া যায়। তারপর ডিঙি নৌকা নিয়ে রাতারগুল ঘুরে দেখতে হবে।

সতর্কতা: রাতারগুলে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তাই সঙ্গে করে হালকা খাবার নিতে হবে এবং ঘুরে আবার সিলেটে ফিরতে হবে। বৃষ্টি ও রোদ থেকে বাঁচতে চাইলে সঙ্গে ছাতা নেওয়া ভালো।

সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com