জুন, জুলাই অথবা আগস্টে সূর্য যেন তার অফুরন্ত তেজ দুবাইয়ের ওপর বর্ষণ করতে থাকে। ৫২ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে তাপমাত্রা। এসময় এখানে ভুলক্রমে যারা ঘুরতে আসেন, স্বপ্নের দুবাই তাদের জন্য দুঃস্বপ্নের ও নির্দয় হয়ে ওঠে।
তবে এখন এখানে গরমের পড়ন্ত যৌবন। হিংস্র তাপদাহ আপাতত শেষ হতে চলেছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম থেকে তাপমাত্রা একটু একটু কমতে শুরু করেছে। অক্টোবর থেকে মোটামুটি শীত শুরু হয়ে যাবে। সাইবেরিয়ার ‘জেন্টল বার্ডস’ দুবাই উপকূলে দৃষ্টি দিতে শুরু করেছে।
দুবাইয়ে দৃষ্টি পড়তে শুরু করছে বিলিয়নিয়ার-মিলিয়নিয়ার জেন্টলম্যানদেরও। মূলত অক্টোবর থেকেই এখানে পর্যটক মৌসুম। বিশ্বের অন্যতম ধনী এ নগরী আরও জমজমাট হয়ে উঠবে লক্ষ লক্ষ ধনী পর্যটকে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যখন দুবাই এয়ারপোর্টে নামলাম তখন শহরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি। জেট এয়ারওয়েজের ক্যাপ্টেনের ঘোষণা স্বস্তির ছিল বটে, তবে সেটা অস্বস্তিতে পরিণিত হতে দেরি হলো না।
এয়ারপোর্টের বাইরে আসতেই মাত্র ৩৫ ডিগ্রির তেজটা টের পেলাম! বাংলাদেশের ৩৫ ডিগ্রি আর এখানকার ৩৫ ডিগ্রি এক নয়, বুঝে নিলাম। চার দিক থেকে রুদ্ধশ্বাস গরম যেন আমাকে চেপে ধরছে। আমি কি আবার ফিরে যাব? দুবাই প্রবাসী আমার এক আত্মীয় তো হেসে খুন।
‘ভাইজান, এক দুই মাস আগে আসলে আপনি সত্যিই এয়ারপোর্ট থেকে নেমে আমার ব্যাক করতেন।’
দুবাই ও আবুধাবিতে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের দুই সপ্তাহ যে মোটেও সুখের হবে না, সেটা দেশে থাকতেই অনুমান করেছিলাম, এখানে আসার পর হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। প্রবাসী ভাইদের না হয় সয়ে গেছে, কিন্তু এই পরিবেশে মাশরাফিরা কীভাবে ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলবেন? ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দারুণ দল, কিন্তু দুবাইয়ের কঠিন কন্ডিশনে কতটা কী করতে পারবে, সেই প্রশ্ন বারবার উঠছে। এই কন্ডিশনে আফগানিস্তান দারুণ অভ্যস্ত। তাই প্রথম রাউন্ডেই একটা বড় চ্যালেঞ্জ মাশরাফিদের সামনে।
দুবাইয়ে গরমের সময় দিনের বেলায় তো দূরে থাক, সন্ধ্যায়ও রাস্তায় হাঁটা চলা সুসাধ্য ব্যাপার নয়। এই অবস্থার মধ্যেই বৃহস্পতিবার অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। আজও অনুশীলনে হাসফাস মাশরাফি-মুশফিকরা।
এখানকার গরম আতঙ্কের হলেও দুবাই সিটি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। এয়ারপোর্ট থেকে সন্ধ্যার পর গাড়ি যখন সাই সাই করে গন্তব্যের দিকে ছুটে চলছিল, তখন ফুটপাতে একটা লোককেও চোখে পড়ল না। ১৬- ২০, ২২-২৪ লেনের চোখ ধাঁধানো রাস্তা, কিছু পরপর আকর্ষণীয় ওভারব্রিজ, বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি, সর্বাধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা, দুই পাশে আকাশ ছোঁয়া বাহারি ইমারত যেন দুবাইয়ের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করছে।
মাথাপিছু আয়ে আমিরাত বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ সন্দেহ নেই। তবে বাৎসরিক মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে আমিরাতের চেয়ে কিছুটা বড় অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। জিডিপির মাপকাঠিতে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩১তম অর্থনীতির দেশ, দুবাইয়ের অবস্থান ৩১-এ। আশির দশকে যে দুবাই ছিল একদম বিবর্ণ শহর, সেই দুবাই এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা নগরী। কঠিন মরুর বুকে অসাধ্য সাধন করে দুবাইকে বিস্ময়করভাবে উপরে নিয়ে এসেছেন এখানকার শাসকরা।
এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, মেট্রো রেল এবং অন্য সব ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নে দুবাইয়ের চেয়ে ১০০ বছর পেছনে পড়ে আছে ঢাকা। অথচ আশির দশকে দুবাইয়ের চেয়ে ঢাকাই এগিয়ে ছিল সব দিক দিয়ে। সেই ঢাকা এখন বিশ্বের জঘন্যতম নগরী।
বাংলাদেশে যেভাবে ক্রিকেট এগিয়েছে, সেভাবে আসলে অন্যকিছু এগোয়নি। ফুটবল তো দিন দিন পেছনের দিকে যাচ্ছে। দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন ফুটবলকে অনুসরণ করছে। দুটোরই বিধ্বস্ত অবস্থা।