1. [email protected] : Cholo Jaai : Cholo Jaai
  2. [email protected] : admin2024 :
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:৪৪ অপরাহ্ন

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ফুট উঁচুতে দার্জিলিং

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪

রানা ভাই শিলিগুড়িতে আগে পৌঁছানোয় টিমের জন্য বেশ উপকারই হয়েছিল। তিনি বেশ কয়েকটি স্থানীয় ট্যুর কোম্পানির সঙ্গে আগেই কথা বলেছিলেন। কোম্পানিগুলো শিলিগুড়ি থেকে আমাদের সিকিমে জীপে করে নিয়ে যাবে। সেইসাথে হোটেলে রাত যাপন, সংরক্ষিত এলাকায় যাওয়ার অনুমতি ও রাত যাপন; সংরক্ষিত এলাকায় অবস্থানকালে চার বেলা খাবার এবং দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করাবে। আবার দার্জিলিংয়ে রাত যাপনের সাথে দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করাবে। অবশেষে শিলিগুড়িতে পৌঁছে দেবে।

একটি ট্যুর কোম্পানি মাথাপিছু ৪ হাজার ২০০ রুপিতে আমাদের ঘোরাবে। কোম্পানিটি আমাদের বিভিন্ন তথ্য তাদের ফরমে লিপিবদ্ধ করা শুরু করল। এই ফাঁকে আমরা খাবার গ্রহণের প্রস্তুতি নিলাম। আমরা সবাই ছিলাম প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত। কারণ এ সময়েও দুপুরের খাবার কেউ খাননি। খাবার ও ফরম পূরণ করা শেষ হতে বাজল সন্ধ্যা ৬টা।

ঢাকা থেকেই আমরা সিকিমকে মূল ভিত্তি করে ঘোরার পরিকল্পনা করি। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা প্রথম দিন যেতে চেয়েছিলাম সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে। কিন্তু তা আর হলো না। কারণ রাত ৮টার পরে সিকিম গেট ‘রংপো’ থেকে আর কাউকে অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই এক প্রকারে বাধ্য হয়েই সন্ধ্যা ৭টার দিকে যাত্রা শুরু করলাম দার্জিলিংয়ের দিকে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি আমাদের সিকিম ভ্রমণের জন্য ‘সাপেবর’ হয়েছিল।

আমাদের লাগেজগুলো গাড়ির উপরের ক্যারিয়ারে তোলা হলো। এরপর শিলিগুড়ির এসএনটি টার্মিনাল থেকে যাত্রা শুরু করল আমাদের গাড়ি। শহরের আলো-আঁধারি পরিবেশের মধ্যদিয়ে জীপে চড়ে যেতে বেশ ভালোই লাগছিল। এ যাত্রায় আমাদের জীপের চালক ছিলেন দু’জন। তাদের সঙ্গে পরিচয় পর্বটা সেরে নিলাম। একজনের নাম ছিল ‘এরিখ’ ও অন্যজন ‘সুব্রত’। তারা দু’জনই যথেষ্ট ভালো মানের ইংরেজি বলতে পারেন। আমি যেহেতু হিন্দি বুঝি না, তাই ভালো কাজে এসেছিল।

তাদের সঙ্গে স্থানীয় বিভিন্ন পরিবেশের সম্পর্কে পরিচিত হতে হতে চলছিল আমাদের গাড়িটি। কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর আমাদের জীপটি চলছিল সেনানিবাস এলাকার মধ্যদিয়ে। সেনা স্থাপনার চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা ও স্থাপত্য দেখতে বেশ ভালো লাগছিল। পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা রাস্তার উপর দিয়ে চলছে আমাদের জীপটি। রাতে যাত্রা হলেও গাড়ির হেডলাইটের আলোতে পাহাড়ের দৃশ্য ও বাঁকগুলো ভালোই লাগছিল। দিন হলে সম্ভবত আরও সুন্দর লাগত।

এরপর গাড়ি চালক সামান্য সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি দিলেন। কারণ সারাদিন তারা খাওয়া-দাওয়া করেননি। গাড়ি থেকে নামতেই বুঝতে পারলাম শীতের তীব্রতা। উপরে ক্যারিয়ারে থাকা লাগেজ থেকে আমার জ্যাকেটটি বের করে পরলাম। অন্যরাও তাদের গরম কাপড় বের করতে বাধ্য হলেন। গাড়ি চালকদের খাবার শেষে শুরু হলো পুনরায় যাত্রা। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৬৩ কিলোমিটার। সময় লাগে ঘণ্টা তিনেক। আঁকা-বাঁকা পিচ ঢালা পাহাড়ি পথ ধরে চলছে আমাদের গাড়িটি।

রাস্তাগুলো খুবই সুন্দর। কোথাও ভাঙাচোরা নেই। রাস্তার দু’ধার ঘেঁষেই প্রতিবিম্বকারী ট্রাফিক সিম্বল রয়েছে। সিম্বলগুলো গাড়ির আলোতে জ্বলজ্বল করছিল। পাহাড়ের মাঝে, নিচে ও উপরে অনেক বাড়ি দেখতে পাচ্ছিলাম। পাহাড়ে বাড়িগুলো দূর থেকে দেখলে মনে হবে স্টেডিয়ামের গ্যালারির আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। বাড়িগুলোর আলো পাহাড়কে আরও আলোকিত করে ফেলেছিল। সৌন্দর্যও বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণ।

রাত ১০টায় আমাদের জীপটি থামলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৭০০ ফুট উচ্চতার শহর দার্জিলিংয়ে। চালক জানালেন, আমরা হোটেলের সামনে পৌঁছে গেছি। হোটেলের স্টাফরা এসে আমাদের লাগেজগুলো বহন করে নিয়ে গেল হোটেলের লবিতে। হোটেলের নাম ছিল ‘হোটেল সুইট’। সেখানকার একজন স্টাফ ছিলেন দিনাজপুরের। কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক আতিথেয়তায় আমরা মুগ্ধ হলাম। অভ্যর্থনা কক্ষে কিছু নিয়ম-কানুন সম্পন্ন করলাম। স্টাফরাই আমাদের ব্যাগগুলো নিয়ে গেল তিন তলার কক্ষে।

কক্ষগুলো দেখে আমাদের পছন্দ হলো। এটি তিন তারকা মানের একটি হোটেল। গিজার ও ইন্টারনেট সুবিধাসহ আধুনিক সব সুযোগই ওখানে ছিল। কক্ষ পরিদর্শন শেষ করে নিচে গেলাম অভ্যর্থনা কক্ষে। পরের দিন আমরা কোথায় যাব সে বিষয়ে কথা হলো হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারাই আমাদের গাড়ি সংগ্রহ ও স্থানীয় পর্যটন স্থানগুলো দেখাবেন। এরপর গেলাম রাতের খাবার সংগ্রহে। দার্জিলিং শহরের কোনো দোকানই রাত সাড়ে ৮টার পরে আর খোলা খাকে না। তাই আমরা কোনো রেস্টুরেন্ট আর খোলা পাইনি। একটি মুদি দোকান সাটার নামাবে; ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা হাজির হলাম। সেখান থেকেই বিস্কুট-কেক কিনে তাই খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার ঘুম থেকে উঠে প্রাকৃতিক কাজ-কর্ম সম্পন্ন করলাম। পরে দলের সদস্যরা সবাই একত্র হয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গেলাম নাস্তা করতে। নাস্তা করতে গিয়েও বিড়ম্বনার শিকার হলাম। এত বেলায়ও উল্লেখ সংখ্যক রেস্টুরেন্ট খোলেনি। যা আবার দু’য়েকটি খুলেছে; সেগুলোতেও প্রাথমিক প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। শীত প্রধান এ অঞ্চলে খাবার ঠান্ডা হওয়ার আশঙ্কায় কোনো খাবারই অগ্রীম তৈরি করে রাখা হয় না। অর্ডার দিলে খাবার তৈরি করেন তারা। খাবার খেতে গেলে একঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে যাওয়ায় উত্তম।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো ক্যাটাগরি
© All rights reserved © 2024 CholoJaai
Developed By ThemesBazar.Com